ব্রাসেলস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

আজকালের মধ্যে ব্রাসেলস সফর বিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উত্থাপিত ফাইলে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা।

ব্রাসেলস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ব্রাসেলস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে ঢাকার ওপর পশ্চিমা দুনিয়ার প্রচণ্ড চাপের মধ্যে সরকার প্রধান ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেডকোয়ার্টার ব্রাসেলস সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দু’দিন আগে মৌখিকভাবে ওই সফরের গ্রিন সিগন্যাল দেন প্রধানমন্ত্রী। সেটি পাওয়ার পর সেগুনবাগিচার তরফে ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে। আজকালের মধ্যে ব্রাসেলস সফর বিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উত্থাপিত ফাইলে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৪শে অক্টোবর বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বেলজিয়ামে পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছে ঢাকা ও ইইউ’র একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।

ব্রাসেলসে ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন আয়োজিত গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনীতে অংশ নেয়া ছাড়াও কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লিয়েনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। 

ব্রাসেলসের বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, উপরোল্লিখিত বৈঠকের বাইরেও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টসহ ইইউ সদর দপ্তরের প্রভাব রয়েছে নীতিনির্ধারণী এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চেষ্টা চলছে।  গত মাসে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নজিরবিহীন ভোটে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। যাকে ‘শক্ত ভাষার প্রস্তাব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বৃটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি। ওই প্রস্তাবের মানেও খুঁজেছে তারা।

বিবিসি বাংলার রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত প্রস্তাবে অধিকার সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানের কারাদণ্ডের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, উচ্চ আদালত এরইমধ্যে জেল-জরিমানা স্থগিত করে তাদের মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে অধিকার’র মামলা শীর্ষক ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাবে দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির চিত্র ফুটে উঠেছে। সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছাড়াও বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রসঙ্গ এসেছে। সেই প্রেক্ষাপটে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা ইবিএ অব্যাহত রাখা যৌক্তিক কিনা সেই প্রশ্নও উত্থাপন করা হয়েছে। ইবিএ সুবিধার আওতায় ইউরোপে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এর বড় সুবিধাভোগী। বিবিসি বলছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইবিএ নিয়ে এমন সময় প্রশ্ন তুললো যখন ইউরোপে বাজার সুবিধা সমপ্রসারণের বিষয়ে জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা। 

কণ্ঠভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পাস হওয়া ওই প্রস্তাব নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতিবাচক মন্তব্যের জেরে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের তরফে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের উদ্বেগগুলো দ্রুত আমলে নিয়ে যথাসম্ভব তা নিরসনে সরকারকে এখনই উদ্যোগী হতে অনুরোধ করেছেন বোদ্ধারা। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিষয়টি বাংলাদেশ সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারলে বা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে ইউরোপীয় কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার দিকে অগ্রসর হলে সেটি বাংলাদেশের জন্য আশঙ্কার কারণ হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ওই সুবিধা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। তারই ধারাবাহিকতায় ইউরোপের বাজারে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে ঢাকা। অবশ্য জিএসপি প্লাসের জন্য বাড়তি শর্তপূরণ করতে হবে  বাংলাদেশকে। 

এ জন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ছাড়াও গণতন্ত্র বা সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে পাস হওয়া সর্বশেষ প্রস্তাব ছাড়াও বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সামপ্রতিক বৈঠকগুলোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেই পরিবেশ এখনই নিশ্চিত করতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে অব্যাহতভাবে তাগিদ দিয়ে চলেছে ইইউ। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই বিধায় তারা কোনো পর্যবেক্ষক না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইইউ’র ঘোষিত অবস্থান পরিবর্তনে সরকার প্রধানের ব্রাসেলস সফরটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।