বিড়াল ছানা দেয়ার কথা বলে শিশুকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ, প্রকাশ হওয়ার ভয়ে খুন

গত  ২১শে মার্চ বিকালে রুবেল আবিদাকে  বিড়াল ছানা দেবে বলে তার সঙ্গে আসতে বলে। এরপর  তাকে কৌশলে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

বিড়াল ছানা দেয়ার কথা বলে শিশুকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ, প্রকাশ হওয়ার ভয়ে খুন
বিড়াল ছানা দেয়ার কথা বলে শিশুকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ, প্রকাশ হওয়ার ভয়ে খুন

প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম: মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু আবিদা সুলতানার বিড়াল ছানার প্রতি প্রচণ্ড  ভালোবাসা ছিল। তাই কেউ বিড়াল ছানা দেবে বলে ডাকলেই ছুটে যেতো। আর এ সুযোগই কাজে লাগায়বাসার পাশের সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল।  গত  ২১শে মার্চ বিকালে রুবেল আবিদাকে  বিড়াল ছানা দেবে বলে তার সঙ্গে আসতে বলে। এরপর  তাকে কৌশলে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর ঘটনা জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় শিশুটিকে গলাটিপে হত্যা করে। পরে  রাতে মরদেহ বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় ফেলে দেয় ঘাতক রুবেল। এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নগরীর পাহাড়তলী ওয়্যারলেস মুরগির ফার্ম এলাকা থেকে আবিদার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন  (পিবিআই)। ভুক্তভোগী আবিদা সুলতানা  (১১)  পাহাড়তলীর কাজীর দীঘি এলাকার আবুল কাশেম ও বিবি ফাতেমার একমাত্র সন্তান। আর আসামি মোহাম্মদ রুবেল (৩৫) স্থানীয় মৃত আব্দুর নুরের পুত্র ও পেশায় সবজি বিক্রেতা।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, শিশু আবিদা সুলতানা বাবা  আবুল কাশেম ও মা বিবি ফাতেমার সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। কিছুদিন আগে মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এরমধ্যে তিন মাস পূর্বে মা বিবি ফাতেমা মেয়ে আবিদা সুলতানাকে নিয়ে ঢাকা থেকে মা খাদিজা বেগমের চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলীর বাসায় চলে  আসেন। এখানে এসে  বিবি ফাতেমা মেয়েকে  স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে নিজে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। জানা গেছে, কিছুদিন আগে রাস্তায় একটি বিড়াল ছানা দেখতে পেয়ে সেটা ধরতে যায় আবিদা। এ সময়  স্থানীয়  সবজি বিক্রেতা রুবেলের  ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সামান্য ব্যথা পায় আবিদা। সে সূত্রে আবিদার সঙ্গে পরিচয় হয় রুবেলের। সেদিন মেয়েটি  রুবেলের নিকট বিড়াল ছানার আবদার করেছিল। আর  রুবেলও তার বোনের বাসা থেকে বিড়াল এনে দিবে মর্মে অঙ্গীকার করে। পিবিআই জানায়, গত ২০শে মার্চ শিশু আবিদা সুলতানা তার এক বান্ধবীকে নিয়ে রুবেলের বাসায় বিড়াল ছানার খোঁজে যায়। কিন্তু রুবেলের দেখা পায়নি তারা।

পরবর্তীতে তরকারি বিক্রয়কালে রুবেলের সঙ্গে আবিদার দেখা হয়। সে সময় আবিদাকে  রুবেল বিকালে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিড়াল ছানা নেয়ার জন্য আসতে বলে। সেদিন আবিদা  সেখানে গিয়ে  রুবেলের দেখা না পেয়ে চলে আসে। পরবর্তীতে ২১শে মার্চ সকালে ভিকটিম রুবেলকে স্কুলের রাস্তার সামনে বিড়াল ছানার কথা জিজ্ঞেস করে। তখন রুবেল তাকে স্কুল শেষে ক্লাবের পাশে নির্দিষ্ট স্থানে আসতে বলে। সে মোতাবেক বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে আবিদা স্কুল থেকে বাসায় যায় এবং স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে পুনরায় হিজাব পরে বের হয়ে রুবেলের কথামতো বিড়াল আনতে যায়। রুবেল  সেদিন বোরকা পরিহিত আবিদাকে প্রথমে চিনতেই পারেনি। আবিদা নিজ থেকে  ডাকলে রুবেল তাকে তার (রুবেল) ফুফুর বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলার খালি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে দরজা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণ করে। পরে বাইরে জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে  গলাটিপে, বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে  রাত ৯টার দিকে লাশ একটি বস্তায় ভর্তি করে তরকারির গাড়িতে ত্রিপল দ্বারা আবৃত করে  পাহাড়তলী থানাধীন ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডস্থ মুরগি ফার্ম বাজার সংলগ্ন আলম তারা পুকুরের ডোবায় ফেলে আসে।

আর আবিদার  পরিহিত কাপড়, পায়জামা ও স্যান্ডেল কনকা সিএনজি স্টেশনের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ নালায় ফেলে দেয়। ঘটনার পর রুবেল প্রতিদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে  লাশের অবস্থা দেখে আসতো। এরমধ্যে একদিন গিয়ে লাশভর্তি বস্তাটি লোকজনের দৃষ্টির আড়াল করতে খড় দিয়ে ঢেকে দেয়। নিখোঁজের ৮ দিনের মাথায় মঙ্গলবার আদালতে মামলা হওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো টিম। ছায়া তদন্তের মাধ্যমে শিশু আবিদা নিখোঁজ রহস্য উন্মোচন করেন তারা। পরে সন্দেহভাজন  রুবেলকে আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার দেয়া তথ্যানুযায়ী  পাহাড়তলী থানাধীন আলমতারা পুকুরপাড়া মুরগি ফার্ম এলাকায় নিখোঁজ আবিদার মরদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:।