হাসপাতালে ৪১ দিনেও উন্নতি নেই খালেদা জিয়ার

গত রোববার রাত দেড়টার দিকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতালে ৪১ দিনেও উন্নতি নেই খালেদা জিয়ার

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দীর্ঘ ৪১ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। গত রোববার রাত দেড়টার দিকে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তবে সকালে শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমলে ফের তাকে কেবিনে আনা হয়। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তার চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হলেও এই মুহূর্তে তার মূল সমস্যা লিভার সিরোসিস। যার কারণে শারীরিক জটিলতা বাড়ছে। পেটে পানি চলে আসছে। পেটের পানিটা কোনো ভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া মাঝে-মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।

তার হাতে-পায়ে বাতের ব্যথাও বেড়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক যে অবস্থা তাতে কোনো ভাবেই বাসায় নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। বরং দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। লিভার সিরোসিসের কারণে প্রতিনিয়ত তার পেটে পানি চলে আসছে। সেটা প্রতিনিয়ত অপসারণ করতে হচ্ছে। গত রোববার রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এরপর দ্রুত তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। সকাল ১১টার দিকে অনেকটা ভালো বোধ করায় ফের তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতে ও পায়ে বাতের প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছেন। তিনি জানান, দীর্ঘ ৪০ দিন চিকিৎসার পর উনার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তাই এই মুহূর্তে তাকে বাসায় নেয়া কোনোভাবে সম্ভব হচ্ছে না। আরও কতোদিন হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না। 

বিএনপি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে মেডিকেল বোর্ড শুরু থেকেই বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। দিন দিন তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বর্তমানে ম্যাডামের শারীরিক যে পরিস্থিতি তাকে দ্রুত বিদেশে নিয়ে অ্যাডভান্স মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। মেডিকেল বোর্ড এখনো একই পরামর্শ দিচ্ছে। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বেশি যিনি সংগ্রাম-লড়াই করেছেন দেশের জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া এখনো গৃহবন্দি অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। মির্জা আলমগীর বলেন, চিকিৎসকরা বার বার বলছেন, তার জীবন রক্ষাতে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি- অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য।  এদিকে অসুস্থ শাশুড়ির দেখাশোনার জন্য গত ১৪ই সেপ্টেম্বর লন্ডন থেকে দেশে এসেছেন তার কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি। সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার পাশে থেকে সেবাশুশ্রূষা করছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫শে মার্চ তাকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাসভবনে অবস্থান করছেন। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদণ্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। 

২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। গত বছরের জুনে বুকে ব্যথা অনুভব করলে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। চলতি বছরের ১৩ই জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় হাসপাতালে পাঁচ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। সর্বশেষ গত ৯ই আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে হাসপাতালে রয়েছেন তিনি।