নয়াপল্টনে বিএনপি’র বিক্ষোভ: ‘ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে’

প্রথম নিউজ, অনলাইন: মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে কয়েকটি রাজনৈতিক অঙ্গন ও চক্র দেশের রাজনীতিকে একেবারে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা চেষ্টা করছে দেশে যাতে নির্বাচন না হয়, তারা চেষ্টা করছে মানুষ যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে। কিন্তু বিএনপি’র লক্ষ্য এখন একটাই, বাংলাদেশে ’২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং মিটফোর্ডে পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে’ মিছিল-পূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশের জন্য কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে কাকরাইলের নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মহানগর বিএনপি’র বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। মিছিলটি বিজয়নগর দিয়ে মৎস্য ভবন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন আমাদের নেতা তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়ন এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য কাজ করছি, যখন সংস্কারের জন্য প্রতিদিন আমাদের প্রতিনিধিদল সংস্কার কমিশনে যাচ্ছে এবং নতুন করে রাষ্ট্র কাঠামোকে সাজাবার জন্য যখন কাজ করছে, লন্ডন মিটিংয়ের পরে সব মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে যে, অতিদ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। ঠিক সেই সময় মিটফোর্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি রাজনৈতিক অঙ্গন, কয়েকটি চক্র বাংলাদেশের রাজনীতিকে একেবারে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, এই চক্রান্ত নতুন নয়, এই ষড়যন্ত্র নতুন নয়। যখনই দেশের মানুষ উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছে, মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছে- ঠিক সেই সময়ে এ সমস্ত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকারীরা দেশে অস্থিতিশীলতা করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টা করছে দেশে যাতে নির্বাচন না হয়, তারা চেষ্টা করছে মানুষ যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে, তারা চেষ্টা করছে বাংলাদেশ যাতে নতুন করে নতুন সূর্যের দিকে তাকিয়ে নতুন ভাবে জেগে উঠতে না পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে অকথ্য, অশ্রাব্য ভাষায় আমার নেতা তারেক রহমান সম্পর্কে তারা কথা বলেছে, স্লোগান দিয়েছে। তারা ভেবেছিল কথাগুলো বললে এবং স্লোগান দিলে বিএনপি বোধহয় ঘরের ভেতরে ঢুকে যাবে। বিএনপি হচ্ছে সেই দল, বারবার সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, সমস্ত আঘাত প্রতিহত করে উঠে দাঁড়িয়েছে ফিনিক্স পাখির মতো।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা অত্যন্ত ভয়াবহ। বাংলাদেশে আবার একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, অস্থিরতা সৃষ্টি করা, বিভাজনের সৃষ্টি করা। সেজন্য আজকে সবচেয়ে বড় ও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, ১৫ বছর আমরা যে কষ্ট ও আত্মত্যাগ করেছি- সেই আত্মত্যাগ সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন তৈরি হচ্ছি, আবার ফ্যাসিস্ট ফিরিয়ে আনার জন্য নয়। আমরা খুব পরিষ্কার করে ঘোষণা করতে চাই, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যেভাবে ফ্যাসিস্টকে বিতাড়িত করতে পেরেছি-ঠিক একইভাবে কোনোদিন যাতে এখানে ফ্যাসিজম চালু হতে না পারে- তার ব্যবস্থা অবশ্যই আমরা করবো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা যেন কারও পাতা ফাঁদে পা না দেই। তারা চেষ্টা করছে আমাদেরকে উত্তেজিত করে তাদের পাতা ফাঁদে পা দেয়ার জন্য। যাতে আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই। আমরা যেন উত্তেজিত না হই। ধৈর্য ধরে সমস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন। সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমাদের কোনো আপস নাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র চাই। আমাদের লক্ষ্য এখন একটাই, বাংলাদেশে ’২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, মিটফোর্ডের সামনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যে ছেলেটাকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ছেলেটা বিএনপি করতো। তার পরিবার-পরিজন বিএনপি’র সমর্থক। এই মর্মান্তিক ঘটনা সহ্য করার মতো নয়। এই ঘটনা থেকে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে কারা? এটা আপনাদের ভাবতে হবে। এই ঘটনাটি যখন ঘটে, ক্যামেরাম্যান ছবি তুলেছে, কোনো নড়াচড়া নাই, কোনো কাঁপুনি নাই, খেয়াল করে দেখবেন, ভিডিওটি মনে হয় একেবারে তৈরি করা ভিডিও। অর্থাৎ এই ঘটনাটি ঘটবে, ভিডিও করবে- দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে, জাতির সামনে বিএনপিকে মাথানত করতে বাধ্য করবে। এমন চিন্তাধারা করেছিল। এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপি’র কোনো সম্পর্ক নাই।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় যিনি ধরা পড়েছে, মাহিন (মাহমুদুল হাসান মাহিন) নামে একটা ছেলে, এই ছেলের সঙ্গে এনসিপি’র নেতৃবৃন্দের ছবি আছে। আমি দেখাতে পারি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এই ছেলের সঙ্গে ওদের ছবি আছে। বিএনপি’র ওপর দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। বিএনপিকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আর একটি দল, লম্বা লম্বা কথা বলা ছাড়া, সুকৌশল ও কারচুপি ছাড়া, সুকৌশলে চাঁদা, তারা বলেন- হাদিয়া, এই হাদিয়া নেয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নাই। টাকা নিয়েছেন, বসুন্ধরার কাছ থেকে, টাকা নিয়েছেন সিটি গ্রুপের কাছ থেকে, আর কোন কোন জায়গা থেকে টাকা নেয়া হয় আমাদের জানা আছে, সমস্ত হিসাব হবে। গায়ের জোরে কথা বলেন, নিজের পায়ে জোর নাই। এরশাদের সময় এরশাদের কাঁধে ভর করেন, আওয়ামী লীগের সময় আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করেন, বিএনপি’র সময় বিএনপির কাঁধে ভর করেন। লম্বা লম্বা কথা বলেন। সুতরাং বিএনপি এখন একমাত্র মাথাব্যথা, বিএনপিকে যদি শেষ করে দেয়া যায়, তাহলে উনারা রাজত্ব করতে পারবেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনুর সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্নাসহ কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মব সৃষ্টির অপচেষ্টার প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ: মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলকে কেন্দ্র করে বেলা দেড়টা থেকে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। মাথায় লাল কাপড় বেঁধে এবং হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় তারা ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘তারেক রহমানের ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘জিয়ার সৈনিক এক হও লড়াই করো’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘স্বৈরাচার আর রাজাকার, মিলেমিশে একাকার’, ‘রাজাকারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ধর্ম বেচে গীবত গায়, পীর সাহেব চরমোনাই’, ‘দিল্লি গেছে স্বৈরাচার, পিন্ডি যাবে রাজাকার’সহ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তুলেন।
মিছিলে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।