Ad0111

আপিল শুনানিতে উঠছে ‘হেভিওয়েট’ ৫ মামলা

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অনেক আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। আপিল বিভাগে বিচারপতি সংকট ও করোনার কারণে এসব মামলার শুনানি থমকে ছিল।

আপিল শুনানিতে উঠছে ‘হেভিওয়েট’ ৫ মামলা
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অনেক আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। আপিল বিভাগে বিচারপতি সংকট ও করোনার কারণে এসব মামলার শুনানি থমকে ছিল। সম্প্রতি আপিল বিভাগে চারজন বিচারপতি নিয়োগের পর বিচারপতি সংকট কেটে গেছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আশা করি প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগে অচিরেই দুটি বেঞ্চ গঠন করবেন। দুটি বেঞ্চ হলেই আমরা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত শুনানি করতে পারব।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপিল বিভাগে আমরা যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলো শুনানির জন্য উপস্থাপন করব। পিলখানা হত্যাসহ সব চাঞ্চল্যকর মামলা শুনানির জন্য উপস্থাপন করব।

পিলখানা হত্যা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মামলাটা হাইকোর্টে দীর্ঘদিন ধরে শুনানি হয়েছে। এটার সঙ্গে অনেকে সম্পৃক্ত। এত আপিলকারীর আপিল তো দীর্ঘদিন ধরে শুনতে হবে। বেশ সময় লাগবে। এ কারণে একটা কোর্টকে অ্যাসাইন (নির্ধারণ) করে দিতে হবে। আশা করা যায় এখন চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর শুনানি হবে।

বহুল আলোচিত রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রায় কার্যকর করতে চূড়ান্ত আপিল শুনানির অপেক্ষা করতে হচ্ছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস চেয়ে করা আপিল এবং মৃত্যুদণ্ড বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল এখন সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের মামলায় নিম্ন আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ জনের মধ্যে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বড় এ মামলার ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ হয়।

রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন আদালত। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নেতা তোরাব আলীসহ ১২ জনকে খালাস দেন আদালত।   

আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৪৯ আসামির পক্ষে আপিল দায়ের করেছি। আমরা আপিল বিভাগে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরব। আশা করি আপিল বিভাগে ন্যায় বিচার পাব। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের হাতে  ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউ মার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। বিচারকার্য পরিচালিত হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন আলিয়া মাদরাসা মাঠের অস্থায়ী এজলাসে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউ শুনানিতে তার চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। পরে ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে আবেদন করেন এ টি এম আজহার।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রিভিউ আবেদনও শুনানির অপেক্ষায় আছে। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডসহ ২২ বছরের দণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- ২। আপিলের পর ২০২০ সালে ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সৈয়দ কায়সারের তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। পরে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন মানবতাবিরোধী অপরাধী জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।

দেশ কাঁপিয়ে দেওয়া  সাত খুন মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। মামলা আপিল বিভাগে ঝুলে থাকায় আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করা যাচ্ছে না। ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট সাত খুন মামলায় কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।

২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর এই মামলার প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেই আপিল এখনও বিচারাধীন। আসামিপক্ষের আইনজীবী এফ আর এম লুৎফর রহমান আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা তো অনেক বড় মামলা। আমরা আপিল বিভাগে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ সংক্রান্ত যুক্তিগুলো তুলে ধরব। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করি।

২০১৭ সালের ২২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া নিম্ন আদালতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত নয়জনের দণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি মরদেহ। পরদিন মেলে আরেকটি মরদেহ। নিহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। মামলার বাদী হন চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ওই দুই মামলার রায় দেন। রায়ে র‍্যাবের সাবেক ১৬ কর্মকর্তা-সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তার অপরাধজগতের নয় সহযোগীসহ মোট ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এছাড়া র‍্যাবের আরও নয় সাবেক কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা: বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলাও আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দিনে-দুপুরে খুন হন দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস। অনেক টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার সামনেই ওই ঘটনা ঘটে। নির্মম ওই হত্যার দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনার এক বছর পর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় ঘোষণা করেন। ২১ আসামির মধ্যে আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়। ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। চারজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও দুজনকে খালাস দেন। এছাড়া বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আপিলকারী দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news