তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি

২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপির কঠোর আন্দোলনে শক্তিক্ষয় ও ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোটের আগে ও পরে দেশব্যাপি গায়েবি মামলায় নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। গুম,খুন, বিচারবর্হিভুত হত্যা, মিছিলে গুলি করে হত্যাসহ মিথ্যা মামলার হিড়িক চলে বিগত বছরগুলোতে।

তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি
তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি

রাশেদুল হক, প্রথম নিউজ: ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপির কঠোর আন্দোলনে শক্তিক্ষয় ও ২০১৮ সালের নিশিরাতের ভোটের আগে ও পরে দেশব্যাপি গায়েবি মামলায় নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।  গুম,খুন, বিচারবর্হিভুত হত্যা, মিছিলে গুলি করে হত্যাসহ মিথ্যা মামলার হিড়িক চলে বিগত বছরগুলোতে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজনো মামলায় ফরমায়েসি রায় দিয়ে বন্দি করে রাখা হয় কারাপ্রকোষ্টে। আজও তিনি বন্দি। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতারা টিপ্পনি কেটে বলতে থাকেন বিএনপি আন্দোলন জমাতে পারে না। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। দলটির তেমন জনসমর্থন নেই। হেন কোনো কথা নেই বিএনপি নিয়ে বলা হয়নি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু সব সমালোচনাকে মোকাবিলা করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। কোন প্রকার সহিংসতা ছাড়াই সমাবেশে যোগ দিচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। মহানগর, জেলা, উপজেলা,  ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে পেরেছে দলটি। আগের থেকে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়েছে এখন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিএনপির আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। সম্প্রতি দেশব্যাপি বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, পদযাত্রা, মানববন্ধন কর্মসুচি পালনের ফলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে।  এমনভাবে তৃণমূলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে তা দেখে তাদের মাথা নষ্ট।    

বিএনপির এই হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ানোর কারণ হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কৌশলী কর্মসূচি ও তৃণমূলের উত্থান। গত কয়েক মাসের বিভিন্ন কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে বিএনপির তৃণমূলের শক্তিকে তুলে ধরছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও নানা স্বার্থ থাকলেও তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের বার্তা পরিষ্কার। তাঁরা আন্দোলনেও মাঠে থাকতে চান। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির ৯ কর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও মিছিলে উপস্থিতি কমেনি। বরং দিন দিন উপস্থিতি বাড়ছে। সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। বিএনপির কর্মসূচিগুলোয় দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা ও সংকট নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। অর্থনৈতিক দুরবস্থা নিয়ে  বিএনপি ধারাবহিক কর্মসূচি দিচ্ছে। জ্বালানি গ্যাস- বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিলে গিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রাণ দিয়েছেন এখন পর্যন্ত ১৫জন। বিএনপির কর্মসুচিতে সম্পৃক্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। দেশব্যাপী বিএনপির জনসভাগুলোতে মানুষের ঢল নামে। সরকারি অবরোধ আর বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে গুড়, চিড়া, মুড়ি হাতে নিয়ে পায়ে হেঁটে, ট্রলারে করে,কলাগাছের ভেলায় করে, ভ্যানে করে, সাইকেলে করে কিংবা নদী সাঁতরে জনসভাগুলোতে যোগ দেয় লাখ লাখ জনতা। এক অভাবনীয় দৃশ্য  লক্ষ করা গেছে  দেশব্যাপি সমাবেশগুলোতে। দেখা গেছে  দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সমাবেশের আশপাশে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ বক্তব্য শুনছে। তারা কিন্তু মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত না।

লুঙ্গি পরা, মলিন চেহারার মানুষেরা দাঁড়িয়ে গেছে মিছিলের পাশে, সমাবেশের পাশে। কারণ, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দামে তারা দিশেহারা। জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে তাদের জীবন ওষ্ঠাগত। সরকারের উন্নয়নের ভেলকিবাজিতে মানুষের পেট ভরছে না। বিএনপি সরকারের আমলেও চার-পাঁচশ টাকা নিয়ে গেলে পাওয়া যেত ব্যাগভর্তি বাজার। গরুর মাংস, মাছ, সঙ্গে থাকত অন্যান্য শাক-সবজি। তারপরেও কিছু টাকা থেকে যেত। এক যুগের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। আড়াইশ টাকার গরুর মাংস এখন কিনতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা দিয়ে। ১০০-১১০ টাকার ব্রয়লার মুরগির দাম আড়াইশ টাকা। ১০০-১২০ টাকার মাছ এখন কিনতে হচ্ছে ৫০০ টাকায়। ভরা মৌসুমেও সবজির দাম চড়া। এক হাজার টাকার বাজার করলেও ব্যাগ ভরছে না ক্রেতাদের। জ্বালানি, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে দফায় দফায়। সরকার যাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পারে সে জন্য  আইন সংশোধন করা হয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করে সরকারি দলের নেতাদের সীমাহীন লুটপাটের কারণে সব জিনিসের দাম একের পর এক বাড়ানো হচ্ছে লাগামহীনভাবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্দির প্রভাব পড়েছে সব ক্ষেত্রে। এর ফলে বাস বাড়া বেড়েছে, বাড়ি বাড়াসহ অন্যান্য সকল খরচ বেড়েছে। কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে বহু গুন। ফলে সব শ্রেনীর মানুষ এখন দিশেহারা। টিসিবির লাইনে এখন দেখা মিলে মধ্য বিত্ত ও উচ্চ মধ্য বৃত্তদেরও।  এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষ পরিবর্তন চায়।

অর্থনৈতিক দুরবস্থার অবসান চায়। তারা চায় অর্থ পাচার, লুটপাট বন্ধ হোক। বিদ্যুতের দাম কমানো হোক। চাল–ডালের জন্য টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানবসারি ছোট হোক। সাধারণ মানুষের জীবনে নিরাপত্তা ফিরে আসুক। ভোটের অধিকার ফিরে আসুক। কথা বলার অধিকার ফিরে পাক।  এছাড়ও নিত্যাপণ্যের দাম অস্বাবাবিক বৃদ্ধি, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মু্ক্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবদায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে যোগ দিয়েছে সমমনা বিভিন্ন সংগঠন। এরই মধ্যে প্রায় ৪০টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন একই দাবিতে যুগপৎ  আান্দোলনে যোগ দিয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দাতা সংস্থাসহ বিদেশিদের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। একটি কল্যাণমূলক রাস্ট্র গঠনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ২৭ দফা রুপরেখা  এবং দাবি আদায়ে যে ১০ দফা কর্মসুচি ঘোষনা করেছেন এটিকে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ। লেখক সহ-সভাপতি,ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomn