‘টিকে থাকা কঠিন’ বলছেন ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা জানান পোশাক খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

‘টিকে থাকা কঠিন’ বলছেন ব্যবসায়ীরা
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। সঙ্গে বাড়বে পরিবহন ব্যয়ও। ফলে বাড়তি দামে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। বড় ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের পোশাক খাত।

রোববার (৫ জুন) বিকেলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা জানান পোশাক খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম মান্নান কচি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে দেশের তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, কিছুদিন আগে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন ছিল, নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানো না হয়। কারণ এখন গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হব।

কচি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে আমাদের সক্ষমতার জায়গাটা অনেক কমে যাবে। উল্টো সুবিধা নেবে প্রতিযোগী দেশগুলো। কারণ তাদের সক্ষমতা বেড়ে যাবে। ফলে তাদের সঙ্গে পণ্য রপ্তানিতে টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। বিশ্ব অর্থনীতির চলমান এ সংকটের মধ্যে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জন্য সরকারে কাছে আমরা আবেদন করব। আমরা চাই দাম আগের মতো যেন থাকে। শিগগিরই অফিসিয়ালি পুনরায় প্রস্তাব দেওয়া হবে।

দাম বাড়লে খরচ বাড়বে— এটাই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন পোশাক খাতের আরেকটি সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, শিল্প উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎ-ক্যাপটিভের গ্যাসের দাম ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। বৃহৎ শিল্পে প্রতি ইউনিটের নতুন দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে করা হয়েছে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। যেটা বেড়েছে আপাতত দৃষ্টিতে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

‘তবে বাস্তবায়নের তারিখ জুন থেকে না দিয়ে আগামী ছয় মাস পর দিলে ভালো হতো। কারণ আমাদের কাছে আগামী ছয় মাসের কাজের অর্ডার চলে এসেছে। এখন অর্ডারগুলো বাস্তবায়নে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বাড়তি মূল্য তো ধরা হয়নি।
 
রোববার বিকেলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক আবাসিক ও শিল্প খাতে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, আবাসিকে এক চুলার বর্তমান দাম ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা, সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দর ঘনমিটারপ্রতি ৪ দশমিক ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। সিএনজির দাম ৪৩ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে।

সার উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ২৫৯ শতাংশ, বৃহৎ শিল্পে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। গড়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পুনর্নির্ধারণের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন প্রস্তাবনা আসে। ২১ থেকে ২৪ মার্চ শুনানি গ্রহণ করা হয়। ৭ এপ্রিল পর্যন্ত শুনানি-পরবর্তী লিখিত মন্তব্য নেওয়া হয়। শুনানি পর্যালোচনা করে আইন অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে।

 সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুতের ট্যারিফ ৪ দশমিক ৪৫ থেকে ৫ দশমিক ০২ পয়সা হলে এর দাম সহনীয় পর্যায়ে বাড়বে। এটা সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ হবে। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। তবে সরকারের নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েনি।  এফবিসিসিআই ও বিকেএমইএ দাম বাড়ানোর পক্ষে আছে। তবে এটা যেন এক্সপোর্টের ওপর প্রভাব না ফেলে। আমরা সরকারের সঙ্গে নানাবিধ পর্যালোচনা করে ভোক্তার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি পর্যায়ে ট্যারিফ দিয়েছি— বলেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। 

গ্যাসের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলা বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে। ফলে স্পট মার্কেট থেকে চড়া দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এজন্য ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। তবে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দেয় গণশুনানিতে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom