প্রথম নিউজ, অনলাইন: কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে বিভিন্ন সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঢাকাসহ সারা দেশে ১১ দিনে ৯ হাজারের বেশি গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে শুধু শনিবারই (২৭ জুলাই) গ্রেফতার হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। দেশের ৫৬টি মহানগর ও জেলার পুলিশ সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন ৯ হাজার ১২১ জন। এর আগে গত শুক্রবার পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি গ্রেফতারের তথ্য ছিল। অবশ্য কিছু ব্যক্তিকে পুরোনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে, গ্রেফতার ব্যক্তিদের একটি বড় অংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা বেশি ঘটেছে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশে। রাজধানীর উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, বাড্ডা, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মিরপুর, আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ প্রায় পুরো রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। ঘটনার পর মামলা ও গ্রেফতারও বেশি হচ্ছে রাজধানী ও এর আশেপাশে। গত ২১ জুলাই রাত থেকে রাজধানীতে পুলিশ ও র্যাব চিরুনি অফিযান শুরু করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতার অভিযানে ‘ব্লক রেইড’ দেওয়া হচ্ছে। সহিংসতায় কারা জড়িত ছিলেন, তা বের করতে ভিডিও ফুটেজ ও ছবি বিশ্লেষণ করে তালিকাও করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) শনিবার বিকেলে জানায়, গতকাল পর্যন্ত রাজধানীতে ২০৭টি মামলায় মোট ২ হাজার ৫৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল গ্রেফতার হয়েছেন ২৫২ জন। অন্যদিকে র্যাব জানিয়েছে, নাশকতার অভিযোগে সাম্প্রতিক সময়ে তারা ২৯০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৭১ জন ও ঢাকার বাইরে ২১৯ জন।
ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারেও চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলায় শনিবার নতুন করে আরও ৪টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানায় মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪। এসব মামলায় ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয় এ পর্যন্ত।
রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরেও আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। নারায়ণগঞ্জে শুক্রবার রাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত আরও ৫১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সবশেষ শনিবার সেখানে আরও ২টি মামলা হয়েছে। কোটা আন্দোলন ঘিরে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ২৪টি মামলা হয়েছে। মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৮৭ জনকে। আরেকটি নতুন মামলা হয়েছে গাজীপুরেও। এ নিয়ে শনিবার পর্যন্ত গাজীপুরে মামলা হয়েছে ৩৭টি। মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৯৬ জনকে।কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে এ পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ৩০টি। এসব মামলায় ৮৮৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুরে মামলা এবং গ্রেফতার তুলনামূলক বেশি। রংপুরে শনিবার পর্যন্ত মোট ১২টি মামলায় ১৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজশাহীতে শনিবার পর্যন্ত মোট ১৭টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৪৫ জনকে। আর বগুড়ায় মোট ১৫টি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৯৬ জনকে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার এক বিবৃতিতে দাবি করেন, এখন পর্যন্ত তার দলের ৩৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা ও অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার সৃষ্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা-নির্যাতনের পর এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সাজানো মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী মতের নেতাদের হত্যা, গ্রেফতার, গুলি করে আদালতে ওঠানোর আগেই নির্যাতন করে পঙ্গু করা হচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে আবারও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
শনিবার মেট্রোরেলে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। এছাড়া রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে আগুন ও ভাঙচুরের মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এখনো মামলা হচ্ছে। তাল মিলিয়ে বাড়ছে গ্রেফতারের সংখ্যাও।