ইসলামী স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন ঘোড়াঘাটের সুরা মসজিদ
এক গম্বুজবিশিষ্ট বর্গাকার এ মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে উঁচু চত্বরের ওপর। এমন মসজিদ বাংলায় আরেকটি চোখে পড়বে না।
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে মুসলিম আমলের সুরম্য যে মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করেন সেটি সূরা মসজিদ। মসজিদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে বেশকিছু প্রস্তরফলক। মসজিদের সম্মুখভাগে বড়সড় বারান্দা। এক গম্বুজবিশিষ্ট বর্গাকার এ মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে উঁচু চত্বরের ওপর। এমন মসজিদ বাংলায় আরেকটি চোখে পড়বে না। মসজিদ ঘিরে রয়েছে নানা কল্পকথা। কেউ বলেন সৌর মসজিদ, কেউ সূরা মসজিদ, আবার কেউ বলেন শাহ সুজা মসজিদ। জনশ্রুতি আছে, গায়েবিভাবেই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। আবার অনেকের মতে, মোগল আমলে বাংলার নবাব সুজা এটি নির্মাণ করেছেন বলে এর নাম শাহ সুজা মসজিদ।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক দানি এটিকে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর আমলে নির্মিত বলে অনুমান করেন। তাই মসজিদটি সুলতানি আমলে (১৪৯৩-১৫১৮) খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। মুসলিম আমলে গৌড় থেকে ঘোড়াঘাট যাওয়ার পথ ছিল একই। এ সময় মুসলমানদের নামাজ পড়ার সুবিধার জন্য খুব সম্ভব এখানে এ মসজিদ তৈরি হয়েছিল।
সব কোণে আছে অষ্টভুজ স্তম্ভ, মোট স্তম্ভের সংখ্যা ছয়টি। মসজিদের সব দিকের দৈর্ঘ্য ৪.৯ মিটার। দালানটির বহির্গাত্রে গোলাপ ও অন্যান্য লতাপাতার নকশাখচিত পোড়ামাটির কারুকাজ আছে। জ্যামিতিক আকৃতির কিছু নকশাও দেখতে পাওয়া যায়। ভেতরের মিহরাবগুলো ছিল সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। মধ্যবর্তী মিহরাবটি সূক্ষ্মভাবে কারুকার্যখচিত।
শিকল ও ঘণ্টার মোটিফ, লতাপাতার নকশা, লেখ্য পটের মোটিফ এবং জ্যামিতিক আকৃতির নকশাগুলো করা হয়েছে বেশ চমৎকারভাবে। গম্বুজগুলোর ভিত পোড়া মাটির কারুকার্যখচিত ইট দ্বারা অলংকৃত। সম্প্রতি এ স্থান থেকে কয়েক মাইল দূরে চম্পাতলী নামক স্থানে আলাউদ্দীন হোসেন শাহর আমলের একটি শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়েছে। তাতে ৯১০ হিজরি/১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দ উল্লেখ আছে। এতে একটি মসজিদ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।
যদি ধরে নেওয়া হয়, এ লিপিটির সঙ্গে সূরা মসজিদের সম্পর্ক আছে, তাহলে মসজিদটির নির্মাণকাল ১৫০৪ খ্রিষ্টাব্দ বলে ধারণা করা যায়। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই মসজিদটি হারিয়ে ফেলছে তার পুরোনো জৌলুস।