দক্ষ আইনজীবী হতে অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই: মাওলানা আব্দুল হালিম
প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সুপ্রিম কোর্ট শাখার উদ্যোগে শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের অন্যতম উপদেষ্টা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ইউসুফ আলীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের উপদেষ্টা, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, এডভোকেট রেজাউল করিম খন্দকার, এডভোকেট গিয়াস কামাল মিঠু, এডভোকেট গোলাম রহমান ভূঁইয়া, এডভোকেট আব্দুল বাতেন, এডভোকেট জালাল উদ্দীন ভূঁইয়া, এডভোকেট এম. আর করিম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, দক্ষ আইনজীবী হতে অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। একইসাথে নিজেদেরকে আদর্শ ও চরিত্রবান রূপে গড়ে তুলতে হবে। আইন পেশায় যারা আছেন বিজ্ঞ আইনজীবীগণ আপনাদের স্মরণে রাখতে হবে যে, ন্যায়বিচার হলো সামাজিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলার সোপান। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসমক্ষে ও আদালতের কাছে আইনজীবী হিসেবে যোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে চেষ্টা চালাতে হবে। তিনি আইনজীবীদেরকে আত্মমর্যাদাবোধের সাথে এই পেশার প্রতি যথাযথ নিষ্ঠাবান ও পেশাদারী আচরণ করার এবং একইসাথে নৈতিক মানদন্ড অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, আইন পেশা একটি জন সম্পৃক্ততার পেশা, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর নানান রকম মানুষ নিয়েই এখানে নিত্য চলাফেরা। সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের কাছে নিজেদেরকে আপনজন হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। একইসাথে একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে দরদভরা মন নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক গভীর সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। জনগণের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। এক এক করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে ধ্বংস করে এদেশের মানুষের অধিকারকে পদদলিত করা হয়েছে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ন্যায়বিচার প্রাপ্তিসহ জনগণের সকল ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চলছে। তিনি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীসহ সকলকে অংশগ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আইনপেশা একটি সম্মানজনক পেশা এবং আইন পেশায় জনগণকে ও কোর্টকে একসাথে ম্যানেজ করে চলতে হয়, ফলে আইনজীবীদের পাবলিক রিলেশন ম্যানেজমেন্টে আরও বেশি প্রশিক্ষিত হওয়া বা দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরি। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি আইনজীবীদের নৈতিকতা, আদর্শিক মূল্যবোধকেও আরও শানিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছি, যেখানে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত হবে। অথচ বর্তমান সরকার জামায়াতকে আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে সীমাহীন জুলুম-নিপীড়নের পথ বেঁছে নিয়েছে। তারা সম্পুর্ন অসাংবিধানিক পন্থায় সারাদেশে জোরপূর্বক জামায়াতের সকল অফিস বন্ধ করে রেখেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ সঙ্কট, গ্যাস, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম বৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশের জনগণের অধিকার আদায়ে আইনজীবীদের অনবদ্য ভূমিকা রাখতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, একটি ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। একদল সৎ ও যোগ্য লোক তৈরী করার মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষের সেবা করাই হচ্ছে আমাদের কাজ। আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়ন করে সমাজের বঞ্চিত মানুষের খেদমতে নিজেদেরকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজনকে সাধুবাদ জানান। সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, আইনজীবীদের মাঝে প্রফেশনাল বিহেভিয়ার ও শিষ্টাচার প্রদর্শন অবশ্যই থাকতে হবে। এটি একজন সফল আইনজীবীর বড় গুন। তিনি সবসময় গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানান।