৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নকশা মেনে হচ্ছে না কুষ্টিয়া ফোর লেনের কাজ 

কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহ এবং কুষ্টিয়া পাকশী-দাশুরিয়া মহাসড়ক এর উন্নীতকরণে ৩শ’ ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া শহরের বটতৈল থেকে মজমপুর, মজমপুর থেকে ত্রিমোহনী ৪ লেনের কাজ চলছে

৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নকশা মেনে হচ্ছে না কুষ্টিয়া ফোর লেনের কাজ 

প্রথম নিউজ, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহ এবং কুষ্টিয়া পাকশী-দাশুরিয়া মহাসড়ক এর উন্নীতকরণে ৩শ’ ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়া শহরের বটতৈল থেকে মজমপুর, মজমপুর থেকে ত্রিমোহনী ৪ লেনের কাজ চলছে। এই সড়কে যতটুকু কাজ দৃশ্যমান হয়েছে দেখা গিয়েছে অনেক জায়গায় মানা হয়নি মহাসড়ক আইন। দেখা গেছে শহরের বিভিন্ন জায়গার তেলের পাম্প, শিল্প প্রতিষ্ঠানের গেট, হোটেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাচীর, বিল্ডিং বাড়ি ও দোকানপাট রক্ষা করতে গিয়ে মহাসড়ক কোথাও কোথাও বেঁকে গিয়েছে ও সরু হয়ে গিয়েছে।

অথচ মহাসড়ক নির্মাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ নকশা প্রণয়ন। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সড়কের নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে আদর্শ মানদণ্ড মেনে চলা হয়। বাংলাদেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরও ‘জিওমেট্রিক ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ডস’ শিরোনামে নিজস্ব মানদণ্ড তৈরি করেছে। উন্নত দেশগুলোর নকশায় অনুসৃত বিষয়ের প্রায় সবই এ মানদণ্ডে রাখা হয়েছে। তবে এ মানদণ্ডের অস্তিত্ব শুধু কাগজে-কলমেই। অভিযোগ রয়েছে, কুষ্টিয়ায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে সড়কের নকশা প্রণয়ন করতে গিয়ে এ মানদণ্ড মানছে না সওজ নিজেই।

"মহাসড়ক আইন-২০২১" এর ৯এর (১০) ,(১১),(১২) অনুসারে ধারা ৯(১০), মহাসড়কের নির্ধারিত সীমানার পার্শ্বে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে উক্ত অবকাঠামোর বেদির উচ্চতাসীমা (plinth level) কোনো প্রকারে মহাসড়কের উপরিতল হইতে অধিকতর উচ্চতায় করা যাইবে না, (১১) মহাসড়কের সংরক্ষণ রেখার মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাইবে না, (১২) সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত, মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ, হাট-বাজার বসানো বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মহাসড়কের কোনো অংশ ব্যবহার করা যাইবে না। এসব ধারা  লঙ্ঘন করিলে অপরাধ বলে গণ্য হবে এবং শাস্তিসহ বিভিন্ন অথ দন্ড রয়েছে। অথচ কুষ্টিয়াতে এখন পর্যন্ত সড়ক বিভাগ সাইনবোর্ডে সীমাবদ্ধ।এ আইনের প্রয়োগ চোখে পড়েনি। আর এই সুযোগে কিছু দখলবাজ মহসড়কের গা ঘেঁষে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সড়ক সরু হয়ে যাচ্ছে, বেঁকে যাচ্ছে ড্রেন।এতে করে সড়কে যেমন যানযট সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি দুর্ঘটনার প্রবনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।সচেতন মহলের দাবি আইনের প্রয়োগ না থাকলে আইন মেনে চলানো কঠিন হয়ে যাবে।

সচেতন মহল থেকে আরো জানা যায়, সড়ক-মহাসড়কের নকশা প্রণয়নের সময় বেশকিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সড়কের গতিপথ, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ট্রাফিক, যানবাহনের গতি, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সড়কের গতিপথ। সওজের মানদণ্ড অনুযায়ী, নতুন সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সেটিকে যতটা সম্ভব সোজা রাখতে হবে। পুরনো সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এর তেমন কোনো প্রতিফলন দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় চোখে পড়ে না। এসবের জন্য দায়ী করা হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ নকশাকে। 

সড়কের নকশা করতে হয় পথচারী, গাড়িসহ সবার জন্য। এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সর্বনিম্ন মাত্রায় সীমিত রাখার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হয়। চালক বা পথচারীসহ সড়কে সবাই যাতে দূর থেকেই সব যানবাহন চলাচল দেখতে পায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। চৌরাস্তার নকশা এমনভাবে করতে হয়, যাতে গাড়ি স্বাভাবিক গতিতেই তা পার হতে পারে। সওজের নকশার মানদণ্ডেও এসব বিষয় রাখা হয়েছে। যদিও কুষ্টিয়ার সড়ক-মহাসড়কে এর তেমন কোনো প্রতিফলন নেই।

সরজমিনে দেখা যায় , মজমপুর জাহাঙ্গীর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টর পাশে সড়ক সরু হয়ে গেছে।ড্রেন সোজাসুজি যেতে যেতে জাহাঙ্গীর হোটেলে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে বেঁকে যাচ্ছে। এছাড়াও কুষ্টিয়া শহরের বেশ কিছু জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, কুষ্টিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কুষ্টিয়া-পাবনা, মেহেরপুর, দৌলতপুর, ভেড়ামারা বাস যাত্রী ছাউনি ও কাউন্টার সড়কের সাথে। অপর দিকে বসে সন্ধাকালীন বাজার। এমনকি সড়কের ড্রেন দখল করে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও কুষ্টিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মজমপুরে মহাসড়কের উপর বসানো হচ্ছে সন্ধ্যাকালীন হাট। সেখানে মহাসড়কে মোটরসাইকেল পার্ক করে কেনাকাটা করছেন শহরবাসী। আবার সেই হাট পৌর কর্তৃপক্ষ ইজারা দিয়েছেন। এবিষয়ে অনেকটাই উদাসীন সড়ক জনপদ বিভাগ।  এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে যে যেমন পারছে ক্ষমতা দেখাচ্ছে। কেউ তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরাতে নারাজ। 

কুষ্টিয়া পৌরসচিব কামাল উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এই হাট এখানে বসে আসছিল।এবার মাসিক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাটের ইজারা দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানতে মেয়র মহাদয়ের সাথে কথা বলেন। তবে সড়কের ওপর হাটের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।
এব্যাপারে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগ এর উপ বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী লিটন আহমেদ খান এর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি জানান, সড়কের উপর কিভাবে পৌরসভা ইজারা দিল সেইটা পৌরসভার কাছে থেকে জানুন। এই সড়কের ওপর অস্থায়ী কিছু বসলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ট্রাফিক ও রোডস এন্ড হাইওয়ে তবে মজমপুর গেটে সড়কের কিছু জায়গার অবৈধ স্থাপনা রয়েছে লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্টেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।