Ad0111

নির্বাচন কমিশন আইনটি বাকশালের মতোই: মির্জা ফখরুল 

তিনি বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিনগুলোর মধ্যে সবচাইতে কলঙ্কযুক্ত একটি দিন।

নির্বাচন কমিশন আইনটি বাকশালের মতোই: মির্জা ফখরুল 
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নির্বাচন কমিশন(ইসি) আইনটি ‘বাকশালের মতোই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ এর প্রসঙ্গ টেনে আজ রোববার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগ করেন।

স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন বিএনপির জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বিএনপির উদ্যোগে বাকশাল দিবস উপলক্ষে ’২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ : বাকশাল’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে সারাদেশসহ বিভিন্ন দেশের দলের প্রবাসী নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। ভার্চুয়াল এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘১৯৭৫ :বাকশাল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং এই গ্রন্থটি দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানান। এই গ্রন্থটি প্রকাশক করেছে বিএনপি। গ্রন্থের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ এন্ড কমিউনিকেশন সেন্টারের পরিচালক সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সবিগত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে যে কাজটা ১৯৭৫ সালে করতে পারেনি, সেই কাজ করার জন্য তারা(সরকার) ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিয়ে নিয়ে এগিয়ে গেছে। একটা মোড়ক রেখেছে সামনে, একটা ছদ্মবেশ-অবয়ব-লেবাস যে বহুদলীয় গণতন্ত্র এখানে আছে। আসলে এখানে কোনো বহুদলীয় গণতন্ত্র নেই। একটা নির্বাচনের লেবাস, যে নির্বাচন তারা দুইটি ইতিমধ্যে করেছে যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগন তাদের ভোট দেয়ার অধিকার পর্যন্ত পায়নি এবং আবার একটা আইনও তৈরি করলো কয়েকদিন আগে। ঠিক সেই বাকশালের মতোই। যেটা ১১ মিনিটে ছিলো, এটা সাতদিনের মধ্যে একটা ফ্রাস্ট করে তারা একটা আইনও পাস করে নিলো সংসদে।

তিনি বলেন, বাকশাল একটি গালিতে পরিণত হয়েছে। কেনো? এই বাকশালের মধ্য দিয়ে সেদিন দেশে অর্থনীতিকে ধবংস করা হয়েছিলো, রাজনীতিকে ধবংস করা হয়েছিলো, স্বপ্নকে ধবংস করা হয়েছিলো। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে তারা দেশ ও জাতিকে গভীর অন্ধকারে ভেতরে নিয়ে গিয়েছিলো। আমরা আজকে ঠিক একইভাবে দেখছি আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে তারা দলীয়করণ করেছে, লুটতরাজের যে অর্থনীতি সেই অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, আমরা দেখছি যে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ডকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর হাতে দমন করে বিশেষ করে যারা স্বাধীন চেতা গণতান্ত্রিক মানুষ তাদেরকে হত্যা-গুমের মধ্য দিয়ে তাদেরকে ধবংস করে দেয়া হচ্ছে এবং প্রতিবাদের যে ভাষা সেই ভাষাকে বন্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন নির্বতনমূলক আইন তৈরি করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইন তৈরি করে যারা কথা বলতে চান তাদের কথা বলাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ৪৭ বছর পরে আবার বাকশাল প্রতিষ্ঠার যে নীল নকশা শুরু হয়েছে এই নীলনকশাকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে এবং সেটা আমাদের জনগনকে সঙ্গে নিয়েই। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে, বিএনপির নেতৃত্বে আমাদেরকে এই প্রতিবাদ এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ. একটা উন্নত বাংলাদেশ, একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখবার যে স্বপ্ন আমরা প্রতি মুহুর্ত দেখি সেই স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আজকে আমাদের সকলকেই ত্যাগ স্বীকার করে দৃঢ ঐক্যবদ্ধতার মধ্য দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রে নিয়ে এসে, সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একখানে নিয়ে এসে সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষকে একখানে নিয়ে এসে আজকে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী বাকশালের নব্য প্রেত্মাতার যে সরকার তাকে সরিয়ে জনগণের সত্যিকার অর্থেই একটা সরকার, জনপ্রতিনিধির পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা পরিস্কার করে বলেছি, আমরা অতিদ্রুত দাবি করেছি, সোচ্চার কন্ঠে বলছি যে, এই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নির্বাচনেরে মধ্য দিয়ে এদেশে আবার নতুন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন-সোপান আমরা নির্মাণ করতে পারি আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান সাহেবের নেতৃত্বে।


বিএনপির এই নেতা বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিনগুলোর মধ্যে সবচাইতে কলঙ্কযুক্ত একটি দিন। কারণ আমরা যুদ্ধ করেছিলাম স্বাধীন মুক্ত চিন্তার একটি সমাজ বিনির্মাণের জন্য। বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালেই শুধু এদেশের মানুষ যুদ্ধ করেননি। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এদেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ -এর স্বাধীনতার যুদ্ধ পর্যন্ত নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছে। বাকশাল ছিল সেই সংগ্রামী মানুষগুলোর সাথে একটি প্রতারণা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম সেটি শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডের জন্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য ও সমাজকে গণতান্ত্রিক করার জন্য। জনগণের সেই আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়ে ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল' প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ভয়াবহ কলঙ্কময় দিনটিকে স্মরণ করার জন্য ও সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি আজকে যে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
সভাপতির বক্তব্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র এক সাথে যায় না। ১৯৭২ থেকে ৭৫, ৭৫ এ বাকশাল প্রতিষ্ঠা এবং গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগের এই শাসন, বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকার, রাতে অন্ধাকারে ডাকাতির সরকার আজকে গায়ের জোরে বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। সেজন্য বাংলাদেশেও আজকে সেই বাকশালের চিন্তা চেতনা যেটা অলিখিতভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাই উপসংহার একটাই যে, এই আওয়ামী লীগ তখা এই সরকার আর গণতন্ত্র পাশাপাশি যেতে পারে না। তারা স্বৈরাচারী তারা গণতন্ত্র বিরোধী শক্তি। গণতন্ত্র নেই বলেই দেশ একটা অন্ধকারের গহবরের কিনায় পৌঁছেছে। এথেকে দেশকে রক্ষা করতে জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন সময় এসেছে দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারকে সরানোর।


স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপনে বিএনপির জাতীয় কমিটির  আহবায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং   সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news