চলতি বছর বেড়েছে সহিংসতা, ধর্ষণ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা

এইচআরএসএসের ষান্মাসিক পর্যবেক্ষণ

চলতি বছর বেড়েছে সহিংসতা, ধর্ষণ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার মাঝে স্বাধীনতার প্রকৃত আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হলেও তার প্রতিফলন ঘটেনি। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা হতাশাজনক। এ সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারী নিপীড়ণ ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নের প্রত্যাশা থাকলেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্বের ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি এতে নতুন কিছু বিষয়ও যুক্ত হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক ষান্মাসিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারী নিপীড়ণ ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও নির্যাতনে মৃত্যু, শ্রমিকদের উপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মাজারে হামলা ও ভাঙচুর, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান, আন্দোলনরত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর পুলিশের হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এসময়ে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই,  ডাকাতি, ও হত্যাসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটেছে যা জনমনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। 

এইচআরএসএস জানিয়েছে, জানুয়ারি-জুন এ ছয় মাসে কমপক্ষে ৫২৯ টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৭৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪১২৪ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল কেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার ৫২৯টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৩০২টি ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৮৩৪ জন ও নিহত ৪৬ জন। এছাড়া ১০১টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৫০২ জন ও নিহত ১৬ জন, বিএনপি-জামায়াতের ২৬টি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২১৬ জন ও নিহত ২ জন, বিএনপি-এনসিপির ১১ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৭৯ জন, আওয়ামী লীগ-এনসিপির মধ্যে ১৮টি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৫৪ জন ও নিহত ১ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে জুন এ ছয় মাসে ১৫২টি হামলার ঘটনায় ২৫৭ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ১১১ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ২০ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৩৪ জন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০ জন সাংবাদিক। এছাড়াও ২২টি মামলায় ৯২ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মার্চ মাসে রাজধানীতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী সাংবাদিক। এ সময়ে গণপিটুনির সংখ্যাও উদ্বেগজনক। এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গণপিটুনির অন্তত ১৪১টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৭ জন এবং আহত অন্তত ১১৯ জন। 

এছাড়া চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর কমপক্ষে ১০টি হামলার ঘটনায় ৪ জন আহত, ১টি মন্দির, ১১টি প্রতিমা ও ১৮টি বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের জমি দখলের মত ২টি ঘটনাও ঘটেছে। 

নারী নিপীড়নের বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, গত ছয় মাসে কমপক্ষে ১০৪২ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৪৭৬ জন, যাদের মধ্যে ২৯২ (৬০%) জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এর মধ্যে ১১০ (২২%) জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষনের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে ও আত্মহত্যা করেছেন ৭ জন নারী । ২৫৩ জন নারী ও কন্যা শিশু যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ১৪৩ জন। 

দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, ও নাগরিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন করা জরুরি বলে মনে করে এইচআরএসএস। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এ সকল বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।