অপহরণের পর শিশু নিবিড়কে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪

 অপহরণের পর শিশু নিবিড়কে হত্যা, গ্রেপ্তার ৪

প্রথম নিউজ, শরীয়তপুর : হৃদয় খান নিবিড়কে অপহরণের পর সে চিৎকার করলে পেছন থেকে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। হত্যা শেষে নিবিড়ের মায়ের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছিল অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বেলা ১২টায় পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন।

নিবিড় শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও গ্রামের মনির হোসেন খানের ছেলে ও শিশু কানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

পুলিশ সুপার বলেন, অপহৃত শিশুর দাদা মমিন আলী খান গতকাল সোমবার থানায় অভিযোগ করেন যে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার নাতি নিবিড়কে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্যপ্রযুক্তি ও সোর্সের সহায়তায় অপহরণের ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপহরণকারী চক্রের সদস্য ও শিশু নিবিড়ের মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে অপহরণকারী সদস্য সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অপহরণের কথা স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের আটক করতে সক্ষম হই।

তিনি আরও বলেন, গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় অপহৃত নিবিড়কে তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে কৌশলে খিলগাঁও এলাকার মেসার্স খান ব্রিকস সংলগ্ন আলী হোসেন খার বাড়ির পেছনের বাগানে নিয়ে যায়। কীর্তিনাশা নদীর পাড় সংলগ্ন ওই বাগান থেকে চলে আসার জন্য নিবিড় চিৎকার করলে সিয়াম, শাকিল ও তুহিন নিবিড়ের হাত-পা চেপে ধরে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মরদেহ মাটিচাপা দিয়ে পালিয়ে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৮ মিনিটে নিবিড়ের মা নিপা আক্তারের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায় তারা নিবিড়কে অপহরণ করেছে। তাকে তিন দিনের সময় দিয়ে বলা হয়, ১০ লাখ টাকা দিলে নিবিড়কে ছেড়ে দিবে তারা। সিয়ামের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শিশু হৃদয় খান নিবিড়ের মরদেহ আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কীর্তিনাশা নদীর পাড় সংলগ্ন ওই বাগান থেকে মাটিচাপা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মাহবুবুল আলম বলেন, নিবিড়কে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা জলিল গাজীর ছেলে শাকিল গাজী (১৮), আমির হোসেন গাজীর ছেলে তুহিন গাজী (১৫), অস্কার আলী চৌকিদারের ছেলে শাওন (২০) ও পাবনার ছব্বুর ওরফে সাইফুল সরদারের ছেলে সিয়াম (২০)। এদের মধ্যে সিয়াম অপহৃত শিশু হৃদয় খান নিবিড়ের বাড়ির ভাড়াটিয়া।

নিহত শিশু নিবিড়ের মামা ইকবাল খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সন্ধ্যার সময় আমার বোনের মোবাইলে অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল দিয়ে বলা হয় নিবিড়কে পেতে হলে মুক্তিপণ দিতে হবে। এরপর আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের চিহ্নিত করে মেসার্স খান ব্রিকসের পেছনের কীর্তিনাশা নদীর পাড় থেকে নিবিড়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যারা আমার ভাগনেকে মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই।

শিশু কানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অধ্যক্ষ বাদল কৃষ্ণ পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল নিবিড়ের মা এসে তাকে নিয়ে গেছেন। সন্ধ্যায় আমরা নিখোঁজ সংবাদ জানার পর তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সকালে জানতে পারলাম তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বলব কোনো স্কুলের বেঞ্চ যেন খালি না হয়, মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নিহত শিশু নিবিড়ের সহপাঠী আদিত্য ঢাকা পোস্টকে বলে, আমার পাশে বসে নিবিড় আর ক্লাসে করবে না। আমার অনেক ভালো বন্ধু ছিল সে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকত। কোনোদিন কারও সঙ্গে ঝগড়া করেনি। যারা আমার বন্ধুকে মেরেছে, তাদের ফাঁসি চাই।