ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়ায় নষ্ট হচ্ছে কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান
লোনা পানি ঢোকানোর কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল ডাকাতিয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে মারা যাচ্ছে কয়েক হাজার বিঘার ধান।
প্রথম নিউজ, ডুমুরিয়া, খুলনা: পরিকল্পিতভাবে স্লুইজ গেইট খুলে মাছ ধরা এবং চিংড়ি চাষের জন্য লোনা পানি ঢোকানোর কারণে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল ডাকাতিয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে মারা যাচ্ছে কয়েক হাজার বিঘার ধান। ধান উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে ক্ষেত ছেড়ে দিয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলের অনেক কৃষক। সারা বছরের খাদ্যের যোগান পাওয়া যাবে যে বোরো ধান থেকে, সেই ধানের আশার গুড়ে বাাঁলি পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ শ শ কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে, একে তো ধান হবেনা উপরন্তু পাতো ফেলা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যে ব্যায় হয়েছে তাও পানিতে গেল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্থানীয় এমপি পাউবোকে দোষারোপ করলেও পাউবোর কর্মকর্তারা দায়ী করলেন স্থানীয় জনগণকে।
উল্লেখ্য, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনের অন্যতম ভান্ডার হচ্ছে বিল ডাকাতিয়া। দীর্ঘদিনের ফসল অজন্মা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ৯০ এর দশকে জনগণ ওয়াপদার ভেড়ি বাঁধ কেটে জোয়ার ভাটা চালু করে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উঁচু হলে বিলে কৃষকেরা পকেট ঘের তৈরি করে মাছ ও ধান চাষ করে আসছিল। উত্তর ডুমুরিয়ার কৃষ্ণনগর গ্রামের ধান চাষী বিদ্যুৎ ম-ল, তারক চন্দ্র ম-ল, শতদল ঘরামি, অলোক সরকার, বিদ্যুৎ ঘরামি, সুনিল ম-ল ও রবিন সরকারসহ অনেকেই বলেন শৈলমারী স্লুইজ গেইট ভায়া শলুয়া, আমভিটা ও থুকড়া গেইট দিয়ে আশ্বিন-কার্তিক মাসে লবণ পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি মাছ চাষ ও জাল দিয়ে মাছ ধরে একটি মহল। এরফলে বিল ডাকাতিয়ায় ব্যাপকভাবে লবণ পানি প্রবেশ করে।
একদিকে শলুয়া গেটের কপাট ভেঙে গেছে অন্যদিকে আমভিটা এবং থুকড়া গেইটে কপাট না থাকার কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। বিগত দিনে উঠানো পানির লবণাক্ততা তীব্র হওয়ায় বর্তমানে ধানের গাছ ব্যাপকভাবে মারা যাচ্ছে। ধান উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে ক্ষোভে দুঃখে ক্ষেত ছেড়ে দিয়েছে অনেক কৃষক। ভুক্তভোগী কৃষক প্রদীপ জোয়ার্দার ও রাজু সরকারের মত অসংখ্য কৃষক লবণাক্ততায় ধান গাছ মারা যাওয়ায় ধান চাষে খ্যান্ত দিয়ে ক্ষেত পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। শুক্রবার সকালে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে উঠে আসে এসব করুণ চিত্র। ২নং রঘুনাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনোজীৎ বালা বলেন, বিষয়টি এলাকার সবাই জানে আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবনা। কারা পানি উঠায় পানি উন্নয়নবোর্ড তা ভালোভাবে জানে। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান বিষয়টি অবগত হয়ে বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমি বিষয়টি নিয়ে বার বার বলেছি কিন্তু তারা এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। চলতি বছরে কৃষকরা যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা পূরণ হবার নয়, এগুলো স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেখা উচিত। এমপির একার পক্ষে কতটা দেখা সম্ভব, আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি নিয়ে বলছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এসবের জন্য স্থানীয় জনগণ দায়ী, তারা কেন লবন পানি উঠায় তা আমাদের বোধগম্য নয়। ইতোমধ্যে শলুয়া গেইটে আমরা কপাট লাগিয়ে দিয়েছি, ডব্লিউ এম এ’র সদস্যরাও ঠিকমত কাজ করেনা।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: