বেকায়দায় বাদামতলীর আড়তদাররা
প্রথম নিউজ, অনলাইন : দেশি-বিদেশি ফলের জন্য বিখ্যাত পুরান ঢাকার বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট ফলের আড়ত। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেশের সবচেয়ে বড় ফলের পাইকারি বাজার এই বাদামতলী। বিশ্বের ৪৬টি দেশ থেকে আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুর, নাশপাতি, ডালিম-এই ছয়টি ফল আমদানি হয় এখানকার আমদানিকারকদের মাধ্যমে। যেসব দেশ থেকে আমদানি হয় এর মধ্যে অন্যতম হলো ভারত, চীন, ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভুটান, মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা। আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতি, মাল্টা, চেরি, আনার, বরই, আম ছাড়াও বেবি ম্যান্ডারিন, পাম, নেকটারিন, কিউইর, সুইট মিলান, এবাকাডোর মতো কিছু অপরিচিত ফলও আমদানি করা হয়। রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের ফলের চাহিদার প্রায় সবটুকুই জোগান দিয়ে থাকেন এখানকার আড়তদাররা।
ফলের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি হয় ভারত থেকে স্থলপথে; যা সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বুড়িমারী ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এনে পুরান ঢাকার বাদামতলীতে নিলাম ডেকে বিক্রি করা হয়। প্রায় ৮৮ বছরের পুরোনো এই ফল বাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকার। এখান থেকেই পণ্য কিনে সরবরাহ করা হয় সারাদেশে। তাইতো ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম থাকে সবসময় এ বাজার। কিন্তু গত এক সপ্তাহের চিত্র ভিন্ন। ফল বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকে।
বেশ কয়েক দিন ধরে রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবারও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঝরেছে বৃষ্টি। সকালে উঁকি দিয়েছিল সূর্য। তবে একটু পরই কালোমেঘে ঢেকে যায় আকাশ। গর্জন করে নেমে আসে বৃষ্টি। দুপুর ২টার পর রাজধানীর বাদামতলীতে গিয়ে দেখা যায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে, ফল ব্যাবসায়ীরা বসে বসে ঘুমাচ্ছেন। কোনো কোনো ব্যবসায়ী বুড়িগঙ্গার পাশে পচে যাওয়া ফল ফেলে দিচ্ছেন। নিুবিত্তদের কেউ কেউ সেই ফল কুড়িয়ে নিচ্ছেন।
ইমরান আহমেদ অপু নামের এক ফল বিক্রেতার সাথে আলাপকালে তিনি জানান, কিছুক্ষণ আগেই ১০ ক্যারেট কমলা পানিতে ফেলে দিয়েছি। যার বাজার মূল্য ৬০ হাজার টাকার বেশি। শুধু আমি নই, আমার মতো ২২০০ জন ফল ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ও পাইকার আছেন এখানে। বৃষ্টির কারণে দেশের এবং শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরা ক্রেতারা আসছেন না। ফল কাঁচামাল এবং পচনশীল- সময়মতো বিক্রি না হওয়ায় প্রত্যেকের আড়ৎ থেকেই পচে যাচ্ছে। মো. সোহেল নামে এক খুচরা বিক্রেতা যুগান্তরকে বলেন, গত মাসখানেক যাবতই ফলের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। শুধু বৃষ্টির জন্যই নয়, এখানকার বড় বড় আমদানিকারকদের রাজনীতির জন্যও অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে বাজারে। শহরের খুচরা বিক্রেতাদের সাথে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ফল বিক্রি করে ফেলে, যার জন্য ক্রেতারা বেশি বাজারে আসে না। তাছাড়া আমদানিকারকরা বিভিন্ন সময় পণ্য মজুত করে দাম বাড়ানোর কারণেও বেচাকেনা কম এখন। মহানগর ফল আমদানি ও রপ্তানিকারক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিদিন শত শত ট্রাক আর ট্রলারে করে আপেল, কমলা, আনারস, কলা, বেল, তরমুজসহ বাহারি সব ফল নিয়ে বাদামতলীতে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু দূরপাল্লার ট্রাকগুলো এখন আর আসতে চায় না। মহাসড়কে প্রায় সময়ই তারা ডাকাতির কবলে পড়ে। ফল ওঠা-নামা করানোর সময় ভিজে পচে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ক্রেতা আসে না আগের মতো। সব মিলিয়ে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছেন।