কবর প্রস্তুত করে মর্গের বাইরে ছেলের মরদেহের ২৪ ঘন্টা অপেক্ষায় বাবা-মা 

২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও মরদেহের ময়নাতদন্ত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কবর প্রস্তুত করে মর্গের বাইরে ছেলের মরদেহের ২৪ ঘন্টা অপেক্ষায় বাবা-মা 

প্রথম নিউজ, ফেনী: পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য প্রস্তুত কবর। এদিকে হাসপাতালের মর্গে আদরের সন্তানের মরদেহ। মর্গের বাইরে তাই মরদেহের জন্য অপেক্ষা বাবা-মা। ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও মরদেহের ময়নাতদন্ত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন চিত্রের দেখা মিলেছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে।  

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবাসন এলাকার ভাড়া বাড়ি থেকে তার বড় ছেলে আবু সাঈদের (২০) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা। নিজ শয়নকক্ষে গলায় বেল্ট পেছিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে ওইদিন রাত ২টার দিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে মরদেহ মর্গে প্রেরণ করে। 

এরপর কেটে গেছে পুরো একটা দিন। রোববার (১০ ডিসেম্বর) পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করলেও সময় শেষ হয়ে যাওয়ার অজুহাতে মরদেহের ময়নাতদন্ত করেনি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহিনুর আলম সুমন। 

নিহতের মামা আবদুল খালেক বলেন, আমার ভাগিনা এলাকায় একটি সুতার মিলে কাজ করতো। সেখানে স্বর্ণা নামে এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনেছি। ওই দিন আত্মহত্যার আগে ওই মেয়ের সঙ্গে ৪৫ মিনিট কথা বলেছে সে। তারপর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার ভাগিনার মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনা হলেও ময়নাতদন্ত করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালে পুলিশ এসে সুরতহাল প্রতিবেদন ও তদন্তের কাজ শেষ করে দুপুরে আরএমওকে ফোন দিলে ৩টার পর ময়নাতদন্ত হবে না বলে জানিয়ে দেন। অথচ মরদেহ পাওয়ার আশায় আমরা বাড়িতে কবর খোঁড়াসহ মরদেহ দাফনের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। ডাক্তার ইচ্ছে করলে ময়নাতদন্ত করতে পারতেন। শুধুমাত্র খামখেয়ালির কারণে আমাদের মরদেহ পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহিনুর আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের আরেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল বলেন, ময়নাতদন্ত কেন হয়নি সেটি আমার জানা নেই। তবে দিনের আলো কিংবা পর্যাপ্ত আলো ছাড়া ময়নাতদন্তের কাজ করা যায় না। সাধারণত শীতের দিনে দুপুর ৩টার পর অন্ধকার হয়ে যায় বলে ময়নাতদন্ত করা হয় না। 

মামলার তদন্তে কাজ করা ফেনী মডেল থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ঘটনাস্থলের সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে রোববার দুপুর আড়াইটার মধ্যে সুরতহাল প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তারা ময়নাতদন্ত করলে তবেই আমরা স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করতে পারব।