প্রথম নিউজ, ঢাকা: আল্লাহ আমাকে সেনাপ্রধান করেছেন, আর কি চাইতে হবে?-জেনারেল আতিক(সাবেক সেনাপ্রধান) বেশ ক’বছর আগের কথা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল সড়কে দাড়িয়ে সিগারেট টানছি। একটু দূরে আমার গাড়ি পার্ক করা। হঠাৎ একটা পুরনো কিন্তু চকচকে টয়োটা কার এসে পাশে ক্যাচ করে ব্রেক করলো। ‘বৃটিশ’ মডেলের গাড়ির কাচ নামিয়ে একজন জিজ্ঞেস করলেন- রূশদ, হোয়াট আর ইউ ডুইং হেয়ার? দেখি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আতিক! সিগারেটের ধোয়া গিলবো না নাক দিয়ে বের করবো ভাবতে ভাবতেই দম আটকে এলো। এটেনশন হয়ে গেলাম।হাত থেকে সিগারেট আগেই পরে গেছে। উনাকে ভয় পায় না এমন কোন অফিসার আজ পর্য়ন্ত তৈরি হয়নি। চাকুরিকালে উনার সামনে জেনারেলরাও দাড়িয়ে কাপতেন। যাহোক কোনমতে সামলে নিয়ে বললাম-স্যার, কাজে এসেছিলাম। আপনি কেমন আছেন?
কতোক্ষন গাড়িতে বসেই জেনারেল আতিক এটা ওটা জিজ্ঞেস করলেন। আমি অতি বিণয়ের সাথে উনার কাছে জানতে চাইলাম-স্যার, আপনি এতো আগের মডেলের গাড়ি এখনো চালাচ্ছেন?
উনি তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন- কেন? গাড়িটা তো এখনো ভালোই চলছে! কোন অসুবিধা তো নেই! নতুন গাড়ি কিনতে হবে কেন? উনি চলে গেলেন। ওই দিনেরও বহু আগে ২০০০ সালে ওনার বনানীর বাসায় এসেছি দৈনিক পত্রিকা থেকে প্রতিরক্ষা নীতির উপর সাক্ষাতকার নিতে। অতি সাধারণ, কিন্তু অভিজাত সজ্জা তাঁর বাসায়। সাক্ষাতকারের মাঝেই ভাবী নাশতা নিয়ে এলেন। খেতে খেতে জে.আতিককে জিজ্ঞেস করলাম-স্যার, রিটায়ার করার পর আপনি কিছু করেন না কেন? বহু জনই তো বিভিন্ন কোম্পানিতে বড় পদে কাজ করছেন! জে.আতিক ঠান্ডা গলায় বললেন- আচ্ছা আল্লাহ ক’জনকে সেনাপ্রধান বানায়? বহু ভালো অফিসার পদোন্নতিই পায় না, সেনা প্রধান হতে পারে না। আমাকে আল্লাহ সেনাপ্রধান বানিয়েছেন। এরচেয়ে আর কি বড় হতে হবে? সারাজীবন তোমার ভাবীকে সময় দিতে পারিনি। এখন সময় দেই। কোরআন পড়ি,বই পড়ি, নাতি-নাতনীদের সাথে খেলা করি।সরকার আমাকে বনানীতে একটা জমি দিয়েছে, সেখানে বাড়ি করেছি। আর কি চাওয়ার আছে এই গরীব দেশে?
জেনারেল আতিক যখন সেনাপ্রধান ছিলেন তখন এই আর্মিটা সবচেয়ে ভালো ফাইটিং ফোর্সে পরিণত হয়েছিল।
তিনি সকল অফিসারকে (যে কোন কোরের) কমান্ডো কোর্স করা বাধ্যতামূলক করেছিলেন। সকল সৈনিককে ছোট খাট অপারেশন যেমন রেইড, এ্যামবুশ, হাইড আউটের উপর ট্রেনিং নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান হওয়ার পর দরবারে তিনি বলেছিলেন- আমরা গরীব দেশ, ভালো অস্ত্র হয়তো কিনতে পারবো না।তাই প্রশিক্ষন দিয়ে তা পোষাতে হবে। তিনি তা করে ছেড়েছিলেন। রাতে নয়টার পর সেনানিবাসে কোন সড়কের বাতি জ্বলতে দিতেন না সরকারের পয়সা সাশ্রয় করার জন্য।
তাকে কয়জন অনুসরণ করেছেন বলতে পারি না...
[স্যারের বয়স আজ নব্বইয়ের উপরে... উনার কোন বিএমডব্লিউ নেই, রোলেক্স নেই...আছে ডিগনিটি, আছে সকল অফিসার ও সৈনিকের শ্রদ্ধা]
আবু রূশদ: লেখক, সাংবাদিক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, সম্পাদক: ডিফেন্স জার্নাল (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: