Ad0111

তুমি কি আমাকে দেরী হওয়ার জন্য অভিশাপ দিচ্ছো?

আর ইউ কার্সিং মি?-জেনারেল সাদেক::: ইয়েস স্যার-আমি

তুমি কি আমাকে দেরী হওয়ার জন্য অভিশাপ দিচ্ছো?
প্রথম নিউজ : আর ইউ কার্সিং মি?-জেনারেল সাদেক::: ইয়েস স্যার-আমি!! ১৯৮২ সাল। রংপুর ক্যাডেট কলেজ ভিজিট করতে আসবেন সেনাবাহিনীর বাঘা অফিসার এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল সাদেকুর রহমান চৌধুরী,টিকিউএ ( তমঘা ই কায়েদে আজম)। একসময় জেনারেল জিয়ার মিলিটারি সেক্রেটারি ছিলেন। চারদিকে সাজ সাজ অবস্থা। সব ঘষে মেজে ঠিকঠাক করা হচ্ছে। জেনারেল সাহেব দুপুরের খাবার খাবেন ক্যাডেটদের সাথে। তারপর অডিটরিয়ামে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ক্যাডেট কলেজগুলোর বড় কর্তা এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল। তাই তাঁর আগমন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন মাহতাব উদ্দিন অত্যন্ত কঠোর প্রশাসক। তিনি সব কিছুর তদারক করছেন। এ্যাডজুটেন্ট মেজর খায়রুল আলম বেলালকেও দেখা গেল ভীষন ব্যস্ত। কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট অর্থাৎ সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসাবে আমার মাথা খারাপ। কারন, মূল অনুষ্ঠানটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার। ওখানে আমাকে তা পরিচালনা করতে হবে সঙ্গতকারনেই। শো-আমার। ভালো হলে সাবাশী, খারাপ হলে ইন্না লিল্লাহ! জেনারেল সাদেকের আসার কথা দুপুর একটায়। আমরা যারা এ্যাপয়েন্টমেন্ট হোল্ডার ( ক্রসবেল্ট হোল্ডার) তারা ডাইনিং রুমে যাওয়ার প্রধান পথে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছি তাঁকে রিসিভ করার জন্য। সবার পরনে কড়া মাড় দেয়া ধোপদুরস্ত খাকি ইউনিফর্ম। আমাদের ডাইনিং হল প্রিফেক্ট দেলোয়ার (কর্নেল হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত) দোয়া দরুদ পড়ছে।আমার পাশে রুমমেট ও গেমস প্রিফেক্ট এনায়েত উল্লাহ(মেজর জেনারেল ও এজি হিসাবে গত বছর অবসরে গেছেন)।
দাড়িয়ে আছি তো আছি।কারো কোন খবর নেই। ডাইনিং হলে অলরেডি সব ক্যাডেট বসে আছে। ঘড়ি দেখছি, বিড়বিড় করছি। দেলোয়ার আয়াতুল কুরসী পড়ছে। খাওয়া যদি ঠান্ডা হয়ে যায়! ওর টেনশন দেখে কে! জেনারেল সাদেকুর রহমান চৌধুরীকে সেনাবাহিনীতে সবাই বেশ রাশভারি ও জাদরেল জেনারেল বলেই জানতো। তাই দেলোয়ারের ছটফট আরো বেড়ে গেল। এভাবে প্রায় আড়াইটা বেজে গেল। সবার অস্থির অবস্থা। কতোক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যায়? নিজেদের মধ্যে এনিয়ে কথা বলছি তখন জেনারেল সাদেককে নিয়ে অধ্যক্ষ, এ্যাডজুটেন্ট ও অন্যান্য অধ্যাপকগন এগিয়ে এলেন। এ্যাপয়েন্টমেন্ট হোল্ডারদের সাথে একে একে হ্যান্ডশেক করছেন এজি। আমার সামনে আসার পর স্যালুট দিলাম যথারীতি। তিনি হ্যান্ডশেক করার পর বললেন- আমার অনেক দেরী হয়ে গেছে।আর ইউ কার্সিং মি ফর দ্যাট?অর্থাৎ তুমি কি আমাকে দেরী হওয়ার জন্য অভিশাপ দিচ্ছো?কি যে হলো! মুখ ফসকে বলে ফেললাম-ইয়েস স্যার!

প্রিন্সিপালের চোখ ছানাবড়া, এ্যডজুটেন্ট মনে হলো পারলে আমাকে মাটিতে পুতে ফেলেন। কিন্তু জেনারেল সাদেক হো হো করে জোরে হেসে উঠলেন। তিনি গ্রুপ ক্যাপ্টেন মাহতাবউদ্দিনের দিকে ফিরে বললেন-দেখো মাহতাব, দিস গাইস আর ভেরি মাচ কারেজিয়াস। দে আর কার্সিং মি! হো..হো.. লেটস গো ফর লাঞ্চ জেন্টলম্যান ...বিড়ালের মতো সুর সুুর করে গেলাম খাবার খেতে। এরপর অডিটোরিয়ামে সবাই জড়ো হলো বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের জন্য। মনে বেশ আতংক নিয়েই অনুষ্ঠান পরিচালনা করলাম। প্রধান অতিথি হিসাবে জেনারেল সাদেক বক্তব্য দিতে এলেন। তিনি আমাদের কার্সিং নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে জোক করলেন। বললেন, তাঁর দীর্ঘ সামরিক জীবনে কোনদিন কোন জুনিয়রকে এমন সাহস করে কথা বলতে দেখেননি। যাক বাঁচা গেল। উনি ব্যাপারটিকে তরুন একজন ক্যাডেটের ততোধিক তরুন মনের বিষয় বলে হালকাভাবে নিয়েছিলেন।
এর প্রায় চার বছর পর ১৯৮৬ সালে আমি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসাবে যশোর সেনানিবাসে অবস্থিত সিগন্যালস ট্রেনিং সেন্টার ও স্কুলে বেসিক কোর্স করছি। প্রায়ই পার্টি থাকে অফিসার্স মেসে। একদিন কি উপলক্ষ্যে জানি আমাদের সিগন্যালস অফিসার্স মেসে জমপেশ পার্টি হচ্ছে। প্রধান অতিথি জিওসি। তিনি মেজর জেনারেল সাদেকুর রহমান চৌধুরী।উনার আসার কথা শোনার পর থেকে আমার ঘুম নেই। ১৯৮২ সালে তো পোলাপান ছিলাম। এখন তো মাগার অফিসার, শিটপট অফিসার,অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট! রাতে পার্টির সময় এন্টি রুমে সব সিনিয়র অফিসারদের ভিড়। আমি চিপায় কোনমতে নিজেকে লুকিয়ে রাখছি যাতে জিওসি দেখতে না পান। তারপরও রক্ষা হলো না। একজন অফিসার এসে বললেন- জিওসি তোমাকে ডাকছে। গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। কাঁপা কাঁপা পায়ে জে.সাদেকের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। তিনি মনযোগ দিয়ে আমাকে দেখছেন। তারপর হো হো করে হেসে দিলেন। আর ইউ দ্যাট ক্যাডেট ফ্রম রংপুর ক্যাডেট কলেজ হু কার্সড মি? আমি মিনমিন করে বললাম-ইয়েস স্যার।
জিওসি’র হাসি থামে না। তিনি আশপাশের সব অফিসারকে আমাকে দেখিয়ে সেই অভিশাপ দেয়ার কাহিনী বলতে লাগলেন। একপর্য়ায়ে প্যাটিং করে বললেন- আই এ্যাম গ্লাড টু সি ইউ এ্যাজ এ্যান অফিসার। বাট ডোন্ট কার্স মি নাউ! [জেনারেল সাদেকের একটি হুন্দাই পনি গাড়ি ছিল নিজের। তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রায়ই বিকেলে ওটা নিয়ে বের হতেন। নিজে চালাতেন। আমরা দূর থেকে দেখতাম। তাঁর স্ত্রী পুরো গ্যারিসনের ব্যাচেলর অফিসারদের জন্য মাসে একটা করে পার্টি দিতেন লেডিস ক্লাবের পক্ষ থেকে। বিবাহিত অফিসারদের মিসেসরা রান্না করে নিয়ে আসতেন আমাদের মতো অভাগাদের খাওয়াতে। তাঁর সাজ সজ্জা ছিল পরিপাটি, অভিজাত। গলায় চিকন একটা চেইন, হাতে চিকন বালা ও ঘড়ি। দারুণ স্মার্ট ছিলেন। তবে কোন অতিরিক্ত শো অফ বা দেখানোর ভাব ছিল না। দামী কোন জিনিস কখনো দেখিনি। কোন রং চং মেখে পটের রাণী তিনি কখনো সাজতেন না। জেনারেল সাদেকও ছিলেন ছিমছাম একজন নিপাট অভিজাত মানুষ ও অফিসার। তিনি কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন] প্রেসিডেন্ট জিয়ার মিলিটারি সেক্রেটারি হিসাবে জেনারেল সাদেক প্রেসিডেন্ট কার্টারের ডানে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news