দুই বছর ধরে স্কুলে অনুপস্থিত দুই সহকারী শিক্ষিকা, থাকছেন আমেরিকা
রাজবাড়ীর নারুয়া ইউনিয়নের খালিয়া মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুমাইয়া সুলতানা ও একই ইউনিয়নের দেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রোজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। তারা দুজনই আমেরিকা প্রবাসী হয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম নিউজ, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার দুই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইজন সহকারী শিক্ষিকা ছুটি না নিয়েই প্রায় দুই বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
রাজবাড়ীর নারুয়া ইউনিয়নের খালিয়া মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুমাইয়া সুলতানা ও একই ইউনিয়নের দেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রোজিনা খাতুনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। তারা দুজনই আমেরিকা প্রবাসী হয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
এর মধ্যে রোজিনা খাতুন দুই দিনের ছুটি নিয়ে এবং শিক্ষক সুমাইয়া সুলতানা কোনো ধরনের ছুটি ছাড়াই দুই বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে শিক্ষক সংকটে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা উপস্থিত না থাকায় ওই শিক্ষকদের ক্লাস সমন্বয় করে অন্য শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে বাড়তি চাপ পড়ছে অন্য শিক্ষকদের ওপর।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, খালিয়া মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমাইয়া সুলতানা ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি এবং দেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোজিনা খাতুন ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট চাকরিতে যোগদান করেন। যোগদান করার পর সুমাইয়া সুলতানা ২০২০ সালের ১৭ মার্চের পর থেকে ছুটি ছাড়াই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন এবং রোজিনা খাতুন ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ এবং ৯ তারিখ দুই দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে আর বিদ্যালয়ে যাননি। তারপর থেকেই সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে।
খালিয়া মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, কোনো প্রকার ছুটি ছাড়াই সুমাইয়া সুলতানা ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার পরিবার সূত্রে জানতে পেরেছি তিনি আমেরিকা আছেন, তিনি আর চাকরি করবেন না। তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসকে জানানো হয়েছে। পদ শূন্য হলে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
দেলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুজ্জামান বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ২ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে আর বিদ্যালয়ে আসেননি সহকারী শিক্ষিকা রোজিনা খাতুন।পরবর্তীতে জানতে পারি তিনি আমেরিকা গেছেন। তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসকে অবগত করা হয়েছে। একাধিকবার তদন্তও হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয় দুটির একাধিক শিক্ষক জানান, সুমাইয়া সুলতানা ও রোজিনা খাতুন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় অন্য শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে। ওই দুই শিক্ষকের ক্লাসগুলো তাদের নিতে হচ্ছে। চাকরি থেকে অব্যাহতি না দিয়ে কর্মস্থলে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত থাকা গুরুতর অন্যায়। শুধু বিদ্যালয়ই নয়, এটা শিক্ষার্থীদেরও ক্ষতি করা। অব্যাহতি নিলে দ্রুতই পদ শূন্য হলে শিক্ষক পাওয়া যায়, কিন্তু বিধি মোতাবেক বরখাস্ত হওয়া তো দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। শুধু চাকরি থেকে বরখাস্ত নয়, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বালিয়াকান্দি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, ছুটি ছাড়াই সুমাইয়া সুলতানা এবং রোজিনা খাতুন নামে দুজন শিক্ষক দীর্ঘ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এরই মধ্যে একাধিক তদন্তও হয়েছে। জানতে পেরেছি তারা আমেরিকা রয়েছেন। খুব শিগগিরই পদ দুটি শূন্য ঘোষণা করা হবে এবং শিক্ষক পদায়নের ব্যবস্থা করা হবে। রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী বলেন, সহকারী শিক্ষক সুমাইয়ার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে চুড়ান্ত বরখাস্ত হবে। রোজিনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষা অফিসার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন, এখনো প্রতিবেদন পাইনি। প্রতিবেদন পেলেই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews