অষ্টগ্রামে বিএনপির মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, আহত ৩০

শনিবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলা সদরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ হামলার ঘটনাটি ঘটে। হামলায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুলসহ অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

অষ্টগ্রামে বিএনপির মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা, আহত ৩০

প্রথম নিউজ, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে উপজেলা বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলা সদরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে এ হামলার ঘটনাটি ঘটে। হামলায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুলসহ অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে সাত থেকে আটটি মোটর সাইকেল। বিএনপির অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ এ হামলা করেছে। এ নিয়ে পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রলীগ যুবলীগেরও ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। 

অন্যদিকে এ ঘটনায় যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুব আলম আক্তার, বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আলম ও ইটনা উপজেলা যুবদল নেতা রিয়েল মোল্লাকে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অষ্টগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তিতুমীর হোসেন সোহেলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল বিএনপির। 

এ উপলক্ষে শনিবার সকাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অষ্টগ্রামের জিরোপয়েন্ট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। হাজারো নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে দুপুরে সেখান থেকে তারা মিছিল নিয়ে সমাবেশের উদ্দেশ্যে অষ্টগ্রাম সদর বাজারে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে যেতে থাকেন। বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে মিছিলটি যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগও একটি মিছিল নিয়ে ওই এলাকায় আসে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ বিনা উসকানিতে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মুকুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য-সচিব জুবায়ের হাসান ইয়ামিন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনার, উপজেলা বিএনপির সদস্য সাইফুল হক শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাইফুল ইসলাম, রোকন মিয়া, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক জাবেদ, দেওঘর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মুনসুর, বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিনসহ অন্তত ৩০জন আহত হন।

এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম।এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে মিছিলে হামলা চালায়। পুলিশ উপস্থিত থেকে পেটানোর নির্দেশ দেয়। হামলায় আমাদের ৩০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের এমন হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘গত দশ বছর ধরে আমাকে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে কোনো মিছিল মিটিং করতে দেয়া হয়নি। নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে একের পর এক গায়েবি মামলা আর গ্রেপ্তার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। আজ পুলিশের নেতৃত্বে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। গণতান্ত্রিক দেশে এটা কাম্য নয়।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম জেমস বলেন, বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল জিরো পয়েন্টে। আমরা সেদিকে যাইনি। আমাদের ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা অষ্টগ্রাম বাজার এলাকায় মিছিল করছিলেন। সদ্য সাবেক সফল প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ আগামী চার তারিখে অষ্টগ্রামে আসবেন, এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল ছিল। কিন্তু বিএনপি'র লোকেরা লাঠিসোটা নিয়ে অষ্টগ্রাম বাজারে প্রবেশ করে। তখন বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের মিছিলে অতর্কিত হামলা করেন। এতে ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলার খবরটি যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের আরও নেতাকর্মী আসেন। পরে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। ছাত্রলীগ কোনো হামলা করেনি।

অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান বিপিএম বলেন, বিএনপির মিছিল থেকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উদ্দেশ্যে দু-তিনটি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। তখন পুলিশ মাঝখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে আনা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ সঠিক নয় বলেও দাবি করেন ওসি মুর্শেদ জামান।

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা অষ্টগ্রামে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য শনিবার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচিকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার অষ্টগ্রামে প্রস্তুতি সভা করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। দুপুরে প্রস্তুতি সভা শেষে বের হওয়ার পর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তিতুমীর হোসেন সোহেল (২৮) কে আটক করে পুলিশ।

পরে পুরনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে ওইদিনই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তার কর্মসূচিকে ঘিরে ভয়ের পরিবেশ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তিতুমীর হোসেন সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি করেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান।