বাজেটের পর আরেক দফা বাড়ল নিত্যপণ্যের দাম

কোরবানি ঈদের আগে চড়া গরম মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, তেল, চিনির দামও। বাজেটে ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ না থাকায় হতাশ ক্রেতারা।

বাজেটের পর আরেক দফা বাড়ল নিত্যপণ্যের দাম

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাজেটে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কর ও শুল্ক কমানো হলেও চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব নেই। দাম তো কমেইনি, বরং আরেক দফা বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে আলু ও ডিমের দাম। কোরবানি ঈদের আগে চড়া গরম মসলা, পেঁয়াজ, রসুন, তেল, চিনির দামও। বাজেটে ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ না থাকায় হতাশ ক্রেতারা। প্রতিবছর বাজেট ঘোষণা হলেই সব শ্রেণির মানুষের নজর থাকে কোন পণ্যের দাম কমল, আর কোনটির বাড়ল-সেটির ওপর। 

বাজেটের পরদিন শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় চট্টগ্রামের ক্রেতাদের তাই আলাদা আগ্রহ পণ্যের দাম নিয়ে। যদিও সুখবর নেই দামে। বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম আগের মতোই ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। কিছু কিছু মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক পণ্য আগের কেনা রয়েছে, তাই বাজেটের প্রভাব বুঝতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তদারকির অভাবে ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করছেন না। কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে বাধ্য হতেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ২৭ পণ্য।

বাজেটে আলু, তেল, চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২ থেকে ১ শতাংশ করা হলেও দাম কমার লক্ষণ নেই। আলু গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা হলেও শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে অস্থির ভোগ্যপণ্য বা মসলার বাজারও। এর মধ্যে দাম বেড়েছে জিরা, দারচিনি ও লবঙ্গের। ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি জিরার দাম ৪০-৬০ টাকা বেড়ে ৬৮০ টাকা, ১২০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ ১৩শ’ এবং ১৫ টাকা কমে দারচনি ৩৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে গোলমরিচের দাম। খাতুনগঞ্জে ৮২০ থেকে ৮৩০ টাকা কেজি দরে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে। এখনো বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে হলুদ, এলাচ, গোলমরিচ এবং আদা। হলুদ কেজিপ্রতি ২৬০, এলাচ ৪ হাজার ১০০, আদা ২২০, রসুনের কেজি ২১০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ভোক্তারা অনেক ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি। সরকার দাম বাড়ালে মিনিটের মধ্যে কার্যকর হয়। আর দাম কমালে দিনের পর দিন তা কার্যকর হয় না। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। কার্যকর হয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করারও যেন কেউ নেই। সাধারণ মানুষ অসহায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে।

খাতুনগঞ্জে মসলার ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, বাজেটে শুল্ক বা ট্যাক্স কমালেও তাৎক্ষণিকভাবে দাম কমার সুযোগ নেই। এখন যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে তা অনেক আগের কেনা পণ্য। শুল্ক কমানোর প্রভাব পড়তে এক মাসের বেশি সময় লাগবে। চকবাজারে বাজার করতে আসা কলেজ শিক্ষক জমির উদ্দিন বলেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। যে কারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। এমনিতেই আমাদের জন্য দুঃসহ, তার মধ্যে বাজেটের পর দাম আরও বাড়ার কারণে আমাদের জন্য মনে হয় আরও কঠিন হয়ে যাবে।

বাজারদর : চট্টগ্রামে কিছু সবজির দাম কমেছে। বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা ছিল ৮০ টাকা। গাজর ৯০ টাকা, যা ছিল ১০০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই ৬০ টাকা। ঢ্যাঁড়শের দাম বেড়েছে। ৪০ টাকার ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা ছিল ৫০ টাকা। এছাড়াও বেগুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০, সোনালি ৩৩০ এবং দেশি মুরগি ৬০০ টাকা কেজি দরে শুক্রবার বিক্রি হয়েছে। গরুর মাংস ৮০০ এবং খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১১শ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। রুই ২৬০ থেকে ৩৬০, কাতলা ৩২০ থেকে ৩৬০, মৃগেল ২০০-২৫০, পাঙাশ ১৮০-২২০, তেলাপিয়া ১৮০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।