ঢাবিতে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন
বিজয় একাত্তর হলে রোববার রাত ১১টা থেকে সকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে- এমন অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে রাতভর দফায় দফায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে রোববার রাত ১১টা থেকে সকাল পর্যন্ত কয়েক দফায় নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম শাহ রিয়াদ মিয়া সাগর। তিনি ২০১৯-২০ সেশনের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে মারধরে জড়িত সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতাকর্মী। এর মধ্যে রয়েছেন হল শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাজেদুর রহমান, গণযোগাযোগ উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, সাহিত্য সম্পাদক ইউসুফ তুহিন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক বায়েজিদ বোস্তামী, মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পিয়ার হাসান সাকিবসহ আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত এগারোটার দিকে শিবির সন্দেহে শাহ রিয়াদকে পদ্মা-৪০০৮ নম্বর রুমে নিয়ে মারধর করতে থাকে হল ছাত্রলীগের কর্মীরা। মারধরের একপর্যায়ে তাকে জেরা করতে থাকে। তার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরপর সকালে তাকে হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। কিন্তু সকালে আবারো বাঁশ ও কাঠ দিয়ে মারধর করে তারা।
তবে অভিযুক্তরা মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সকাল ৮টার দিকে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল বাছির হলে এসে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি শাহ রিয়াদকে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেন। ভুক্তভোগী শাহ রিয়াদ বলেন, এক জুনিয়রের সঙ্গে আমার ফোনে একটু কথা হয়েছিল। এটার সূত্র ধরে তারা (অভিযুক্ত) আমাকে ৪০০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সারারাত আমার ফোন চেক করে। আমার কান, হাতসহ দেহের বিভিন্ন জায়গায় কাঠ, হাত দিয়ে আঘাত করে। বাবা-মা তুলে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা আসলে তখন নির্যাতন বন্ধ করে। কিন্তু সাংবাদিক চলে যাবার পর আবার নির্যাতন শুরু হয়। আমাকে একটা মিনিটও ঘুমাতে দেয়নি।
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ওই শিক্ষার্থী শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে আমরা জেনেছি, প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তবে ছাত্রলীগ মারধরের রাজনীতি করে না। মারধরের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট ও কলা অনুষদের ডিন প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র শিবিরের সঙ্গে ওর সম্পৃক্ততা আছে বলে জেনেছি কিন্তু তার সম্পৃক্ততা আমরা শারীরিকভাবে দেখি নাই। যান্ত্রিকতার মাধ্যমে দেখেছি যেটা ও নিজেও স্বীকার করেছে। সে এখন অনুতপ্ত। যেহেতু সে স্বীকার করেছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এসব বিষয় প্রক্টর দেখবেন।
এদিকে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তাকে কয়েকঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ (গতকাল) দুপুরের পর ছেড়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সেই শিক্ষার্থী শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা মৌখিকভাবে স্বীকার করেছে। তবে সে আমাদের কাছে সংশোধনের সুযোগ প্রার্থনা করেছে। সবদিক বিবেচনা করে তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সে শিক্ষার্থীকে মারধরের এখতিয়ার ছাত্রলীগ রাখে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, কোনো সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। সবাই আমাদের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থী। সে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটা হল প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: