আমি দগ্ধ হই অদেখা দহনে: কাদের
খবরের কাগজের পাতার অপ্রত্যাশীত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়
প্রথম নিউজ, ঢাকা: নিজদের মন্ত্রণালয়ের বিস্তর উন্নয়নের পরও সড়ককে নিরাপদ করতে না পারায় স্বস্তিতে নেই বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন,‘প্রতিদিন সকালটা আমার কাছে আসে ভিন্নভাবে, সবার দিন শুরু হয় একভাবে, আর আমার দিনটি শুরু হয় অন্যভাবে। কাগজের পাতার অপ্রত্যাশীত মর্মান্তিক দুর্ঘটনা খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়। মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আমিও দগ্ধ হই অদেখা দহনে। মনে হয় আমিও সেই অসহায় পরিবারের একজন। যে পরিবারের কয়েকজনও এক সঙ্গে পথের বলি হয়। কখনো দুই পরিবহনের সংঘর্ষে। কখনো তিন চাকার গাড়ি ইজিবাইকে, নসিমন, করিমনে।
আজ শুক্রবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এবারের আলোচনার বিষয় ছিল ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকগুলো ত্রুটি আমাদের আছে সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতো এটাই চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এত উন্নয়ন হলো কিন্তু অনেকে বলেন ‘এই কাজটি হয় না কেন। সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারবো না। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহন ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জিং। কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি।
আগামীতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প আসতে যাচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘অবকাঠামোগতভাবে পরিবর্তন দৃশ্যমান। আগামী বছর সড়কে আমি তো বলবো বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ পর্য়ায়ে, আমি গর্ব করে বলবো, আমার মন্ত্রণালয়ে মেগা প্রকল্পগুলো আগামী বছর উদ্বোধন হবে। সেগুলো হলো- পদ্মা সেতু, এমআরটি লাইন ৬, মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল।‘’ আগামীতে চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে আরেকটি মেরিনড্রাইভ উদ্বোধন করা হবে বলেও এ সময় জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘ আগামী ২৪শে অক্টোবর পায়সা সেতুর উদ্বোধন হবে। আর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ভিত্তি প্রস্তর দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এত উন্নয়নমূলক কাজের পরও স্বস্তি পাচ্ছেন না বলে আলোচনায় জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এত কিছু করার পরও আমি স্বস্তি পাচ্ছি না। মন্ত্রণালয় নিয়মিত চালাচ্ছি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি। দশ বছর একাধারে আছি, এই মন্ত্রাণালয়ে কোন কমিশন, পার্সেটেজ, কোন প্রমোশন বাণিজ্য কখনও করিনি। আমার বিবেকের কাছে আমি পরিস্কার।
রাজনৈতিক তদবির বন্ধ করেছি
আলোচনায় তার মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবির বন্ধ করেছেন বলে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবির বন্ধ করে দিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্সফার, বিআরটিএ’র অফিসার ট্রান্সফার, এসব তদবির শুরুতে আমার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমি কঠোর হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন, সচিবরা আমার সঙ্গে ছিল, যে কারণে আমি এসব প্যাকটিস বন্ধ করতে পেরেছি।’ ‘মন্ত্রীকে কিছু দিয়ে চীফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার একটা প্রকটিস মন্ত্রণালয়ে আগে ছিল কিন্তু আমি আসার পর তা বন্ধ করেছি। সেই প্রেকটিস এখন আর নেই। আমাকে টাকা দিয়ে যদি চীফ ইঞ্জিনিয়ার হতে হয় ওই টাকা সে উঠাবে যখন দায়িত্ব পাবে। এটাই তো স্বাভাবিক।
বিআরটিএ’তে সর্ষের মধ্যে ভূত
নিজ বক্তব্যে টিআরটিএর’র দুর্নীতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন রাজনৈতিক তদবির হয় কারণ সবাই আসতে চায় মিরপুরে না হলে ইকিরিয়ায় (কেরানীগঞ্জ)। টাকার খনি আছে ওখানে। যেখানে গাড়ি বেশি সেখানে সবাই ট্রান্সফার হয়ে যেতে চায়। এসব অপকর্ম আমি বন্ধ করেছি।’
বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি বলবো, যা বন্ধ হয়নি সেটা বন্ধ করেন। এখনও বিআরটিএ অফিসগুলোতে সর্ষের মধ্যে ভূত। এই ভূত হলো দালাল। তিনি আরও বলেন, ‘ভেতরের আশ্রয়-প্রশয় না পেলে কিভাবে বাইরে থেকে তারা কিভাবে দৌরাত্ম করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে যে কোন মূল্যে। আমি কোন রাজনৈতিক সুবিধা কাউকে আমি অ্যলাউ করি না।’
বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘ বিআরটিএ’তে যে অপকর্ম যারা করে তাদের ভালো হয়ে যেতে বলুব চেয়ারম্যান সাহেব। এগুলো নিয়ে ডিসিপ্লিনারী এ্যাকশন নিন। ’
তার বক্তব্যের আগে হাইওয়ে পুলিশের আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম গত ৯ মাসের জরিমানার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। সে প্রসঙ্গ তুলে হাইওয়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘কতটাকা জরিমানা তুলেছেন, এটার হিসেব দিয়ে কোন লাভ নেই। এটা কোন বিষয় নয়। আমার কাছে বিষয় সড়ক নিরাপদ আছে কী না। গাড়িগুলো নিয়মমত চলছে কী না, গাড়ির ফিটনেস আছে কী না, চালকের ফিটনেস, গাড়ির চালক গাড়ি চালাবার যোগ্য কী না, গাড়ি ওভারলোডেড কী না, গাড়ি বেশি গতিতে চলছে কী না, এবার আমার কাছে বিষয়। আমি এটাই দেখবো। আমার কাছে বিষয় দুর্ঘটনা কমেছে কী না।’
দুর্ঘটনা অবিরাম দুর্ভাবনার কারণ হয়ে আছে উল্লেখ করে এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিদিনই ঘটছে। পাখির মত মানুষ মরে, মাছির মত মানুষ মরে। এ মর্মান্তিক দৃশ্যপট মানুষ হিসেবে সইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়।’
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: