ঢাকায় বিএনপি’র শোডাউন, বেড়েছে নেতাদের উপস্থিতি

পদধারী নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বিএনপি’র কর্মসূচি। গতকাল রাজধানীতে দুই ভাগে গণমিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

ঢাকায় বিএনপি’র শোডাউন, বেড়েছে নেতাদের উপস্থিতি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঢাকায় গণমিছিল করেছে বিএনপি। এতে ঢল নেমেছে নেতাকর্মীদের। গণমিছিলে দলটির শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি    বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পদধারী নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বিএনপি’র কর্মসূচি। গতকাল রাজধানীতে দুই ভাগে গণমিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এরআগে গত ২৯শে জুলাই একদফার দাবিতে ঢাকার ৫টি প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি। কয়েকদিন বিরতির পর শুক্রবার বড় শোডাউনের মধ্যদিয়ে আবারো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি’র সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে সমমনা দলগুলোও। 

পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ার ও  কমলাপুর স্টেডিয়ামের সমানে জড়ো হয় হাজার হাজার নেতাকর্মী। এতে দুই স্পটেই সড়কের একপাশ বন্ধ হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও যাত্রীরা। সড়কে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে শীর্ষ নেতারা সরকার ও নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিকাল সাড়ে ৩টায় সুবাস্তু টাওয়ার থেকে গণমিছিল নিয়ে আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ করেন। অন্যদিকে একই সময়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে কমলাপুর স্টেডিয়ামের সমানে থেকে গণমিছিলটি মালিবাগ রেলগেট গিয়ে শেষ হয়। 

গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে দুটি স্থানেই সরকারকে হুঁশিয়ারি দেন শীর্ষ নেতারা। বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। উত্তরের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন করছে। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। বিএনপি’র আন্দোলনে অন্যান্য দল ও দেশের সাধারণ মানুষ নেমে এসেছে। শেখ হাসিনার অধীনে ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। 
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরা (নির্বাচন কমিশন) নতুন দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। যে দল দুটি কেউ চেনে না। কারণ কি জানেন? এই আওয়ামী লীগ সরকার, এই দল দিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলতে চায়। কিন্তু এবার সেই খেলা খেলতে দেয়া হবে না। এবার লড়াই জীবনপণ লড়াই। এবারের আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটানো হবে। মানে মানে সরে না গেলে রাজপথেই সরকারের পতন হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের যে দাবি তা গণভবন এবং বঙ্গভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে  ২০১৪-২০১৮ এর মতো আবারো ক্ষমতায় যেতে চাইছে আওয়ামী লীগ। এবার জনগণ তা হতে দেবে না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকার পদত্যাগ না করলে ‘রাজপথে গণবিপ্লবে’র হুঁশিয়ারি দিয়ে নেতাকর্মীদের বিএনপি মহাসচিব বলেন,  আসুন সামনের দিকে এগিয়ে যাই। আমাদের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও হাসিনার পদত্যাগ না দেখা পর্যন্ত আমরা থামবো না, আমরা এগিয়ে যাবো।

সংসদ, প্রশাসন, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন,  সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে আমাদের বিচার বিভাগকে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদেরকে কারাগারে পাঠায়, আটকে দেয়, সাজা দেয়। তাতে আন্দোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। যাবে না।  যত কারাগারে ঢুকাও, যতই জেলে দাও, যতই নির্যাতন করো, যতই টিয়ারগ্যাস মারো, যতই লাঠিচার্জ করো বাংলাদেশের এই মানুষকে এবার তাদের গণতন্ত্রের অধিকার আদায় না করে তারা ঘরে ফিরে যাবে না। তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। তাই পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে, নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

বিকালে আবুল হোটেলের সামনে গণমিছিলের সমাপনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি আসবে। 
বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। 

ঢাকা দক্ষিণের কর্মসূচিতে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নির্বাচন প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেন। বলেন, আপনারা যে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন, সেই নির্বাচনকে অবশ্যই প্রতিহত করবো। আর এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমাদের একটা মাত্র দাবি, এই সরকারের পদত্যাগ। তাই যতক্ষণ পদত্যাগ না করবে ততক্ষণ কর্মসূচি চলতে থাকবে। তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আমরা এই ইসি মানি না। এই ইসিকে নিশিরাতের ভোটের সরকার নির্বাচন করেছে। সুতরাং আমি নির্বাচন কমিশনকে বলবো, সরকারের আদেশে যে কাজ করছেন তা অন্যায় করছেন। কমলাপুরে বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের সামনে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন। এদিকে ঢাকা দক্ষিণের কর্মসূচিতে বড় শোডাউন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্চাসেবক দল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল, যুবদল ও শ্রমিক দল। জহির উদ্দিন তুহিনের নেতৃত্বে প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মী গণমিছিলে অংশ নেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এ দিন ব্যানার, ফেস্টুন, মিছিল আর স্লোগানে প্রতিবাদ জানান তারা। 

ঢাকা উত্তরে ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। বাড্ডা থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ কিলোমিটারের এই পথে নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে সরকারবিরোধী স্ল্লোগান দেয়। গণমিছিলে মির্জা ফখরুল, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, শাহাজাদা মিয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শ্যামা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলাম বকুল, তাবিথ আউয়াল, তাইফুল ইসলাম টিপু, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। দক্ষিণের গণমিছিলে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আবদুল মঈন খানসহ দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, এডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, আফরোজা আব্বাস, ইশরাক হোসেন, নিপুন রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু,  স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।