আমরাও যেন সাদেক কুরাইশীর মতো হতে পারি : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
প্রথম নিউজ, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশীর জানাজায় অংশ নিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, একজন আদর্শবান রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হারালাম। সাদেক কুরাইশী একজন সৎ, নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ও নেতা ছিলেন। আমরা যারা আছি তারা যেন তার মতো আদর্শবান হতে পারি আল্লাহ সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন, আমীন।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১২টায় ঠাকুরগাঁও ইসলাম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সাদেক কুরাইশীর জানাজার আগে তিনি এসব বলেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন তিনি (মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশী)। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গভীর শোক জানিয়েছেন। আমরাও সকলে গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার জন্য দোয়া করবো আল্লাহ তাকে যেন জান্নাতবাসী করেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়সহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী শোক প্রকাশ করেন।
এছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। তার জানাজার নামাজে হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের মাঠ।
সাদেক কুরাইশী গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একের পর এক মহাসমাবেশ, জনসভা, পথযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে। বিশেষ করে বিএনপি তাদের হারানো সক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
আগামী ২৮ অক্টোবর মহাযাত্রার ডাক দিয়েছে দলটি। সেদিন রাজধানীতে বিএনপি ‘একটা অঘটন’ ঘটাতে পারে। তবে, বিএনপি কী ঘটাবে তা না বললেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেবে বলে জানিয়েছে। তাদের ভাষায়, ‘রোগ বুঝে ওষুধ’ দেবে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপি ঘোষিত মহাযাত্রায় অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘যেভাবে বসে যাবে সেভাবেই উঠিয়ে দেওয়া হবে। কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের চেষ্টা করলে তাদের রুখে দেওয়া হবে। তাদের বসার সুযোগ দেওয়া হবে না, তারা বসতেই পারবে না। ধ্বংসাত্মক কিছু করার চেষ্টা করলে, দাঙ্গা-হামলা বা লুটপাট করার পাঁয়তারা করলে আমরা সেখানেই তাদের প্রতিরোধ করব।’
২৮ অক্টোবর মহাযাত্রার ডাক দিয়েছে বিএনপি। সেদিন রাজধানীতে ‘একটা অঘটন’ ঘটাতে পারে। তবে, বিএনপি কী ঘটাবে তা না বললেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেবে বলে জানিয়েছে। তাদের ভাষায়, ‘রোগ বুঝে ওষুধ’ দেবে ক্ষমতাসীনরা
‘যেখানে যে ওষুধ দরকার, সেখানে সেই ওষুধ দেওয়া হবে। ২৮ অক্টোবর কিছুই হবে না। আমরা আগেও বলেছি, এখন নতুন করে বললাম। তারা অনেক কথা বলেছে, অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে। কী হয়েছে? কিছু কি হয়েছে? এবারও কিছু হবে না। আবারও বলছি, উচ্ছৃঙ্খল করার চেষ্টা করলে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর, বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন ছিল। ওই দিন রাজধানীতে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এবার সেই দিনটিকে টার্গেট করে ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে ‘মহাযাত্রা’ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এ কর্মসূচি ‘ক্ষমতাসীনদের মরণকামড় দেওয়ার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি’ বলে দলটির একাধিক সূত্র দাবি করলেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর আমরা শুধু মহাযাত্রা করব। এজন্য ডিএমপি কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়ে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।’
বিএনপির ‘মহাযাত্রা’ কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রাজধানী ঢাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে। ওই দিন রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে তারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করবে।
যেখানে যে ওষুধ দরকার, সেখানে সেই ওষুধ দেওয়া হবে। ২৮ অক্টোবর কিছুই হবে না। আমরা আগেও বলেছি, এখন নতুন করে বললাম। তারা অনেক কথা বলেছে, অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে। কী হয়েছে? কিছু কি হয়েছে? এবারও কিছু হবে না। আবারও বলছি, উচ্ছৃঙ্খল করার চেষ্টা করলে যথাযথ জবাব দেওয়া হবে
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা শান্তির সমাবেশ করব। ওই দিন বিএনপির মহাযাত্রা নয়, মরণ কামড়ও নয়; এটা তাদের পতনযাত্রা হবে। তারা সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। সেখানে তাদের অবস্থান করার কোনো সুযোগ নেই। আইনের ব্যত্যয় ঘটালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নেবে। যদি তারা বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে আওয়ামী লীগও
আওয়ামী লীগ সূত্র মতে, ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকাকে নিজেদের দখলে রাখতে বুধবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা, ঢাকা জেলা শাখা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) মতবিনিময় সভা করবেন। বিকাল ৩টায় তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এটি অনুষ্ঠিত হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘২৮ অক্টোবর আমাদের শান্তির সমাবেশ হবে। সেদিন বিএনপি কোথাও বসলে সেটি দেখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’
‘বিএনপি হলো সন্ত্রাসী সংগঠন। তারেক জিয়া তাদের নেতা। তারেক জিয়ার নির্দেশে তারা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। তারা যাতে সেটি করতে না পারে, সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাতে না পারে, সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘ্নিত করতে না পারে, অগ্নিসন্ত্রাস করতে না পারে, পেট্রোল বোমা, গানপাউডার দিয়ে ঢাকা শহরকে যাতে অস্থিতিশীল করতে না পারে, এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের প্রতিহত করব।’
আমরা শান্তির সমাবেশ করব। ওই দিন বিএনপির মহাযাত্রা নয়, মরণ কামড়ও নয়; এটা তাদের পতনযাত্রা হবে। তারা সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। সেখানে তাদের অবস্থান করার কোনো সুযোগ নেই। আইনের ব্যত্যয় ঘটালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ নেবে। যদি তারা বেশি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ততই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। অতীতের মতো সংঘাত-সহিংসতা ও রক্তপাতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারি দল ও বিরোধী দলগুলো নিজেদের শক্তি পরীক্ষায় রাজপথ উত্তপ্ত করে তুলবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কূটনীতিক নানা হিসাবনিকাশ। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের ঠিক আগে বিরোধীরা তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে চাইছেন। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের শেষ বেলায় এসে তারা ঢাকায় বসে পড়ার পরিকল্পনা করছেন। হেফাজত স্টাইলে মতিঝিলের মতো রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া থাকবে জামায়াত। তাদের সঙ্গে চরমোনাই ও খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা যোগ দিতে পারেন।
বিরোধীদের এমন কর্মসূচি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি শুধু মহাযাত্রা করে চলে যাবে, এটি আমাদের ভাবনায় নেই। আমাদের কাছে তথ্য আছে, অক্টোবর ও নভেম্বরকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের কিছু নেতাকর্মী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা মিটিং-মিছিল করছেন। কর্মসূচি পালনের নামে ঢাকায় তারা ভিড় জমাচ্ছেন। এগুলো আমাদের নজরে আছে। ২০১৩-১৪ সালের সেই রূপ আবারও ফিরিয়ে আনতে চায় বিএনপি। আমরা প্রস্তুত, আমাদের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুত আছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে আরও জানা যায়, আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন বিকেলে আনোয়ারায় বিশাল এক জনসভা করবে দলটি। তবে, বিএনপির মহাযাত্রাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা সেদিন ঢাকায় অবস্থান করবেন। অনেকে আবার বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন শেষে ঢাকায় ফিরে আসবেন।
সরকারি দল ও বিরোধী দলগুলো নিজেদের শক্তি পরীক্ষায় রাজপথ উত্তপ্ত করে তুলবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কূটনীতিক নানা হিসাবনিকাশ। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের ঠিক আগে বিরোধীরা তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে চাইছেন। এ লক্ষ্যে অক্টোবরের শেষ বেলায় এসে তারা ঢাকায় বসে পড়ার পরিকল্পনা করছেন। হেফাজত স্টাইলে মতিঝিলের মতো রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া থাকবে জামায়াত। তাদের সঙ্গে চরমোনাই ও খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা যোগ দিতে পারেন
চট্টগ্রামে ওই দিন (২৮ অক্টোবর) গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি থাকলেও রাজধানী ঢাকায় কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে নিয়ে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানে অংশ নেবেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের নেতাকর্মীরাও ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৫ অক্টোবর আমাদের একটা প্রতিনিধি সভা আছে। সেদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি নিয়ে আমাদের বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দেবেন। আমরা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করব। এজন্য আমরা আমাদের প্রস্তুতি শেষ করেছি।