প্রথম নিউজ, অনলাইন: পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে কুক্ষিগত করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আখড়া বানিয়েছে, তেমনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কতিপয় বিতর্কিত মানুষদের কারণে দেশের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবিচার ও বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত। মঙ্গলবার (১ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তৃতায় ইসতিয়াক আজিজ উলফাত বলেন, ১৯৭২ সালের মে মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন হিসেবে 'বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ' প্রতিষ্ঠা হয়েছিল- যার উদ্দেশ্য ছিল দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি, তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মর্যাদা রক্ষা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনা ধারণ। তাছাড়া, মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তা ছড়িয়ে দেওয়া। স্বাধীনতা বিরোধীদের চিহ্নিতকরণও একটি অন্যতম কাজ। সাংগঠনিকভাবে এর কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও উপজেলা'সহ নানা স্তরের কমিটি থাকবে। এর প্রধান নির্বাহীকে চেয়ারম্যান বলা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে। এটি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন এবং পরবর্তী সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে এটি চালিত হয়।
তিনি বলেন, এটি শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি চেতনার প্রতীক। স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ও জীবন বাজি রেখে লড়াই করা বীরদের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষায় এক সংগ্রামী ছায়া- যেটি আজও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নৈতিক দায়বদ্ধতার স্মারক। অথচ শেখ হাসিনা যেমন এটিকে কুক্ষিগত করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আখড়া বানিয়েছে, তেমনি এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে কতিপয় বিতর্কিত মানুষদের কারণে দেশের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবিচার ও বৈষম্য করে যাচ্ছে।
বিএনপি করে এমন কেউ এই সংসদের সদস্য হতে পারবে না এমনতো কোন আইন নেই। কিন্তু তারা বর্তমান সময়ে যেভাবে নতুন সদস্য ও কমিটিগুলো করেছে, তাতে মনে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু বিএনপি করে এমন কেউ সদস্য হতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) ডাকেই সেইদিন জাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। যিনি রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে জাতিকে নানা রকম বৈষম্য থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। স্বনির্ভর করেছিলেন এই জাতিকে। তার আদর্শিক দলের সদস্যরা 'বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের' সদস্য হতে বাধার সম্মুখীন হবেন; তা জাতি কি কখনও আশা করেছিল? এর চেয়ে বৈষম্য আর কি হতে পারে! অথচ দু'চারজন ব্যতীত বর্তমান কমিটির অধিকাংশই আওয়ামী দোসর। যারা গত সাড়ে ১৫ বছরে একবারও ফ্যাসিস্টদের নেক্কারজনক অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনি। কিংবা আমি ব্যাক্তিগতভাবে দু-একজনের কাছে গিয়েছিলাম ফ্যাসিস্ট হাসিনার কিছু নির্দিষ্ট জুলুমের বিরুদ্ধে যাতে তারা কথা বলেন কিংবা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্টেটমেন্ট দেন। তারা তখন দেননি এবং এমন প্রতিবাদ থেকে দূরে থাকার জন্য আমাকে পরামর্শ দেন। এমন চরম বিতর্কিত লোকদের নিয়ে গঠিত কমিটি আমরা মানিনা, মানবোনা। কেননা এমন কমিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম এই রাষ্ট্রের সাথে দ্বিমাতাসুলভ আচরণ ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, যুদ্ধকালীন কমান্ডার শহীদ বাবলু, মো. মোবারক, শরীফ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার
প্রমুখ।