প্রথম নিউজ, ভোলা: ভোলার তজুমদ্দিনে আরও এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। রোববার ওই নারী তজুমদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ দেন বলে জানান ওসি মো. মহব্বত খান। এদিকে তজুমদ্দিন উপজেলায় একের পর এক ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয় নিয়ে চলছে সমালোচনা। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে জানান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে না ধারার কারণে এমনটা হচ্ছে বলেও মনে করেন তারা। অভিযোগ রয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পর তজুমদ্দিন উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে নতুন ব্লক লিডারদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বহু নারী। ওই সব ঘটনা ভয়ে প্রকাশ করতে পারেননি নিরীহ চরবাসী। উপজেলা পর্যায়ের দলের শীর্ষ নেতারা জেনেও চুপ থাকেন। উল্টো শেল্টার দেন চরের আতংক ব্লক লিডারদের। এ নিয়ে ক্ষোভ জানান তজুমদ্দিন প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফখরে আজম পলাশসহ বিএনপির অনেক ত্যাগী নেতারা।
তজুমদ্দিন থানার ওসি জানান, একের পর এক ঘটনা নিয়ে তাদের ঘুম হারাম হচ্ছে। অভিযুক্তদের আটকে পুলিশ চরাঞ্চলে ছুটে বেড়াচ্ছে। রোববার যে নারী থানায় অভিযোগ করেন, তিনি লেখা পড়া না জানা এক নারী। কবে তার ওপর নির্যাতন হয়েছে ওই তারিখ সঠিকভাবে বলতে না পারলেও জানান- ঈদের তিন দিন পর রাতে তাকে ধর্ষণ করে অভিযুক্তরা।
উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে ওই নারীর বাড়ি। অভিযুক্তদের বাড়িও সেখানে। গত ঈদুল আজহার তিন দিন পর (আনুমানিক ১০ জুন) রাত ১২টার পর টয়লেটে যেতে ঘর থেকে বেড় হলে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন ও মো. রাসেল জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। একই সঙ্গে ভিডিও করে। ওই ভিডিও দেখিয়ে হুমকি দেয়, কাউকে জানালে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিন (পেশায় রাজমিস্ত্রি) ও মো. রাসেল দুইজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে যুগান্তরকে জানান, তারা বিএনপি কর্মী। যে নারী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে, ওই নারীর চরিত্র খারাপ। গত বছর তাদের দুজনের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। ওই সময় হাসপাতালে দেখতে এসে সাবেক এমপি নূরন্নবী চৌধুরী শাওন ১০ হাজার টাকা দেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিতে বলেন। পরে শাওনের দলে যোগ না দিয়ে শাওনের বিপক্ষে ইঞ্জিনিয়ার নোমানের পক্ষে কাজ করেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে তারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। তাদের ফাঁসানোর জন্য ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি গিয়াস ও রাসেলের।
অপরদিকে ওই নারীর একটি ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে নারী দাবি করেন, গিয়াস যখন তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করছিল। তখন রাসেল মোবাইল ফোনে ভিডিও করছিল। এভাবে তারা একে অপরের সময় ভিডিও করে। অনেক অনুরোধ করার পরও এদের হাত থেকে নিস্তার পাননি। ধর্ষণের বিষয় কাউকে জানালে, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেলিং করছিল কয়েক দিন।
ওই নারীর ভাই জানান, ওদের শেল্টারদাতাকে শুক্রবার (৪ জুলাই) বিএনপির ইউনিয়ন সম্পাদক পদ থেকে ও প্রাথমিক সদস্য থেকে বহিষ্কারের পর আমার বোন মুখ খুলতে সাহস পান। রোববার থানায় গিয়ে তারা গিয়াস ও রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।
ওসি জানান, অভিযোগ পেয়েই আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। অভিযুক্তদের খুঁজতে পুলিশ টিম অভিযানে নেমেছে।