কুষ্টিয়ায় তিন নাম্বার স্ত্রী হওয়ার দাবিতে প্রেমিক মামুনের বাড়িতে এক সন্তানের জননী
প্রথম নিউজ, হাসানুল কবির নাজির কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের ভুতমোড় এলাকার জনৈক মামুনের বাড়িতে বিয়ের দাবীতে অবস্থান নিয়েছেন এক সন্তানের জননী। গতকাল দুপুরে ঐ বাড়িতে অবস্থান নেন ভুক্তভোগী নারী। সেসময় ঘটনাটি মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাস্থলে এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢল নামে। মামুনের বাড়িতে প্রতিবেদক দলটি প্রবেশের পর ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে মামুনের মা ও স্ত্রী তার উপর চড়াও হন। সাংবাদিক ও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এসময় ভুক্তভোগী ঐ নারী জানান, গত ১ বছর আগে মুঠোফোনে মামুনের সাথে তার মুঠোফোনে পরিচয় হয়। এর আগে ঐ নারী কর্মস্থলে যাওয়ার সময় মামুন তাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করতো। তারপরও তিনি কোন কর্ণপাত করতেন না। তার কাছে মামুন মোবাইল নম্বর চাইলেও ঐ নারী তাকে নম্বর দেননি। এরপর তার এক বান্ধবীর কাছ থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন মামুন। তারপর মামুন মোবাইলে ফোন দিয়ে ঐ নারীর সাথে তোষামদ করে কথা শুরু করেন। একপর্যায়ে মামুন তাকে বলেন- "তিনি অবিবাহিত। তার বাবা মায়ের সাথে নিজ বাড়িতেই থাকেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেওয়ার কেউ নেই, তিনি নিঃসঙ্গ। তার একজন ভালো সঙ্গী দরকার।" এভাবেই মামুন নিজেকে অসহায় মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করার কারণে একপর্যায়ে ঐ নারীর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তার। এই ভালোবাসার সম্পর্ক আস্তে আস্তে গভীর সম্পর্কে রূপ নেয়। সম্পর্কের বয়স বেশ কয়েকমাস অতিবাহিত হওয়ার পর ঐ নারী জানতে পারেন ইতিপূর্বে মামুনের আরো দুই বার বিয়ে হয়েছিল। ১ম স্ত্রী মামুনকে ছেড়ে চলে গেছেন। এখন ২য় স্ত্রীর সাথে থাকেন তিনি। ঐ নারী যেসময় এই ঘটনাটি জানতে পারেন সেসময় তার আর পিছনে ফিরে আসার সুযোগ ছিল না। এর একাধিকবার বিভিন্ন স্থানে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন তারা। বাধ্য হয়েই তাকে তার অধিকার আদায়ের জন্য মামুনের বাড়িতে অবস্থান নিতে হয়েছে।
ঐ নারী আরো বলেন, গত তিন মাস পূর্বে তাকে জোর করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন মামুন। প্রথমে ১ দিন তার বাড়িতে রাখলেও পরবর্তীতে ১৫ দিন একটানা তার বাড়িতে রাখেন মামুন। সেসময় মামুন প্রতিবেশীদের কাছে তাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেন এবং ঐ নারীকেও স্ত্রী বলে পরিচয় দিতে বলেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে মামুন ঐ নারীকে নিজ বাড়ী, বোনের বাড়ী, মামার বাড়ী, বন্ধুর বাড়ী নিয়ে গিয়ে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। ভুক্তভোগী ঐ নারী বার বার মামুনকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেওয়ায় কারণে গত দুই মাস যাবত মামুন তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা ভুক্তভোগী নারীর দেওয়া সকল বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভুক্তভোগী ঐ নারীকে মামুনের বৌ হিসেবেই চিনতেন তারা। মামুন বিভিন্ন সময় ঐ নারীকে তার বাড়িতে এনে রাখতো এবং স্ত্রী বলে পরিচয় দিতো। আজ এই নারী মামুনের বাড়ীতে অবস্থান নেওয়ার পর জানতে পারলাম তাদের বিয়ে হয়নি। ইতিপূর্বে মামুন আরো ২টা বিয়ে করেছে । ১ম স্ত্রী মামুনকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে। এখন ২য় স্ত্রী তার বাড়ীতে থাকে। মাঝে মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে এই স্ত্রীও বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আবার ফিরেও আসেন। এইতো
গত কয়েকমাস আগে মামুনের ২য় স্ত্রী বাড়ি থেকে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে চলে যান। চলে যাওয়ার পর ঐ ভুক্তভোগী নারীকে বাড়িতে এনে স্ত্রী পরিচয়ে রাখেন মামুন। আমরা মনে করেছিলাম ২য় স্ত্রী চলে যাওয়ায় মামুন আবার বিয়ে করে এনেছেন। আগে যদি জানা যেত, মামুন বিয়ে না করে এভাবে একটা মেয়েকে বাড়িতে এনে রেখেছে তাহলে সামাজিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করতাম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সলিম মেম্বার বলেন, তিনিও এই নারীকে মামুনের স্ত্রী হিসেবেই জানতেন। পরে জানতে পারেন তারা বিবাহিত না। মামুন ও তার বাবা বাড়িতে আসলে তাদের সাথে এব্যাপারে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপাতত ভুক্তভোগী নারীকে মামুনের বাড়িতে রাখা হবে।
এদিকে ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর ঐ নারী প্রতিবেদককে ফোন করে জানিয়েছেন, তাকে মামুনের মা মারধোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। উপায় না পেয়ে তিনি বাসায় ফিরে এসেছেন। আগামীকাল মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হয়ে মামুন ও তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তি প্রার্থনা করবেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, ঐ নারী থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।