কুয়াকাটায় উচ্ছেদ অভিযান, গৃহহীন সাড়ে চার হাজার মানুষ

রোববার ( ১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সংকর চন্দ্র বৈদ্য ও জেলা প্রশাসকের একটি টিম।

কুয়াকাটায় উচ্ছেদ অভিযান, গৃহহীন সাড়ে চার হাজার মানুষ

প্রথম নিউজ,পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের বাহিরে শতবছর ধরে বসবাসকারী ছয় শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।

রোববার ( ১৩ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সংকর চন্দ্র বৈদ্য ও জেলা প্রশাসকের একটি টিম। তাদের এ অভিযানে গৃহহীন হন প্রায় চার হাজার মানুষ।

কুয়াকাটা পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এ সাধারণ মানুষগুলো না খেয়ে দিন পার করে। পরে বিকেল থেকেই পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার হোসেনপাড়া মসজিদ মাঠে এই সব মানুষের খাবারের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করছে। একটি টিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। অনেকে ওই মাঠেই খাবারের জন্য সিরিয়াল দিচ্ছে।

এই উচ্ছেদ সবচেয়ে বড় বিপদে রয়েছে নারী ও শিশুরা। ভূমিহীন এসব মানুষের আকুতি কেন পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এই অভিযান। হোসেনপাড়ার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানান, আমাদের কোনো পূর্ব নোটিশ বা মাইকিং করে জানায়নি। হঠাৎ শনিবার প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। রোববার আমাদের ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে। খাবার নেই, ঘর নেই, সবাইকে নিয়ে কোথায় যাবো।

নাসির উদ্দিন বলেন, ঘড় ভেঙে দেওয়ার কারণে বাহিরে রাত কাটাতে হবে। বাচ্চাগুলো ঘুমের জন্য কান্নাকাটি করে তাই তাবু করে দিয়ে পাশে বসে আছি। আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। নাছিমা নামের এক গৃহিণী বলেন, আমার স্বামী গত ৪০ বছর ধরে মামলা চালিয়েছে। ৬০-৭০ বছর বসবাস করছি হঠাৎ আজকে ঘর ভেঙে দিল। কই যাব ছেলে-মেয়ে নিয়ে, আমরা সরকারের কাছে একটি পুনর্বাসন চাই।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, সরকার আজকে যাদের উচ্ছেদ করেছে তারা বেশীরভাগই ভূমিহীন। এরা জেলে, দিনমজুর। এই মূহুর্তে কারো ঘর নেই, রান্না করার জায়গা নেই। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাবে। আমি মানবতার জায়গা থেকে বিকেল থেকেই রান্নার ব্যবস্থা করেছি এলাকার সব মানুষ যেন অন্তত খেয়ে রাতটা কাটাতে পারে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি যাতে এই মানুষগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।

শনিবার (১২ নভেম্বর) সকালে এই উচ্ছেদ অভিযানে আসলে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে বন্ধ রাখলেও রোববার উচ্ছেদ করা হয় তাদের।

এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের বাহিরে সৈকত লাগোয়া দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সরকারি জমি। সরকারি জমি দীর্ঘ বছর ধরে ভুয়া মালিকানা দাবিতে ভোগদখল করে আসছিল কতিপয় অবৈধ বসবাসকারীরা। আদালত কর্তৃক মালিকানা দাবি নামা নিষ্পত্তি হয়েছে। মালিকানা নিয়ে জটিলতা নিরসন হয়েছে। এই জমি এখন সরকারের। তাই সরকারি জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা এরই মধ্যে ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করেছি। প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom