প্রথম নিউজ, ডেস্ক: রমজান মাসে এমনিতেই ঢাকার রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পৃথিবীতে কোন মুসলিম দেশে যেন আর রোজা কেউ রাখে না! কেবল বাংলাদেশেই মচ্ছব শুরু হয়। গত বুধবার বনানীর অফিস থেকে বারিধারা ডিওএইচএস-এ যাচ্ছিলাম। কামাল আততুর্ক এভিনিউ থেকে গুলশান ক্লাবের মুখে বায়ে টার্ন নিতে হবে। আমার গাড়ি বায়ের লেনে ছিল। কিন্তু সামনে এক বেবি ট্যাক্সি রাস্তা বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে। তার পিছনে আবার বড় করে আল্লাহ লেখা।বিশাল মোমিন মুসলমান! সামনে যাওয়ার সিগন্যাল বন্ধ।
এরমাঝে পিছনে অনেক গাড়ি লাইন পড়ে গেল। মটর সাইকেলও অনেকগুলো আটকে গেল। প্রথমে হর্ন দিল আমার ড্রাইভার। না, বেবি সরবে না।আমি নিজে গাড়ি থেকে নামলাম। গিয়ে বেবি চালককে ভদ্রভাবেই বললাম-ভাই, আপনি একটু ডানে সরুন। পিছনে অনেক গাড়ি আটকে আছে, আমরা সবাই বায়ে যাব।
ওই মিয়া গাড়িতে গিয়া বইসা থাকেন। আপনের গাড়ি আটকাইছে তাতে আমার কি? তারপরও মেজাজ ঠান্ডা রাখলাম। বললাম-তেল তো পুড়ছেই,সবার সময় নষ্ট হচ্ছে। এতো কথা কন ক্যান? আমি সরমু না... আপনের বাপের রাস্তা? পৃথিবীর কোন দেশে এমন হয় না। কেউ এমন ঘাড় ত্যাড়ামি করে না। বাংলাদেশেই একমাত্র সবাই রোজা রাখে,বাংলাদেশেই একমাত্র সব কথিত খেটে খাওয়া মানুষের সব দোষ মাফ! আমরা আর খেটে খাই না!
যাহোক, মোড়ে একজন সার্জেট গলদঘর্ম অবস্থায় গাড়ি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছিলেন। বেচারা ঘেমে অস্থির। হেটে তাকে গিয়ে ঘটনা বললাম। ভদ্রলোক তৎক্ষনাত আমার সাথে এলেন। বেবি চালককে কড়া গলায় বললেন -গাড়ি সরাবি না মামলা দিবো?
সুর সুর করে বেবি চালক বেবি সরালো। ধন্যবাদ দিলাম সার্জেন্টকে। আমার গাড়ি সহ পিছনের সব গাড়ি বায়ে যাওয়ার সুযোগ হলো।
কতো জায়গায় এসব মোকাবিলা করবেন? অসভ্যতা, বেহায়াপনা ও ত্যাড়ামো ঝেকে বসেছে রিকশা চালক, বেবি চাালক,বাস চালক, গাড়ি চালকদের মধ্যে। কেন? ওই এক ত্বত্ত খেটে খাওয়া মানুষ! প্রকৌশলী,ডাক্তার, এমবিএ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী কেউ খেটে খায় না! তাই না?
যে আল্লাহ’য় বিশ্বাস করে, যে মুসলমান তার কাছে তো মানুষের অধিকার হরন হারাম। একটা লোক ত্যাড়ামো করে সকলের গাড়ির তেল নষ্ট করাচ্ছে, সময় নষ্ট করাচ্ছে সে তো মানুষের অধিকার হরন করছে। ওইসব লোক দেখানো আল্লাহ লিখে কি হবে?
আবু রূশদ: লেখক, সাংবাদিক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, সম্পাদক: ডিফেন্স জার্নাল (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)