জাতীয় ঐক্য এগিয়ে নেয়ার আহ্বান ফখরুলের

জাতীয় ঐক্য এগিয়ে নেয়ার আহ্বান ফখরুলের
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছবি- বাবুল তালুকদার

প্রথম নিউজ, অনলাইন : ফ্যাসিস্ট সরকার পতনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিলো তাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐক্যকে সামনে নিয়ে আমরা যদি সবাই আমাদের মূল বিষয়গুলোকে সামনে আনতে পারি, সেগুলো নিয়ে যদি কাজ করি এবং আমাদের মধ্যে সেই ঐক্য যদি থাকে, তা নি:সন্দেহে আমরা সফল হবো। রোববার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র উদ্যোগে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারে ‘ফারাক্কা ব্যারেজ ও বাংলাদেশের সংকট: পদ্মা ব্যারেজ ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ নিয়ে একটি তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াদুদ ভুঁইয়া। ‘দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর আবশ্যকতা নিয়ে একটি তথ্য চিত্র উপস্থাপন করেন প্রকৌশলী শহিদুল ইমাম। অনুষ্ঠান শুরুতেই উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিমানের পাইলট তৌকির ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির মহাসচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল অব. আবু ওহার মো. হাফিজুল হক।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অনেকে আজকাল অনেক কথা বলছেন, সংস্কার হচ্ছে। সংস্কার তো আমরা অনেক আগেই থেকে উপলব্ধি করেছি। আমরা ২০১৬ সালে আমরা প্রথম ভিশন-২০৩০ দিয়েছি, যেখানে আমাদের সমস্ত পরিবর্তনের কথা, সংস্কারের কথা আমরা প্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি। আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন। ২০২২ সালে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ৩১ দফা দিয়েছেন। যে ৩১ দফাই আজকে কিন্তু সমস্ত সংস্কার বিষয়ক যে কমিটিগুলো হয়েছে, সেখানে সেবিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে অত্যন্ত সচেতন যে, জনগণের যেটা প্রয়োজন এবং কালের যুগের সঙ্গে সঙ্গে যে পরিবর্তনগুলো আনা দরকার, রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতনভাবেই আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি।

জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সব কিছুই নির্ভর করবে মানুষের উপরে। আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা তারও পূর্বে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করেছি, ’৬৯ এ আন্দোলন করেছি এবং সবশেষে দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করে একটা জায়গায় পৌঁছেছি যে, এই জুলাই-আগস্ট মাসে একটা ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরাতে সক্ষম হয়েছি। সুতরাং আমরা পারি, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি এবং আমার বিশ্বাস আগামীতেও আমরা পারব। আমি একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি এইটুকু বুঝি যে, আমার দেশের মানুষের পালস সেটা আমি বুঝি। আমার দেশের মানুষ উপরে উঠতে চায়, উন্নতি চায়। একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায় এবং সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কিন্তু সমস্ত বিষয়গুলোর সমাধানে পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয় পদ্মাসেতু বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কমিটমেন্ট আছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনেক আগেই কমিটমেন্ট এবং আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করি- এই সমস্ত অঞ্চলগুলোকে যেখানে জীবন-জীবিকার প্রশ্ন জড়িত আছে, মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটা কিছুক্ষণ আগে আইনুন নিশাত সাহেব তুলেছেন যে, দক্ষিণাঞ্চলের বহু অংশ চলে যাচ্ছে, ছেড়ে যাচ্ছে এসব এলাকায় মানুষের বসবাস উপযোগী থাকছে না। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, এটা শুধু পরবর্তী সরকার নয়, জনগণকেও এ বিষয়ে সজাগ থাকা উচিত।

ব্র্যাকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে আছে। শুধু মাত্র রাজনৈতিক কাঠামোর বিষয় নয়, আমাদের আগামীর রাজনীতির পথ চলার বৈশিষ্ট্য কী হবে, সেটাই এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুনির্দিষ্ট ও যোগ্য যে ভূমিকা, সেটা গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে রাজনৈতিক শাসনগুলো পরিচালিত হবে, সেটা জনমানুষের মধ্যে তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে দৃষ্টি ভঙ্গিগুলো তৈরি হচ্ছে- সেটাও দেখার বিষয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ, কেউ বলে ৩৭% মানুষ-জমি প্রকটভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা সকলেই বুঝি কি হয়েছে? আমরা কাছে আশ্চর্য লাগছে, আইনুন নিশাত ভাইয়ের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে যে ৩০ বছরের (গঙ্গা চুক্তি) হয়েছিলো, সেটি আগামী বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনারা কি কেউ আলোচনা শুনেছেন, এই চুক্তিকে আগামী দিন আমরা কী ধরনের দরকষাকষি করে আমাদের পক্ষে রাখার চেষ্টা করব- সেটার কারিগরি এবং অন্যান্য ধরনের আলোচনা আমি শুনতে পাইনা।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, আমি আপনাদের বলতে চাচ্ছি, গঙ্গা ব্যারেজটা না হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভবিষ্যত খুব খারাপ অবস্থায় যাবে। আপনারা নিজের দেশটাকে কতটুকু জানেন? জানেন না। সাতক্ষীরা-খুলনা-বাগেরহাট-বরগুনার দক্ষিণাংশে ইতিমধ্যে জনসংখ্যা গ্রোথ ইজ নেগেটিভ। মানুষ ওখান থেকে পালাচ্ছে? কারণ সেটা বসবাসযোগ্য নেই। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়টা যোগ করলে এখন থেকে ৩০/৪০ বছরের ওই অংশগুলো বসবাসযোগ্য থাকবে না। কাজেই এখন থেকে যদি চিন্তা করতে হয়, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিমাংশকে পানি দিতে হবে। ভারতে সঙ্গে চুক্তির ফলে ১৯৯৬ সাল থেকে আমরা যতটুকু পানি পাচ্ছি, তার কিছু অংশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা, তার থেকে ১৫ হাজার- আচ্ছা ১০ হাজার কিউসেক পানি যদি যশোর-খুলনায় দিতে পারি তাহলে ওই এলাকাটা রক্ষা পাবে। এটা কেনো হয়নি? এর একটাই উত্তর এর পেছনে রাজনৈতিক শক্তি ছিল না। এটা মূলত সিদ্ধান্তটা হবে রাজনৈতিক ভিত্তিতে।

পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র সভাপতি সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের সভাপতিত্বে সেমিনারে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান, সাবেক প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন, ‘পদ্মা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি’র জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর হোসেন খান জালাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।