জাবিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশে কাঁটা হলো অর্ধশতাধিক গাছ, জানে না প্রশাসন

জাবিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশে কাঁটা হলো অর্ধশতাধিক গাছ, জানে না প্রশাসন

প্রথম নিউজ, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের জন্য অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। অনুষদের শিক্ষার্থীদের নির্দেশে গাছ কাঁটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। সোমবার (৩০ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনের এক্সকাভেটর (মাটি খননের যন্ত্র) দিয়ে গাছ উপড়ে ফেলা শুরু হয়। এ সময় সেখানে ভবন নির্মাণের সমর্থক গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে গাছ কাটার খবর পেয়ে সেখানে যান ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, ছাত্র ফ্রন্ট ও সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা। তাঁরা গাছ কাটার প্রতিবাদ জানান।

পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ও অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নাসির উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষক ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, ‘কার অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না। পরে উপাচার্যের নির্দেশে গাছ উপড়ে ফেলা বন্ধ করা হয়। এর আগেই অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে ফেলা হয়।’
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল যাঁরা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের টেন্ডার পাবেন, তাঁদের পরামর্শক্রমে জায়গা নির্ধারণ করে ভবন নির্মাণ করা হবে। কারণ, ভবন দরকার, সঙ্গে পরিবেশও রক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে গাছ উপড়ে ফেলা হলো। বিষয়টা জানার জন্য আজ প্রশাসনিক সভা করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সামনে ভবন নির্মাণের জন্য টিনের বেড়া দিয়ে গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন না করে ভবন নির্মাণে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে বিষয়টি স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি উপাচার্য শিক্ষার্থীদের জানিয়েছিলেন, মাস্টারপ্ল্যান দরপত্র আহ্বান করা হবে। তাঁদের পরামর্শক্রমে ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারিত হবে। তখন গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ভবন নির্মাণ করা হবে। তবে এর আগেই ওই অনুষদের শিক্ষার্থীদের নির্দেশে গাছগুলো উপড়ে ফেলা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রুম্মান (গণিত বিভাগ ছাত্র সংসদের ভিপি) আমাকে ফোন করে জানান, সব ঝামেলা মিটে গেছে, আপনি লোকবল পাঠিয়ে কাজ শুরু করেন। সে অনুযায়ী আজ আমি লোকবল পাঠিয়েছিলাম। সেখানে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল। তারা যেভাবে করতে বলেছেন, সেভাবে করছি।’ শিক্ষক বা উপাচার্যের সঙ্গে কথা না বলে সেখানে কাজ শুরু করা তাঁদের ঠিক হয়নি বলে স্বীকার করেন আবদুল আজিজ।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রুম্মান বলেন, ‘আমরা প্রথমত গাছ কাটার বিপক্ষে। তবে আমাদের বিভাগের শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব–সংকট, শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই, আমাদের চলাচলেরও জায়গা নেই। আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল রাখতে ভবন দরকার। সেই জায়গা থেকে পরিবেশের ন্যূনতম ক্ষতি করে হলেও আমাদের ভবন দরকার। তবে প্রশাসন কোনো তৎপরতা দেখায়নি।’