শত শত কোটি টাকার মালিক আ.লীগ নেতার দম্ভোক্তি, যা ইচ্ছে লিখে দেন
প্রথম নিউজ, অনলাইন : বুড়িচংয়ের ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল রব। সাবেক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মৃত আবদুল মতিন খসরুর ছত্রছায়ায় লেবার সর্দার থেকে হয়েছেন কোটিপতি। স্থানীয়রা বলছেন, একটা সময় নুন আনতে যার পানতা ফুরাত। কাজ করতেন বিদেশে লেবারের সর্দার হিসেবে। এখন আবদুল রব ৫০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। আপনি এত টাকার মালিক কীভাবে হলেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনার যা ইচ্ছে হেড লাইনে আমার নামে লিখে দেন।’
আব্দুল রব বিদেশে লেবারের সর্দার হিসেবে কাজ করতেন। স্ত্রী ও ছেলের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। বিগত পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ১৫ বছরে এ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। যাদের জমি দখল করছেন তাদের একজন পারুয়ারা গ্রামের মো. কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, আব্দুল রব আমার পরিবারকে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করেছেন। মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তার রাইস মিলের সঙ্গে থাকা আমার ৯৩ শতক জমি দখল করেছে। বিনিময়ে আমাকে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়েছে। অথচ আমার এই জমির মূল্য ১০ কোটি টাকা বেশি। নিজের জায়গায় আমাকে ব্যবসা করতে পর্যন্ত দেয়নি। ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আমার করা একটি ব্রিজ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভেঙে চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। ভুক্তভোগী আরেকজন আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, আব্দুল রব আমার জায়গায় ওপর রুবেল এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড গড়ে তুলেছেন। এর জন্য আমার কাছ থেকে ৪০ শতক এবং আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ১৫ শতক জমি নিয়েছেন। বিনিময়ে মাত্র ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। অথচ জমির মূল্য ২ কোটি টাকা বেশি। এছাড়াও পারুয়ারা আব্দুল মতিন খসরু কলেজ নামে জোরপূর্বক জমি দখল করেছেন।
পারুয়ারা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে ফারুক, শরীফ ইয়াছিন বলেন, আমার বাবার কাছ থেকে আব্দুল রব কলেজের নামে আমাদের ২০ শতক জায়গা দখল করছেন। নিজের প্রতিষ্ঠিত এতিমখানার নামে আব্দুল রব ২০টি মিল থেকে ৫০ কেজি করে চালের বস্তা নেন চাঁদা হিসাবে। পারুয়ারা গ্রামের স্বাধীন বাংলা রাইস মিলের মালিক কামাল হোসেন বলেন, আমাদের মিল থেকে প্রতি মাসে এতিমখানার নামে আব্দুল রব ৫০ কেজির চালের বস্তা নেন।
রাইস মিলের মালিক মো. মোসলেম উদ্দিন ইয়াছিন বলেন, আব্দুল রব আমার ২০ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করেছে, আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে, আমার জায়গার ওপর আমাকে ব্যবসা করতে দেয়নি। আমার ৫০ শতক জমি দখল করছে। তার অপকর্মের যেন শেষ নেই, কুমিল্লার কংশনগর এলাকা দিয়ে গোমতী নদী থেকে মাটি কেটেছেন নিজের ইটের ভাটার জন্য। এর জন্য তৎকালীন পতিত সরকারের আমলে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রতি মাসে মাসোহারা দিতেন। এভাবেই ক্ষমতায় অপব্যবহার করে কামিয়েছেন কোটি কোটি সম্পদ। যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে আব্দুল রবের ১০০ কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও স্থানীয়রা বলছেন আবদুল রব ৫০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক।
জানা গেছে, আব্দুল রব ২০১২ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর প্রথমে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সদস্য হন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মৃত আবদুল মতিন খসরুর ছত্রছায়ায় ২০১৭ সালে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে হন ভারেল্লা উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাবেক আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মৃত আবদুল মতিন খসরুর ছত্রছায়ায় দুর্নীতি-অনিয়ম, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, ঘুস লেনদেন, জমি দখল করার মধ্য দিয়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। বর্তমানে তার মেসার্স রুবেল এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামে একট রাইস মিল এবং মেসার্স গোমতী ব্রিকস নামে একটি ইটের ভাটা রয়েছে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গোমাতী টাওয়ারে দুটি দোকান, কুমিল্লা আদালতপাড়ায় একটি বাড়ি। তার অত্যাচর, অবিচার থেকে বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি এলাকার নিরীহ মানুষও রেহাই পাননি।
এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে আব্দুল বরকে ফোন করলে তিনি বিরক্ত না করার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনার যা ইচ্ছে হেড লাইনে আমার নামে লিখে দেন।’ শতকোটি টাকার মালিক কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এত টাকার মালিক নই, সব কিছু মিলিয়ে ৩০ কোটি টাকা হবে। ব্যাংক থেকে ১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলাম, এখনো ৫ কোটি টাকা পাওনা আছে। তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তিনি অস্বীকারও করেন।