বিচ্ছিন্নতা আত্মহত্যার প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে

বিচ্ছিন্নতা আত্মহত্যার প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’- কবির এই কথাতেই ফুটে উঠেছে যে মানুষ বাঁচতে চায়, এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। শত দুঃখ কষ্ট, অভাব-অনটন ও রোগ-শোকের মধ্যে থেকেও মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। তাই চিকিৎসকরা বলেন যে রোগী বেঁচে থাকতে চান, তাকে বাঁচানো ডাক্তারের পক্ষে সহজ হয়। কিন্তু কোনো মানুষ যখন নিজেই মৃত্যুকে ডেকে আনেন, তখন বুঝতে হবে তার কোথাও না কোথাও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই সমস্যা সে নিজে হ্যান্ডেল করতে পারছে না।

আর যখনই কেউ সমস্যা সমাধানে একা হয়ে পড়েন, তখন তার একমাত্র পথ হয় মৃত্যুকে বেছে নেয়া, যা মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ও আত্মহত্যা বিশেষজ্ঞ ডুরখেইম তাঁর বিখ্যাত কাজ "Le Suicide" এ আত্মহত্যার সামাজিক কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সামাজিক একাকীত্ব, সম্পর্কের অবনতির কারণে মানুষ আত্মহত্যা করতে পারেন, বিশেষ করে যখন তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন বা নিঃস্ব অনুভব করেন।

হয়তো এই একই কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটি ২৬ জানুয়ারি ভোররাতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মেয়েটি হয়তো সম্পর্কের অবনতির কারণে তার প্রেমিককে দেখাতে চেয়েছিল কতটা দুঃখ পেয়ে সে চলে যাচ্ছে। চলে যাওয়ার এই পর্বে বাবা-মা, পরিবার, দায়-দায়িত্ব বা অন্য কোনো আকর্ষণ তাকে বেঁধে রাখতে পারেনি। নিজেকে নিঃস্ব মনে করেই মেয়েটি চলে গেল।

কিছু গবেষক আত্মহত্যাকে একটি "কোপিং মেকানিজম" হিসেবে মনে করেন। তারা বলেন মানুষ জীবনের চাপ, কষ্ট বা সংকট মোকাবেলা করতে না পারলে আত্মহত্যাকে তাদের একমাত্র উপায় হিসেবে বেছে নেয়। যখন মানুষের কাছে উপযুক্ত কোপিং স্ট্রাটেজি বা সাহায্য গ্রহণের সুযোগ থাকে না, তখন তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেই পারে।

    কোনো মেয়ে যদি যৌন হয়রানির শিকার হয়, তাহলে সে মনে করে পরিবারের জন্য এটা বড় ধরনের লজ্জা। ভয়ংকর সামাজিক পরিণতির ভয় থেকে কিশোরী মেয়েটি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউনিসেফ জানিয়েছে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা রয়েছে এমন প্রায় ৭০ জন কিশোর-কিশোরীকে শিশু হেল্পলাইনে মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মেয়ে।

মানুষ সবসময় যে খুব বড় কোন কারণে মৃত্যুকে বেছে নেয়, তা নয়। মানুষ খুব তুচ্ছ কারণেও আত্মহত্যা করতে পারে। যেমন পছন্দের কাপড় বা খেলনা কিনতে না পেরে, মা-বাবার বকুনি খেয়ে, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে, বুলিং এর শিকার হয়ে, বন্ধু বা ভাইবোনের সাথে ঝগড়া করে, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, বেড়াতে যেতে না পেরে। এধরনে র ছোটখাট কারণেও মানুষ মনে করতে পারেন, তার বেঁচে থাকার আর কোন মানেই হয় না। কে তাকে বোঝাবে যে তার এইভাবে চলে যাওয়ারই কোনো মানে হয় না। তাকে বোঝানোর জন্য যে সময় বা পরিবেশ লাগে, তা তৈরি হওয়ার আগেই মানুষটি চলে যায়।

এইভাবে চলে যাওয়ার ঘটনা দেশে বাড়ছে। ২০২৪ সালে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৩১০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ১৮৯ জনই নারী শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৪৬.০১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের। আত্মহত্যা করা সিংহভাগ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা নিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বয়স ভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৯ বছরে বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের শুরু থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারীদের ৬৫.০৭ শতাংশ কিশোর বয়সী। এরপরই রয়েছেন ২০ থেকে ২৫ বয়সীরা, প্রায় ২৪ শতাংশ। শিশুদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা গেছে। ১২ বছর বয়সী শিশুর আত্মহত্যার তথ্য উঠে এসেছে, যা প্রায় ৭.০৪ শতাংশ। আত্মহত্যার প্রবণতা নারীদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি। আত্মহত্যা করা ৩১০ জনের মধ্যে নারী প্রায় ৬১ শতাংশ। পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৩৮.০৪ শতাংশ

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৪৬.০১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। এরপরই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়া প্রাথমিক স্তরে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝেও আত্মহননের বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। এ স্তরের ৭.০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

আত্মহত্যাকারী নারীর সংখ্যা যে বেশি হবে, তা বোঝা যায়। কারণ ঘরে-বাইরে নারীকে পুরুষের চাইতে বেশি নিপীড়ন ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার এত বেশি কেন? প্রাথমিকে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা কেন আত্মহত্যা করছে?
শিশুদের মনে নানাধরনের চাপ, ভয়, অপ্রাপ্তি, বিষণ্ণতা কাজ করে। বিশেষ করে পরীক্ষায় খারাপ করার ভয়, বাবা-মায়ের কাছে বকা খাওয়ার ভয়, শিক্ষকের কাছে শাস্তি পাওয়ার আশঙ্কা, পছন্দের জিনিস না পাওয়ার কষ্ট, কোন অনুষ্ঠানে যেতে না পারার দুঃখ, পরিবারে অবহেলার শিকার হলে, প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলে, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে, অপমানিত হলে এবং সর্বোপরি রেজাল্ট ভালো করার চাপে শিশুরা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া ঘরে-বাইরে যৌন হয়রানি ও বুলিং এর শিকার হয়েও তারা আত্মহননের মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা এরা কারো সাথে সমস্যার কথা শেয়ার করতে পারে না।

সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের বেশি চাওয়া কিশোর কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে বলে অনেকে মনে করছেন। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইদানীং পড়ালেখা ও রেজাল্ট ভালো করা নিয়ে আগের চাইতে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পড়াশোনা এখন প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারলেই কিশোর কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।

এছাড়া বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের নানাধরনের মানসিক টানাপড়েন, হতাশা ও অবসাদের মতো জটিল অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। এইসময় অভিভাবক তাদের পাশে থাকেন না, মানসিক বা শারীরিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন না। একশ্রেণির অভিভাবক এগুলোকে গুরুত্বহীন মনে করেন। আরেক শ্রেণির অভিভাবক সন্তানকে শুধু পাঠ্যবইয়ের চাপে রাখতে চান।

কোনো মেয়ে যদি যৌন হয়রানির শিকার হয়, তাহলে সে মনে করে পরিবারের জন্য এটা বড় ধরনের লজ্জা। ভয়ংকর সামাজিক পরিণতির ভয় থেকে কিশোরী মেয়েটি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউনিসেফ জানিয়েছে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা রয়েছে এমন প্রায় ৭০ জন কিশোর-কিশোরীকে শিশু হেল্পলাইনে মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মেয়ে। বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল, এমন অনেক কিশোর-কিশোরীর কাছ থেকে এর আগেও ইউনিসেফ ফোনকল পেয়েছে।
এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আত্মহত্যা করতে চাওয়ার কারণ সাইবার অপরাধ, অনলাইনে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকতা এবং পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘আত্মহত্যার এই প্রবণতা মূলত শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকাল থেকে, যা গভীর উদ্বেগের কারণ।’

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশেও আত্মহত্যা একটি ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা হয়ে উঠেছে। সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ এবং ঘৃণার চোখে দেখা হলেও প্রতি বছরই আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে যে মানুষগুলি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা না করার প্রবণতা রয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, যখন মানুষ নিজেদের সমস্যা প্রকাশ করতে ভয় পায়, তখন তাদের মনোজগতে চাপ আরও বেড়ে যায়।

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যার মূল কারণ হিসাবে অবসাদ, উদ্বেগ, বাইপোলার ডিজঅর্ডার এবং সিজোফ্রেনিয়া প্রধান ভূমিকা পালন করে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, যারা মানসিক অসুস্থতার শিকার, তারা মাঝে মাঝে নিজেদের মূল্যহীন অনুভব করতে পারেন এবং সেই কারণে আত্মহত্যার চিন্তা তাদের কাছে সংগত মনে হয়। কানাডার "Canadian Association for Suicide Prevention" এর মতে প্রায় শতকরা ৯০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা কোনো না কোনো মানসিক অসুস্থতার সাথে সম্পর্কিত।

জেনেটিক উপাদানগুলি আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়াতে পারে, অর্থাৎ, যদি কোনও পরিবারে আত্মহত্যার ইতিহাস থাকে, তবে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আমাদের মতো সামাজিক অবস্থায় সমাজের চাপ, দারিদ্র্য, সম্পর্কের টানাপড়েন, বাবা-মায়ের ব্রেক আপ বা অমিল, মাদক গ্রহণ, শৈশবের ট্রমার কারণে আত্মহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

এমন না যে মানুষ শুধু নিজেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অনেকসময় পাশের মানুষটিকেও আত্মহননে মোটিভেট করেন অথবা বাধ্য করেন। প্রায়ই নিউজ দেখা যায় শিশুসহ মায়ের আত্মহত্যা, স্ত্রী-পুত্রসহ গৃহস্বামীকে সুইসাইড করতে দেখা গেছে, এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকা একসাথে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন। চরম হতাশা থেকে বা ব্যর্থতা থেকে মানুষ এই পথ বেছে নেন। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার রেললাইনে এক পরিবারের ৯ জন ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

আত্মহত্যা একটি গভীর ও জটিল বিষয়, যা বিভিন্ন কারণে ঘটতে পারে। এটি শুধু একক কোনো পরিস্থিতির ফলে নাও ঘটতে পারে। বরং মানসিক, সামাজিক, শারীরিক এবং পরিবেশগত নানা উপাদানের সমন্বয়ে এটি ঘটতে পারে। সাধারণত আত্মহত্যার কারণগুলো অত্যন্ত ব্যক্তিগত হতে পারে, তবে কিছু মানসিক কারণ আছে যেগুলি অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়।

যদি আমরা কোনোভাবে ধারণা করতে পারি যে আমাদের পরিচিত কেউ আত্মহত্যার চিন্তা করছেন, তবে দ্রুত তাকে সাহায্য করতে হবে, পাশে দাঁড়াতে হবে, কথা বলতে হবে। যেমন কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে তার মনখারাপ কিনা, সে বিষণ্ণ কিনা বা আত্মহত্যা করার কথা ভাবছে কিনা? যদি সে এধরনের কথা ভেবে থাকে, তাহলে তাকে বুঝাতে হবে এটা করা ভুল হবে, বরং জানতে হবে তার কী কী সাহায্য লাগবে? কেন সে এমন একটা পথ বেছে নিতে চাইছে?

আমরা মনে করি যারা আত্মহত্যার কথা গল্পের ছলে বলে, তারা খুব ভেবেচিন্তে এসব বলে না। হয়তো এমনই বলে, মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বলে অথবা সাহায্যের জন্য বলে। কিন্তু আত্মহত্যা করার আগে মানুষ প্রায়ই কাউকে বলেছে যে, তার বেঁচে থাকার কোনো দরকার নেই। তাই যখন কেউ যদি আত্মহত্যা বা স্বেচ্ছামৃত্যুর করার কথা বলে তাহলে সবসময় সেটাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

আমাদের সহায়তা তাদের জীবন বাঁচাতে পারে। তবে বেশিরভাগ মানুষ যারা আত্মহত্যা করার কথা ভাবেন, তারা মরে যেতে চান না - তারা যে পরিস্থিতির মধ্যে আছেন, সেটাই কেবল বোঝাতে চান। আবার কেউ যদি আত্মহত্যা করার কথা সিরিয়াসলি ভাবেন, সেক্ষেত্রেও তার পাশে দাঁড়াতে হবে। কারণ এই অনুভূতি সাময়িক হয়। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গেলে কেউ আর স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেবেন না। অর্থাৎ সঠিক সময়ে, সঠিক ধরনের সমর্থন পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সাথে থাকার চেষ্টা করতে হবে। কেউ যদি বুঝতে পারে যে কেউ তাদের সম্পর্কে চিন্তা করছে বা তাকে নিয়ে ভাবছে, তাহলেও একটি জীবন বাঁচতে পারে।

২০২২ সালে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের মাথায় নিজেই পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছিলেন মহসিন খান নামের এক ব্যবসায়ী। আত্মহত্যার আগে ফেইসবুক লাইভে এসে বলেছিলেন যে ব্যবসায় কীভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। ওই বছরেই প্রেসক্লাবের সামনের খোলা চত্বরে এক ব্যক্তি হঠাৎ করেই নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে তার মৃত্যু হয়। এধরনের আত্মহত্যা সমাজে খুব নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। আত্মহত্যায় প্ররোচনা বা উস্কানি দেয়ার বিষয়টি যথাযথভাবে প্রমাণিত হলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
গবেষকরা সাধারণত আত্মহত্যার প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাড়াতাড়ি পাশে দাঁড়ানোর উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে আত্মহত্যার ঝুঁকি কমাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো মনের অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। মিডিয়ার আত্মহত্যার রিপোর্টিংও আত্মহত্যার হার বাড়াতে পারে। বিশেষভাবে "copycat suicides" বা অনুকরণ আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে, যখন মিডিয়া বিস্তারিতভাবে আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ করে। অতএব, আত্মহত্যার রিপোর্টিংয়ের সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমর্থন এবং সচেতনতা তৈরি করা। আত্মহত্যার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং উপযুক্ত সাহায্য বা থেরাপি আত্মহত্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে হলে পাশে থাকতে হবে বন্ধুর, সন্তানের, বাবা-মায়ের, প্রতিবেশীর, সহকর্মীর। আমাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা আত্মহত্যার প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে, এটাই ধ্রুব সত্য।

২৮ জানুয়ারি, ২০২৫

লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।