এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

গতকাল রাজধানীর গুলশানে ইইউ কার্যালয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে জামায়াত এ তথ্য জানায়।

এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। একইসঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জামায়াত নির্বাচনে যাবে না বলেও জানানো হয়। গতকাল রাজধানীর গুলশানে ইইউ কার্যালয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে জামায়াত এ তথ্য জানায়। জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে তাদের (ইইউ’র প্রতিনিধি) বলেছি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে, এটা সমগ্র জাতি ও বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার ছিল। এটা কোনো নির্বাচন না, নির্বাচনের নামে প্রহসন ছিল। এটি নজিরবিহীন প্রতারণার নির্বাচন ছিল।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচন নিঃসন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার ও এই প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেই আলোকেই আমরা বলেছি, আগামী যে নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশের ডেমোক্রেসির জন্য। বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত ‍গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হলেই আগামী দিনে বাংলাদেশ বাঁচার সম্ভাবনা আছে। এই রিট নির্বাচন এদেশ আর বহন করতে পারবে না। সুতরাং কেয়ার টেকার সরকার অথবা নির্দলীয় সরকার যে নামেই হোক না এ রকম একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হলে সেখানে পর্যবেক্ষক পাঠানো ‘অর্থহীন’ হবে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। 

এই বিষয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, তারা (ইইউ’র প্রতিনিধিদল) আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, আমাদের অবজারভার (পর্যবেক্ষক) পার্টি পাঠানোটা আপনারা কীভাবে দেখেন। কারণ তাদের এই ভিজিটটা হচ্ছে অবজারভার পাঠাবে কিনা সেটা যাচাইয়ের জন্য, অবজারভার আসার জন্য না। আমরা বলেছি বাংলাদেশে নির্বাচনে যেকোনো অবজারভার হলে এটা আমরা স্বাগতম জানাই। যদি সেটা কোনো নির্বাচন হয়। আর যদি সেটা নির্বাচনের নামে প্রহসন হয় তাহলে এখানে অবজারভার (পর্যবেক্ষক) আসা অর্থহীন। এতে আপনারা একটা অবৈধ নির্বাচনকে দেখতে আসবেন এটা আপনারা সম্মানবোধ করবেন কিনা এটা আপনাদের বিবেচনার বিষয়। সুতরাং যদি সুষ্ঠু ফেয়ার নির্বাচন, নন- গভর্মেন্টাল (নির্দলীয়) সরকারের অধীনে হয় তাহলে আপনারা অবজারভার পাঠান আমরা আপনাদেরকে ওয়েলকাম করবো। আর একদলীয় একটা বাজে নির্বাচনের প্রহসনে আপনারা এসে তাদেরকে কিছুটা বৈধতা দেবেন- এটা বোধ হয় সমীচীন হবে না। 

গতকাল দুপুর আড়াইটায় দিকে গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কার্যালয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে জামায়াতের প্রতিনিধিদল। এই দলে ছিলেন- দলটির নায়েবে আমীর ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, দপ্তর সম্পাদক মতিউর রহমান আখন্দ ও জামায়াত নেতা অধ্যাপক আব্দুর রব।

ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, বৈঠকে তারা জিজ্ঞাসা করেছে আপনাদের নিবন্ধনের কি অবস্থা? আমরা বলেছি আমরা নিবন্ধিত দল। আমরা ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এই পাঁচটা নির্বাচন নিবন্ধিত দল হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ মার্কায় নির্বাচন করেছি। পরবর্তীতে যেমনিভাবে আমাদের লোকদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের এক লাখ ১০ হাজার মানুষকে জেলে নেয়া হয়েছে, আমাদের ওপর অনেক জুলুম- অত্যাচার হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে এই অবৈধ সরকার ডিক্টেটেড রায়ের মাধ্যমে আমাদের নিবন্ধনটিও হাইকোর্টে হত্যা করেছে।  কিন্তু এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছি এবং এটি সর্বোচ্চ আদালতে আপিল অবস্থায় আছে। আশা করি নির্বাচনের আগে আপিল বিভাগে যদি সুষ্ঠু ন্যায় বিচার হয় আমরা আমাদের নিবন্ধন ফিরে পাবো। 

‘ইইউ পার্লামেন্টের একটা প্রস্তাব ছিল যে, জামায়াতে ইসলামী ধর্মকে ব্যবহার করে সহিংসতা করে। ‘ধর্মীয় সহিংসতা’র বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কিনা’- জানতে চাইলে মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা এটা পরিষ্কার করেছি যে, জামায়াতে ইসলামী এটা কখনোই করে না। জামায়াত কোনো ভায়োলেন্সে বিশ্বাস করে না। আমাদের দল অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ডেমোক্রেটিক, পজিটিভ, মডারেট একটি ইসলামী সংগঠন। তারা (ইইউ প্রতিনিধিদল) এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং আমাদের কথায় তারা কনভিন্সড হয়েছেন।

এদিকে গতকাল পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সিলেটে সমাবেশ করার কথা ছিল। তবে প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ করতে পারেনি জামায়াত। এই বিষয়টিও ইইউ প্রতিনিধিদলকে অবহিত করে জামায়াত। দলটির নায়েবে আমীর ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা দীর্ঘদিন আগেই আবেদন করেছিলাম এবং গত এক সপ্তাহ ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি, মিডিয়াতে অনলাইনে, অফলাইনে, মাঠে-ঘাটে সবখানে। গত শুক্রবার রাতে পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানান যে, আমাদের সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়া হয়নি। আমরা আবার আগামী শুক্রবারে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে জনসভার ঘোষণা দিয়েছি। আবারো অনুমতি প্রার্থনা করেছি। আমরা আগামী ২২ তারিখে চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসভার জন্য কমিশনারের কাছে আবেদন করবো।