উপজেলা পরিষদের জায়গায় ইউএনওর মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ

সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের জায়গায় ১১ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের জায়গায় ইউএনওর মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ
উপজেলা পরিষদের জায়গায় ইউএনওর মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ

প্রথম নিউজ, সিরাজগঞ্জ: সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের জায়গায় ১১ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। আর এই মার্কেট শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন নিজেই নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শাহজাদপুর কাছারিবাড়ি সড়ক সংলগ্ন ইউএনওর সরকারি বাসভবনের সামনে এই মার্কেট নির্মাণ কাজ শেষ করে জামানত বাবদ প্রায় সোয়া ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছেন খোদ ইউএনও ও তার সহযোগীরা। সরকারি অর্থ ব্যয়ে মার্কেট নির্মাণের বৈধতা নিয়ে শাহজাদপুরের সর্বস্তরে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃ-আঙ্গারু গ্রামের বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট ও সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট আব্দুল মজিদ সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার সরকারি বাসভবন এরিয়ায় মার্কেট নির্মাণ করছেন। দায়িত্বশীল পদে থেকে তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি- এই মার্কেট নির্মাণে বার্ষিক উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কোনো বৈধতা নেই। এমনকি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে থেকে এর কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। কোনো প্রকল্প থেকে কত টাকা ব্যয়ে এ মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে তাও সংশ্লিষ্টরা বলছে না। এ বিষয়ে  শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কমিটির মিটিংয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অবিলম্বে এ কাজ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা বাসদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন বলেন,এটা বৈধ প্রক্রিয়ায় হতেই পারে। তবে অবৈধ ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকলে তা অবশ্যই নিন্দনীয়। সরকারি জায়গায় সরকারি অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের মার্কেট নির্মাণের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্তরা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেবে তা তো পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কমিটির সদস্য পোতাজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর জাহান বাচ্চু ও নরিনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম হোসেন বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এ মিটিংয়ের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমরা উপস্থিত ছিলাম। এ সময় পর্যন্ত ওই ওয়াল বা মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি এডিবি বা বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল থেকে কোনো উন্নয়ন কাজের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আমরা চলে যাওয়ার পর আলোচনা হয়েছে কি না জানি না। এ বিষয়ে পরে আর আমাদের কেউ কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কমিটির সদস্য কায়েমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল আলম ঝুনু ও হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমরা ওই মিটিংয়ে ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে কিছু জানি না।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কমিটির সদস্য ও পোরজনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাবু বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কমিটির মিটিংয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি উপস্থিত ছিলাম। এ মিটিংয়ের সর্ব শেষে ইউএনও সাদিয়া আফরিন বলেন- ওই জায়গায় একটা কাজ করা হবে। তবে কি কাজ করা হবে তা তিনি উল্লেখ করে বলেননি। এ ছাড়া ওই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। এমন কি এ বিষয়ে কোনো রেজুলেশনও হয়নি। এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকৌশলী নূর নবী খান ও পিআইও রাশিদুল হাসান বলেন, আমাদের দপ্তর থেকে ওখানে কোনো প্রকল্প দেয়া হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে এটা বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে হতে পারে। এ বিষয়ে ইউএনও ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, এটা আসলে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের জায়গা। এ জায়গাটি দখলমুক্ত রাখতে এখানে কয়েকটি দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কাজটি বাস্তবায়নের জন্য শাহজাদপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজ খরচে কাজটি সম্পন্ন করবেন। পরে দোকান ভাড়া বাবদ অগ্রিম জামানত নিয়ে তার খরচের টাকা পরিশোধ করা হবে। এ বিষয়ে আরও জানতে আপনারা শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদ রহমান অথবা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর সঙ্গে কথা বলে নিতে পারেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান বলেন, রেজুলেশন করে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদ থেকে মার্কেটটি নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন কথার ওঠার কারণে কয়েকদিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা রেজুলেশনের বিষয়ে কিছু জানার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, শাহজাদপুর পরিষদের উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান কবিতার লোক। তাই তারা এ বিষয়ে অস্বীকার করছেন। 

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর মোবাইল ফোনে একাধিক কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: