৪ জনকে দায়ী করে না ফেরার দেশে মিতা

বিয়ের পর দুই মাস শ্বশুর-শাশুড়িসহ সবাইকে নিয়ে ভালোই ছিলেন মিতা দাস।

৪ জনকে দায়ী করে না ফেরার দেশে মিতা

প্রথম নিউজ, শরীয়তপুর: দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে পরিচয়ের পর মিতা দাসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যুগল দাসের। বিষয়টি উভয় পরিবারকে জানালে এক বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর দুই মাস শ্বশুর-শাশুড়িসহ সবাইকে নিয়ে ভালোই ছিলেন মিতা দাস। এরপর পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে স্বামী যুগলসহ শ্বশুরবাড়ির সবার নির্যাতন সইতে হয়েছে মিতা দাসকে। 

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে শ্বশুরবাড়ি থেকে মিতা দাসের ঝুলন্ত মরদেহ ও তার অন্তর্বাসের ভেতর থেকে মৃত্যুর জন্য চারজনকে দায়ী করে লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত মিতা দাস মাদারীপুর সদর থানার কুনিয়া গ্রামের মৃত দুলাল দাসের মেয়ে। যুগল দাস শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার ঋষিপাড়া গ্রামের নারায়ণ দাসের ছোট ছেলে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময় বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে সংসার পরিচালনা করতে হতো মিতা দাসকে। বিয়ের পর থেকেই মিতা দাসের স্বামী যুগল দাস, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সবাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। নির্যাতনের বিষয়টি মিতা তার ভাইসহ অন্যদের জানালে তারা এসে একাধিকবার মীমাংসা করে দেন। মিতার শ্বশুরবাড়ির প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন- মিতার সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ভালো সম্পর্ক ছিল না। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকতো।

মিতা দাসের বড় ভাই সাজন দাস  বলেন, বিয়ের পর থেকেই মিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নির্যাতন করত। আজ নির্যাতনের সময় হয়ত মিতা বুঝতে পেরেছিল তাকে মেরে ফেলা হবে, তাই হয়ত সে চিঠি লিখে গেছে। অথবা নির্যাতন সইতে না পেরে মিতা আত্মহত্যা করেছে। যদি সে আত্মহত্যাও করে থাকে, তাহলে মিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যার দায় থেকে এড়াতে পারে না। মনে হচ্ছে নির্যাতন করেই মিতাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় মামলা করব। আমি আমার বোন হত্যার বিচার চাই। যারা আমার বোনকে নির্যাতন করে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে তাদের ফাঁসি দাবি করছি। 

মিতা দাসের চাচা বলাই দাস বলেন, বিয়ের পর একাধিকবার মিতার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে সালিস হয়েছে বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে। সর্বশেষ গত শনিবার মিতার স্বামী যুগলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তখন তিনি আমার সঙ্গে প্রচুর খারাপ ব্যবহার করেছেন। আমাকে তখন বলেছিলেন- আপনাদের মেয়েকে আপনারা নিয়ে যান, নয়ত আমরা তাকে তালাক দেব। যুগল দাসের পরিবার আমার ভাতিজিকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি মিতা হত্যার বিচার চাই। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন কুমার পোদ্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিতা দাসের মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে রিপোর্ট পেলে তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

ডামুড্যা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরিফুল আলম বলেন, মিতা দাসের স্বামী যুগল দাস ও তার শ্বশুর নারায়ণ দাসকে এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে। মিতা দাসের অন্তর্বাসের ভেতর থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে তার মৃত্যুর জন্য যুগল দাস, নারায়ণ দাস, ননদ রিনা দাস ও শাশুড়ি গীতাকে দায়ী করা হয়েছে। মিতা দাসের মৃত্যুর বিচার চেয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।