১৫ বছর বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ছিল না: আমীর খসরু

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গত ১৫ বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো সুরক্ষা ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়েছে। এখান থেকে বের হয়ে আমাদের ভালোর চক্র বা ভার্চ্যুয়াস সাইকেল তৈরি করতে হবে। শেয়ারবাজারে অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে পারে না। আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতারও ঘাটতি রয়েছে। এটি শুধু শেয়ারবাজারে নয়; পুরো আর্থিক খাতেই এমন চিত্র রয়েছে। শুধু তাই নয় আমাদের অর্থনীতিতে গণতন্ত্রণায়ন করতে হবে। অর্থনৈতিক গণতন্ত্রণায়ন ছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়। আমরা এখন সে পথেই হাটছি। বিএনপির শাসন আমলে শেয়ারবাজার কিংবা আর্থিক খাতে কোনো রকম স্ক্যামের ঘটনা ঘটেনি। অথচ বিগত সরকার দেশের আর্থিক খাতকে ধংসের দ্বাপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
সোমবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন (ডিবিএ) আয়োজিত পুঁজিবাজারবিষয়ক এক কর্মশালায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মানিক মুনতাসির।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থায় রাজনৈতিক নিয়োগ দেয়া হবে না। অতীতেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ কারণে তখন ব্যাংক ধসে যায়নি এবং পুঁজিবাজারে লুটপাট হয়নি।
ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত সরকারি অনেক ভূমিকা বাণিজ্য সংগঠনের কাছে দেয়া হবে বলে জানান আমীর খসরু। তিনি বলেন, আগে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল আমদানির প্রাপ্যতার অনুমোদন (ইউডি) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে নেয়া লাগত। এতে আমদানিকারকদের দীর্ঘ সময় লাগত, নানা জটিলতায় পড়তে হতো। কিন্তু আমি যখন বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছিলাম, তখন এই অনুমোদনের বিষয়টি তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কাছে দিয়ে দিই। এতে প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে যায়।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতিকেও গণতান্ত্রিক করতে হবে। তিনি বলেন, আপনি শুধু রাজনীতিকে গণতন্ত্রায়ণ করবেন, আর অর্থনীতিকে গণতন্ত্রায়ণ করবেন না, তাহলে সেটি ঠিকভাবে কাজ করবে না। ফলে এটা আমাদের (বিএনপির) অন্যতম একটি লক্ষ্য যে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অবশ্যই গণতন্ত্রায়ণ করতে হবে।
তিনি বলেন, অর্থনীতির গণতন্ত্রায়ণ না হলে তাতে মানুষের অংশগ্রহণ ও আস্থা বাড়বে না। এর ফলে অর্থনীতিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় না। বরং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে যে যার জায়গা থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
দেশের শেয়ারবাজার খুবই অগুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে শেয়ারবাজার ঠিক করতে হলে একধরনের সার্বিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসইসি, ডিএসই, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে একত্রে সংস্কার কাজ করতে হবে; তাদের ভেতর সমন্বয় থাকতে হবে। খারাপ যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সার্বিকভাবে এসব উদ্যোগ নেয়ার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
আমীর খসরু আরও বলেন, 'ভবিষ্যতে বিএনপি সরকারে গেলে শেয়ারবাজারকে আমরা ধারণ করব। কারণ, যারা দেশ পরিচালনা করবে, তারা ধারণ করা ছাড়া পুঁজিবাজারের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়।'
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, রেগুলেশনকে আরও বাজারমুখী করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাজার কখনোই রিলেভ্যান্ট ভূমিকা পালন করতে পারেন নাই। দেশের অর্থনৈতিক কোনা সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজার থাকে না। তবে এই অবস্থা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের বাজারে নতুন কোন ভালো শেয়ার নেই। গত ৯ মাসে মাত্র ১টা কোম্পানি বাজারে এসেছে। এছাড়া বিগত সরকারের কয়েক বছরে যে পরিমাণ কোম্পানি বাজারে এসেছে তা যথেষ্ট নয়। এরপরেও বাজারের উন্নয়ন হয়েছিল। যেটুকু হয়েছিল তা নানা ভাবে মেনিপুলেশনের মাধ্যমে নষ্ট করা হয়েছে।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বাজারকে নিয়ে দায়িত্বশীল তথ্য প্রদান করেন৷বাজার এখন ভালোর দিকে। তাই বাজারকে প্রায়োরিটিতে রেখে ভালো শেয়ার আনতে হবে এবং বাজারে যেন কারসাজি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।