সিদ্ধিরগঞ্জে স্বামীর ঘুষের টাকায় স্ত্রীর আলিশান বাড়ি
বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে লোকজনের আনাগোনা
প্রথম নিউজ, নারায়ণগঞ্জ : স্বামী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। চাকুরীর বয়স প্রায় ৩৭ বছর। এ ৩৭ বছরে স্বামী কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সেই টাকায় সম্পদ করেছেন। কিন্তু সম্পদগুলো নিজের নামে ক্রয় করেননি স্বামী। ক্রয় করেছেন তার স্ত্রীর নামে। যার একটি বাড়ি ও একটি জমি সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং ভূমি পল্লি এলাকায়। যে ভূমি পল্লী আবাসিক এলাকায় সরকারের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা ভবন নির্মাণ করায় ঢাকার গুলশান অভিজাত এলাকার সাথে তুলনা করেন এ অঞ্চলের লোকজন। স্বামীর টাকায় নির্মিত স্ত্রীর ঐ বাড়িতে রহস্যজনক লোকজনের আনাগোনা লেগেইে থাকে। দামি গাড়ি নিয়ে আসেন অতিথিরা। অনেকে আবার রিক্সা, অটোরিক্সা ও সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহন যোগেও আসেন। নির্দিষ্ট সময়ের পর চলে যান।
সেই রহস্যজনক বাড়ি নিয়ে মানুষের অগ্রহের অন্ত নেই। জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকায় সরকারী প্রায় ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ওয়ান ইলেভেনের সময় গ্রেফতার হওয়া ভূমি কুতুব ওসমান গনিসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা তাদের আবাসনের জন্য। সিদ্ধিরগঞ্জের অন্যান্য জমির মূল্য কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা থেকে ৩৫ লাখ টাকা হলেও ভূমি পল্লীর ঐ জমি কাঠাপ্রতি বিক্রি করা হয় ৫০ লাখ টাকা থেকে ৮০ লাখ টাকায়। সাধারণের নাগালের বাইরে থাকা ঐ জমি ক্রয় করে সরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। যাদের একজন নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার এনায়েত নগর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হক।
তিনি এই ভূমি পল্লীতে ৬ কাঠা জমির উপর ৬ তলা একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। যার জমি ও ভবনসহ তৈরি করতে প্রায় ৮/১০ কোটি টাকা তিনি খরচ করেছেন। এছাড়াও ভূমি পল্লীর ৭ নং সড়কের দক্ষিণ পাশে
প্রধান ফটকের সাথেই রয়েছে ৬ কাঠার একটি খালি প্লট। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫/৬ থেকে কোটি টাকা। এছাড়াও তার গ্রামের বাড়িতে রয়েছে দুই তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি কিন্তু এ বাড়িও তার নামে না ক্রয় করে ক্রয় করেছেন তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার পাপিয়ার নামে। এছাড়াও তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার পাপিয়ার নামে আছে বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি কোটি টাকার এফডিআর রয়েছেন জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সূত্র মতে, ১৯৮৫ সালে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে চাকুরিতে যোগদান করেন মোঃ কামরুল হক।
সেই সময় তার সর্বসাকুল্যে বেতন ছিল এক হাজার পাঁচশত টাকা থেকে আড়াইহাজার টাকা। তিনি চাকরি কালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমি কর্মচারী ও কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় চর গোয়ালদি এলাকায়। সেখানেও তিনি বিলাসবহুল একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। কিন্তু সেখানে তিনি থাকেন না। থাকেন সিদ্ধিরগঞ্জের ৪ নং ওয়ার্ডস্থ সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমি পল্লীতে স্ত্রীর ৬ তলা বাড়িতে। এ বাড়িতে প্রায় সময় দামি গাড়ি নিয়ে লোকজন আসেন। অটো, হুন্ডাসহ অন্যান্য বাহনেও আসনে লোকজন। অনেকে আসনে রাতে, বন্ধের দিনগুলোতে। আগান্তুকরা জমির মিউটেশনসহ জমির অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ সারেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ কর্তাব্যক্তির সাথে। আলাপগুলো ব্যাটে-বলে মিলিয়ে হাঁসতে হাঁসতে চলে যেতে দেখেন ভূমি পল্লীর বাসিন্দারা।
এভাবে চলছে তিনি এ ভবনে উঠার পর থেকে, গত কয়েক বছর। মোঃ কামরুল হকের গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের চর গোয়ালদি এলাকায়। এ ভূমি কর্মকর্তার বাবা সাহাব উদ্দিনের এলাকায় টেইলার্সের দোকান ছিলো। সন্তানদের লেখা-পড়া করানো ও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো তার বাবাকে। কিন্তু মোঃ কামরুল হক চাকুরী পাওয়ার পর থেকে তাদের সংসারে আলাউদ্দিনের দৈত্যের মত সব কিছু ঘটতে থাকে।
এ বিষয়ে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করে এ বাড়ি ও সম্পদ করেছেন। তবে গ্রামের বাড়ির কত বিঘা বা কি পরিমাণ জমি বিক্রি করেছেন, সেই প্রশ্নে উত্তর তিনি দিতে পারেননি। স্ত্রীর নামে বাংকে ৫ কোটি টাকারও বেশী এফডিআর রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।