আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ইইউ’র প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে বৈঠককালে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে বিএনপি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে তারা। গতকাল প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ইইউ’র প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে বৈঠককালে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে বিএনপি। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের নেতারা অংশ নেন। এ সময় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলের দাবিসহ সার্বিক বিষয় ইইউ প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরেন তারা।
বৈঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইইউ জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন আদৌ জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কিনা। আমরা সব সময় বলে আসছি, এ সরকারের অধীন নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, সম্ভব নয়। কারণ অনেক। এ কারণগুলো বলে শেষ করা যাবে না। মূল কারণগুলো হচ্ছে এদের অধীনে নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের দিন তো দূরে থাক।
ভোট চুরি তো এখনই চলছে। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এই যে ডিসিদের পোস্টিং হচ্ছে, এসপিদের পোস্টিং হচ্ছে, ইউএনওদের পোস্টিং হচ্ছে, বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার চলছে। শুক্রবার দলের পদযাত্রায় আসা নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ করে বাধা দেয়া হয়েছে। এটা তো অব্যাহতভাবে চলছে। বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলার বিচারকে ত্বরান্বিত করে তাদের শাস্তি দিচ্ছে, বিএনপি নেতারা যাতে নির্বাচন করতে না পারে। অর্থাৎ ভোট চুরি বাংলাদেশে প্রত্যেকদিন চলছে। তারা আগামী দিনেও জনগণকে বাইরে রেখে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতায় যাবে। স্বাভাবিকভাবে এ কথাগুলো আজকের আলোচনায় (ইইউ’র সঙ্গে) এসেছে। শেষ কথা হচ্ছে, এই সরকারের অধীন দেশের মানুষ তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবে না। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না।
আমীর খসরু বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য না, এটাই তো ভিত্তি। এই ভিত্তির ওপরে আজকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের উপর নজর দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের কনসার্ন প্রকাশ করছে। এজন্য তারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) আসছেন, তারা জানতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন আদৌও আগামী দিনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি হবে না?
গত দুটি নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি, এবার পাঠাবে কিনা- জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ পাঠাবে কি পাঠাবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। কথা হচ্ছে, নির্বাচন তো হতে হবে। পর্যবেক্ষক আসার প্রশ্ন তখনই আসে, যখন একটি নির্বাচন হয়। জনগণ বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিয়ে সরকার গঠন করেছে এ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশ্বাস করে না। ভবিষ্যতেও বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। এই প্রেক্ষাপটে তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা তাদের ব্যাপার। তারা এখানে আসার উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার করছে, বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন যদি হতো, তাহলে তারা তো নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত কোথাও যাচ্ছে না। কেন বাংলাদেশে আসছে, সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। বাংলাদেশে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, সেটার লক্ষণ প্রতিদিনই আমরা দেখছি। জেল, মিথ্যা মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা প্রতিনিয়ত চলছে।
‘মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে বাংলাদেশ সফর করে গেছে। তাদের এ সফরকে বিএনপি কীভাবে মূল্যায়ন করে’ এমন প্রশ্নে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এ সফর কেন হচ্ছে, এটাই তো প্রশ্ন। কেন বাংলাদেশে সফর করছে সবাই? তারা যখন বক্তব্য শুরু করে প্রথম কথাটা তাদের কী, এ দেশে তারা একটা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। এখান থেকে আপনারা ধরে নেন বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের কী ধারণা এবং তারা কী চায় বাংলাদেশে। কূটনৈতিক ভাষায় এর চেয়ে বেশি কিছু বলার আছে?’
নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’র ক্ষেত্রে আপনাদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে ইইউ দলকে কিছু বলেছেন কিনা প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। যেখানে ডেমোক্রেটিক অর্ডার নাই, সেখানে সমান সুযোগ থাকতেই পারে না। এটা সর্বজনবিদিত ব্যাপার।
ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেখানে কোনো ডেমোক্রেটিক অর্ডার নাই, মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ, আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ, জীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ, যেখানে ডেমোক্রেটিক অর্ডারই অনুপস্থিত সেখানে সংলাপ কীভাবে? সংলাপের জন্য একটা ডেমোক্রেটিক অর্ডার লাগে, সংলাপ তো ডেমোক্রেটিক অর্ডারের অংশ। সেই পরিবেশ তো আগে ক্রিয়েট করতে হবে, তারপরও তো সংলাপের প্রশ্ন আসবে।
গতকাল সকাল ৯টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৬ সদস্যের ‘ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন’র প্রতিনিধি দল। তাদের নেতৃত্ব দেন প্রতিনিধি দলের প্রধান রিকার্ডো শেলেরি। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।