শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত হচ্ছেন নারী ফুটবলাররাই
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : মধ্যবিরতি চলছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের। ফেডারেশন কাপের পরের ম্যাচ আরো দুই মাস পর। মাঠে খেলা না থাকলেও দেশের ফুটবল এখন মিডিয়ায় সরগরম। আর সেই সরগরম নেতিবাচক খবর নিয়ে। ইংলিশ কোচ পিটার বাটলার ও বিদ্রোহী ১৮ নারী ফুটবলারদের নানা খবর এখন আলোচনার শীর্ষে। কোচ ও খেলোয়াড়দের পাল্লাপাটি বয়কটের ঘোষণার মধ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাপান প্রবাসী ফুটবলার মাতসুশিমা সুমাইয়ার উত্থাপন করা হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ। এ নিয়ে বুধবার তিনি মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।
পরিস্থিতি রীতিমতো ঘোলাটে। বাফুফে গঠিত বিশেষ কমিটির কাছে ১৮ ফুটবলার ও কোচ বক্তব্য দিয়ে তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকার কথা বলেছেন। ১৯ জনের সঙ্গে কথা বলার মধ্যে দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করেছে বিশেষ কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার তারা প্রতিবেদন জমা দেবে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে।
কী থাকছে সেই প্রতিবেদনে? বাফুফে আগে থেকেই বলে আসছে তারা শৃঙ্খলার বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না। কোচের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সরাসরি সেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন নারী ফুটবলাররা। কম যাননি কোচ পিটার বাটলারও।
কাঠমান্ডুতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন কয়েকজন মেয়ে যখন কোচের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন মিডিয়ায়, তখন পাল্টা ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন পিটারও। তদন্ত কমিটির গঠনের পরও গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কোচ ও নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ কয়েকজন।
বিশেষ কমিটি যখন তদন্ত কাজ গুছিয়ে আনতে শুরু করেছে, তখন বুধবারও গণমাধ্যমে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কোচ বাটলার। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বিদ্রোহী ফুটবলারদের বাফুফেতে থাকা ও খাওয়া নিয়েও খোটা দিয়েছেন। এসবই উঠে আসবে বিশেষ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে। এরই মধ্যে পিটারের দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষাৎকারের ভিডিও বাফুফে সংগ্রহ করেছে বলেও জানা গেছে।
৩ পৃষ্ঠার চিঠিতে স্বাক্ষর করা ১৮ ফুটবলারকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বিশেষ কমিটির সদস্যরা। তবে চিঠিতে যেভাবে অভিযোগ করেছেন তার সঙ্গে বক্তব্যের অসামাঞ্জস্য দেখেছে কমিটি। অনেক ফুটবলার কমিটির কাছে বলেছেন তারা চিঠি না পড়েই স্বাক্ষর করেছেন।
কোচের বিরুদ্ধে ১৮ ফুটবলার বিদ্রোহ করলেও এর নেতৃত্বে ছিলেন সিনিয়র ৭ জন ফুটবলার। অনেকে মনে করেন, তারাই হলেন নাটের গুরু। এই ৭ ফুটবলার হলেন- অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন, নিলুফার ইয়াসমীন নীলা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দা, সানজিদা আক্তার ও ফরোয়ার্ড কৃষ্ণা রানী সরকার।
কমিটি মনে করছে, এদের ইন্দনদাতা কেউ আছেন। তাকেও খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোন কোচের অনুশীলন তাদের পছন্দ এই প্রশ্ন করে মেয়েদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছিল কমিটি। তবে বেশিরভাগ ফুটবলারই বলেছেন, বাফুফের সাবেক টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির কথা। তার কাছেই নাকি তারা বেশি শিখেছেন।
ইংরেজিতে চিঠি কে লিখে দিয়েছেন? এই প্রশ্ন সব ফুটবলারকেই জিজ্ঞেস করেছেন কমিটির সদস্যরা। সবাই সুমাইয়ার কথা বলেছেন। জাপান প্রবাসী এই ফুটবলারও স্বীকার করেছেন তারই লেখা এই চিঠি। কমিটির সদস্যরা অবাক হয়েছেন মেয়েদের ইস্পাতকঠিন ঐক্য ও সিদ্ধান্ত দেখে। ফুটবলারদের তারা অনেক বুঝিয়েছেন ক্যারিয়ার ও দেশের ফুটবলের স্বার্থে অনুশীলনে যোগ দিতে। তবে তাদের এক কথা, এই কোচ থাকলে তারা বাসায় চলে যাবেন। এমনকি সভাপতি ডেকে কোনো অনুরোধ করলেও পিটারকে রাখা বাদে সব কথা মানবেন।
সাবিনারা বাফুেফে সভাপতির কাছে চিঠি লিখে পরদিনই একযোগে ভবন থেকে নিচে নেমে গণমাধ্যমকে তাদের আল্টিমেটাম জানিয়ে দেন।
সভাপতিকে চিঠি দেওয়ার পর কোনো উত্তর না জেনে কেন আল্টিমেটাম দেওয়া হলো? তাহলে সভাপতিকে চিঠি দেওয়ার অর্থ কী? তদন্ত কমিটির এমন প্রশ্নের জবাব দিতে বেশিরভাগই মাথা নিচু করেছিলেন এবং অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন।
তাহলে কি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া ফুটবলারদের বিপক্ষে কঠিন সিদ্ধান্তের সুপারিশ আসতে যাচ্ছে? এই জয়গায় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি কমিটি। কারণ, তারা চাইছে যাদের বয়স হয়েছে, পারফরম্যান্স অবনতির দিকে সুন্দরভাবে তাদের ক্যারিয়ার শেষ হোক।
কারণ, নারী ফুটবলে এই যে সাফল্য, তাতে এই ফুটবলারদের অবদান অস্বীকারের উপায় নেই। তবে শৃঙ্খলার বিষয়ে কোনো আপস না করলে কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হতে পারে।
তিন মাস আগে যে মেয়েদের সাফল্য উদ্ভাসিত করেছে দেশবাসীকে, সেই মেয়েরা এখন চরম বেকায়দায়। কোচেরও অনেক দোষ খুঁজে পেয়েছে কমিটি। তার বিষয়েও মতামত থাকবে প্রতিবেদনে। বিশেষ করে তদন্ত চলাকালীন বুধবার গণমাধ্যমে দেওয়া কোচের আপত্তিকর বক্তব্য ভালোভাবে নেননি তারা।
কমিটির কয়েকজনের সাথে আলাপে যেটা বোঝা গেছে, তারা বিষয়টির সুন্দর সমাধানের পক্ষে। সমস্যা দাঁড় করিয়েছে কোচ-খেলোয়াড়। কোনো পক্ষই এমন কোনো আভাস দেয়নি, যাতে সমঝোতামূলক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। দুই পক্ষই অটল নিজেদের অবস্থানে।
আজ বৃহস্পতিবার বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ভবনে আসবেন। নিজেদের প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণের আগে সভাপতির সঙ্গেও আলোচনা করে নিতে পারেন কমিটির সদস্যরা।