২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্সি মালিক
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অভিনব কায়দায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্সি মালিক চার শতাধিক গ্রাহকের অন্তত ২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। গ
প্রথম নিউজ, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অভিনব কায়দায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্সি মালিক চার শতাধিক গ্রাহকের অন্তত ২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। গত চারদিন ধরে উপজেলার হোগলাকান্দি বোর্ড বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাটি বন্ধ রয়েছে এবং এজেন্সি মালিক মো. আলমগীর ও ব্যবস্থাপক রিটন মিয়া উভয়েই এখন লাপাত্তা। বিষয়টি এলাকায় চাউর হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে হোগলাকান্দি বোর্ড বাজারে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ ছাড়া হোসেনপুর থানায় এজেন্সি মালিক মো. আলমগীরের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বেশ কয়েকজন গ্রাহক মৌখিক অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত এজেন্সি মালিক মো. আলমগীর হোগলাকান্দি গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরু বেপারীর ছেলে।
প্রতারিত বেশ কয়েকজন গ্রাহক জানান, মো. আলমগীর বেশ কয়েক বছর ধরে বোর্ডের বাজার এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা খুলে সেটি পরিচালনা করে আসছিল। প্রতারণার ফাঁদ হিসেবে শাখাটির লেনদেনসহ গ্রাহক সেবা ছিল খুবই গ্রাহকবান্ধব। আলমগীরের এ কৌশলে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখাটি ক্রমেই সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে থাকে। ফলে ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য স্থানীয় অনেকেরই প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠে শাখাটি। এরপরই আসল খেলা শুরু করে আলমগীর। গ্রামের সরলমনা সাধারণ মানুষ এবং প্রবাসী স্বজনদের টার্গেট করে তাদের অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখায়।
গ্রাহকদের বোঝানো হয়, এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার হিসাবে টাকা রাখলে প্রতি লাখে লাভ আসে ছয়শত টাকা। অথচ এভাবে টাকা না রেখে অন্যভাবে টাকা রাখলে প্রতি মাসে লাখে এক হাজার টাকা লাভ পাওয়া যাবে। এতে অনেকেই প্রলোভনের ফাঁদে পড়েন। ২ লাখ, ৫ লাখ, ১০ লাখ, ২০ লাখ এমন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা করে গ্রাহকরা দিতে থাকেন আলমগীরের কাছে। বিপরীতে আলমগীর তার ব্যক্তিগত নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেক ধরিয়ে দেয় তাদের। চেকের বিপরীতে এভাবে টাকা জমা রেখে প্রতি লাখে এক হাজার টাকা করে লাভের অংশ গ্রাহকদের দিয়ে দেয়া হতো। এভাবে চার শতাধিক গ্রাহক অন্তত ২০ কোটি টাকা জমা দেন আলমগীরের কাছে। কিন্তু চার-পাঁচদিন আগে হঠাৎ করে হোগলাকান্দি বোর্ড বাজারের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ব্যবস্থাপক রিটন মিয়া ও এজেন্সি মালিক আলমগীর নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
গত রোববার গ্রাহকরা শাখাটিতে গিয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় পান। তখনও আলমগীরের প্রতারণার বিষয়টি তারা বুঝতে পারেননি। এরপর গত সোমবার ও মঙ্গলবার শাখাটি তালাবদ্ধ এবং এজেন্সি মালিক মো. আলমগীর ও ব্যবস্থাপক রিটন মিয়াকে না পেয়ে ও তাদের মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে গ্রাহকরা বুঝতে পারেন, তারা বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে মো. আলমগীরের কাছে টাকা জমাকারীরা শাখাটিতে ভিড় করতে থাকেন।
সরজমিন প্রতারিত হওয়া গ্রাহকদের সঙ্গে কথা হলে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তারা এজেন্সি মালিক আলমগীরের স্বাক্ষর করা চেক দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। তাদের মধ্যে হোগলাকান্দি গ্রামের মন্টু রবিদাসের ছেলে হৃদয় বাবু সাড়ে পাঁচ লাখ, হাজী আব্দুল লতিফের ছেলে মোক্তার উদ্দিন তিন লাখ, আব্দুল মোতালিবের ছেলে সাড়ে ১৫ লাখ, ফজলুর রহমান আট লাখ, আবুল কাসেমের ছেলে ১৪ লাখ, মোক্তার উদ্দিনের ছেলে রাসেল তিন লাখ, গৃহবধূ দিলোয়ারা খাতুন দুই লাখ, মিতু আক্তার দুই লাখ, মাইজ উদ্দিনের ছেলে মোজাম্মেল হক ৯ লাখ, ফজলুল হকের ছেলে মকবুল সাত লাখ, ইমান আলীর ছেলে ১০ লাখ, গড় মাছুয়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুল কদ্দুছ ১৪ লাখ টাকা মো. আলমগীরের কাছে জমা দিয়েছিলেন বলে জানান। তাদের মতো আরও অসংখ্য মানুষ টাকা জমা দিয়ে এখন মো. আলমগীরকে খুঁজছেন। তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কেউই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
জিনারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম রহিদ জানান, ছেলেটি ব্যবসায়ী পরিবারের হওয়ায় এলাকার মানুষের সহজেই আস্থা অর্জন করে। পরে সরলমনা মানুষের সঙ্গে সে এভাবে প্রতারণা করবে, এমনটি কেউ ভাবতে পারেনি।
ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এরিয়া ম্যানেজার রোকন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, গত সোমবার থেকে বোর্ড বাজারের এজেন্টের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না। তবে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেসব লেনদেন এজেন্ট আলমগীরের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে হয়েছে। এর সঙ্গে শাখার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। গ্রাহকরা শাখায় নিজেদের হিসাবের বিপরীতে যেসব টাকা রেখেছেন, সেগুলো নিরাপদ। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
হোসেনপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান টিটুু বলেন, বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আমাদেরকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়গুলো সমন্বয় করছি। পাশাপাশি আমরা অভিযুক্ত মো. আলমগীরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। সে যেন দেশের বাইরে পালাতে না পারে, সে লক্ষ্যে আমরা তৎপর রয়েছি। এ ছাড়া এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: