খুলনায় ৫ নদীর পানি বিপদসীমার উপরে
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী খুলনা অঞ্চলের বেতনা খোলপেটুয়া, রূপসা, পশুর, শিবসা, ইছামতী নদীর আটটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রথম নিউজ, খুলনা: পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীতে জোয়ারের চাপ বেড়েছে। এর ফলে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী খুলনা অঞ্চলের বেতনা খোলপেটুয়া, রূপসা, পশুর, শিবসা, ইছামতী নদীর আটটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে কপোতাক্ষ, শিবসা, পশুর নদীসহ বিভিন্ন নদীর তীরে ভাঙন, তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নিমজ্জিত হচ্ছে। এছাড়াও নদীর তীরে চর এলাকায় বসবাসকারীদের ঘর-বাড়িতে পানি উঠে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। নদীতে প্রবল পানি বৃদ্ধির কারণে ৩১ নং পোল্ডারে বেড়িবাঁধ ভাঙার আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী। এদিকে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া বাজার সংলগ্ন রাস্তাসহ কয়েকটি স্থানে নদীর তীরবর্তী এলাকায় নদীভাঙনে বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিনে ভারী বৃষ্টিতে ও এলাকায় বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির কারণে ভদ্রা নদীর তীরে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া বাজার সংলগ্ন ওয়াবদার রাস্তায় ভাঙন দেখা যায়। এলাকার মানুষের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে কোনো সময় ওয়াবদার রাস্তা ভেঙে ভিতরে পানি প্রবেশ করে এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমির চলতি মওসুমের আমন ধানের বীজতলা তোলানোসহ পুকুরের মাছ ভেসে যেতে পারে এবং এলাকার মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ইউপি গাজী জালাল উদ্দীন জানান। তিনি আরও জানান, বিষয়টি তৎক্ষণাৎ দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খানসহ নির্বাহী অফিসার জয়দেব চক্রবর্তীকে মুঠোফোনে জনানো হয়েছে। নির্বাহী অফিসার অফিসিয়াল কাজে বাহিরে যাওয়ার কারণে, ভাঙন এলাকা আগামীকাল পরিদর্শন করবেন উপজেলা চেয়ারম্যান বলে জানা যায়।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়দেব চক্রবর্তী এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বললেন আমি খবর পেয়েছি, অফিসিয়াল কাজে ঢাকার উদ্দেশ্য যাওয়ার কারণে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীসহ ডিজি মহোদয়কে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হয়েছে। আশাকরি উনারা তাড়াতাড়ি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অপরদিকে জোয়ারে হঠাৎ করে নদী-খালের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পোদ্দারগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চুনকুড়ি, পশুর নদীর তীরে থাকা ঘাট এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা কার্তিক চক্রবর্তী, মিঠুন চক্রবর্তী, উৎপল রায়, সাধন রায়, ঠাকুর দাস হালদার বলেন, চুনকুড়ি নদীতে প্রবল পানি বৃদ্ধির কারণে ঘরের মধ্যেও পানি উঠে গেছে। ছাগল ও গবাদি পশু নিয়ে তারা বিপদে পড়ে গেছে। আর পানি ওঠায় রান্না-বান্না বন্ধ রয়েছে তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বেতনা খোলপেটুয়া, রূপসা, পশুর, শিবসা, ইছামতী নদীর আটটি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে কপোতাক্ষ, শিবসা, পশুর নদীসহ বিভিন্ন নদীর তীরে ভাঙন, তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নিমজ্জিত হচ্ছে।
সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ অন্যান্য স্পট ও বনের অভ্যন্তরে ২-৩ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের জোয়ারে করমজল পর্যটন কেন্দ্র ৩ ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে এ বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির, হরিণ, কচ্ছপ ও বানরসহ অন্যান্য প্রাণীর তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বনবিভাগ। তবে করমজলে পানি বাড়লেও তাতে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি পর্যটকদেরও। বরং পর্যটকেরা জোয়ার পানিতে ভিজে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করেছেন বলে জানায় বন কর্মকর্তা আজাদ কবির।
সুন্দরবন পূর্ব-বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, লঘুচাপ ও চলতি পূর্ণিমার গোনের প্রভাবে করমজলে স্বাভাবিকের তুলনায় ২/৩ ফুট জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পানিতে ভিজে ছুটির দিনে আগত দর্শনার্থীরা বাড়তি আনন্দ উপভোগ করেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার সহকারী প্রকৌশলী মধুসূদন মল্লিক বলেন, ‘খুলনার নদ-নদীতে পানির চাপ বেশি রয়েছে। জেলার চারটি পয়েন্টে নিয়মিত পানির চাপ মাপা হয়। গত তিনদিন প্রতিটি পয়েন্টেই বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘পূর্ণিমার প্রভাবে গত তিনদিন ধরে নদ-নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার কিছু নদীতে পানির চাপ সামান্য কমেছে।’
খুলনায় মধ্য আশ্বিনে শ্রাবণের বারিধারা ঝরছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কখনও ভারী, কখনও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী। মঙ্গলবার দিনভর আকাশ কালো মেঘে ঢেকে আছে। দেখা মেলেনি সূর্যের। বর্ষণে মহানগরীর বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় লোকজনের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম। টানা বৃষ্টিতে রিকশাচালকসহ দিনমজুররা কষ্টে দিন পার করছেন।