কারাগারে গিয়েও বাড়ছে ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা
কারাগারে গিয়েও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন লোকজনদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সড়ক-মহাসড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি কিংবা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারের হয় অনেকেই। জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও একই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে এসব চক্রের সদস্য। কারাগারে গিয়েও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন লোকজনদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই।
মহাসড়কগুলোতে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি টার্গেট করে ডাকাতি করে আসছিল একটি চক্র। ডাকাতির কৌশল হিসেবে বিভিন্ন মহাসড়কের নির্জন স্থানে রাতের আঁধারে তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন বাস কিংবা রাস্তায় গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি থামিয়ে এ ধরনের অপতৎপরতা চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি মহাসড়কগুলোয় ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকটি চক্রকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে র্যাব।
র্যাব বলছে, তারা মনে করে এটি একটি লাভজনক পেশা। তারা এমনভাবে যুক্ত হয়ে যায়, পরে তারা যখন জেলে থাকে, তখন বিভিন্ন ডাকাত দলের চক্রের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ চক্রগুলো যখন ডাকাতির পরিকল্পনা করে, অন্য চক্রের সদস্যদেরও তারা তথ্য দেয়; যাদের সঙ্গে তাদের জেলে পরিচয় হয়। জামিনে বের হয়ে এসে তারা পুনরায় একই কাজে যুক্ত হয়। অনেক সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে চক্রগুলো। বিভিন্নভাবে তারা এসব পেশায় জড়িয়ে পড়ছে।
ডাকাতির ঘটনায় সারাদেশেই মামলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অনেককেই গ্রেফতার করে থাকে। পরে বিচারিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা জামিনে বের হয়ে আসে। প্রতিটি ডাকাত দলের ১৫ থেকে ২০ জন করে সদস্য থাকে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে, বিভিন্ন পেশার আড়ালে ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতির কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন পরিবহনের চালক-সহকারী থেকে শুরু করে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ছে চা দোকানদার, রিকশাচালক, অটো রিকশাচালক, বিভিন্ন গার্মেন্টসে কর্মরত শ্রমিক ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাও।
রাজধানীর আশপাশ এলাকাগুলোয় গার্মেন্টসের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডাকাত দলের সদস্যরা আগে থেকে রেকি করে গার্মেন্টসের পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করে রাস্তায় গতিরোধ করে ডাকাতি করে আসছিল। তারা বিভিন্ন সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে সক্ষম হয়েছিল। আর সে কারণেই তাদের দৌরাত্ম্য থেমে থাকেনি। এ ছাড়া এসব ডাকাত দলের সদস্যরা মাদক চোরাচালানেও জড়িত। ডাকাত দলের প্রত্যেক সদস্য ডাকাতি করার সময় একেকজন একেক দায়িত্বে থাকে। ডাকাতি শেষ হলে তারা তাদের নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগি করে সটকে পড়ে।
অভিযান-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কে ডাকাতি বর্তমানে একটি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের ডাকাতির ঘটনায় দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এড়াতে পারে না। এ ছাড়া রাতের বেলায় গাড়িগুলোতে সহকারী-সুপারভাইজাররা বিভিন্ন রাস্তা থেকে বিভিন্ন যাত্রী ওঠাচ্ছে। পরে সেই বাসটি ডাকাতির সম্মুখীন হচ্ছে। ডাকাতি করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ঘটছে প্রাণহানি ও ধর্ষণের মতো ঘটনাও। সম্প্রতি টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি করতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বাসের মালিক, চালক, সুপারভাইজার, সহকারীসহ সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। সুনির্দিষ্ট একটি পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে র্য্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সমাজের সব অংশীজনকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সবাইকে এক হয়ে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যেতে হবে। অনেক ডাকাত সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
র্যাবের হাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অপরাধমূলক কিংবা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অনেক সদস্য রয়েছে। যাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪০০-এর বেশি ডাকাত সদস্য সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews