শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে বিদায় করতে হবে: ড. মোশাররফ
আজ বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে বর্তমান সরকারকে বিদায় করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আজ বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। সকালে বিএনপির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পন করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যেভাবে জীবন দিয়ে আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন সেই স্বাধীনতার যে মূল মন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই মুক্তিযোদ্ধাদের এই বুদ্ধিজীবীদের সেই স্বপ্ন আমাদেরকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। বিদায়ের জন্য আমরা সারাদেশের মানুষ প্রস্তুত।
তিনি বলেন, আমরা শুরুতে ১০ দফা প্রনয়ন করেছি। আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সকলের অংশ গ্রহনে নির্বাচনে জনগনের যে সরকার হবে সেই সরকারে যদি জনগণ বিএনপিকে, বেগম খালেদা জিয়াকে, তারেক রহমানকে নির্বাচিত করে তাহলে দেশ আমরা কিভাবে মেরামত করব তার রুপরেখা ইনশাল্লাহ অচিরেই জনগণ ও জাতির সামনে উপস্থাপন করব। সেই রুপরেখা নিয়ে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা নিয়ে আসুন আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই। যত ষড়যন্ত্র থাকুক এই সরকারের আসলে সময় শেষ। আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন। তাই সাহস করে সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে মুক্তিযোদ্ধাদের সেই সাহস, এই বুদ্ধিজীবীদের সেই সাহস ধারণ করে আমরা দেশকে মুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করি- আজকের বুদ্ধিজীবী দিবসে এটাই হোক আমাদের শপথ। গত ১৯৭২-৭৫ সাল ও গত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে বিএনপির এই প্রবীন নেতা বলেন, আমরা ১০ বিভাগীয় সমাবেশে দেখেছি, জনগণ পরিস্কারভাবে ব্যক্ত করেছে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, অর্থনীতি ধবংস করেছে, বিচার বিভাগকে ধবংস করেছে, সমাজকে কুলষিত করেছে তারা এই রাষ্ট্রকে মেরামত করতে পারবে না। জনগণ এখন পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তন করা করছে? একটু ইতিহাস দেখেন বাকশালের হাত থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আবার এরশাদের সময়ে এদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করে স্বৈরতন্ত্র হয়েছিল। আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী, নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন সংগ্রামের মাধ্যমে এদেশে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় পূণঃগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকে বিএনপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক সকল শক্তির দায়িত্ব এই সরকারের হাত থেকে এদেশকে রক্ষা করা এবং জনগন যে পরিবর্তন চায় সেই পরিবর্তনের সূচনা করা। এই পরিবর্তন না করতে পারলে বাংলাদেশের কোন ক্ষেত্রে, যে ধবংসপ্রাপ্ত সেটা মেরামত করা সম্ভব নয়।
সভাপতির বক্তব্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা গর্বিত, আমাদের দেশে এমন মানুষ ছিলেন যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আমরা লজ্জিত যারা জীবন দিয়েছে তাদের জীবনের মূল্য আমরা পরিশোধ করতে পারিনি। তারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছিলেন। সেই গণতন্ত্রকে বারবার হত্যা করা হয়েছে। যে দেশের জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার থাকে না। সেখানে গণতন্ত্র আছে বলা যাবে না। তিনি আরো বলেন, আজকে দেশের মানুষ শান্তিতেও নাই, স্বস্তি তেও নাই। সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। শোষণ-বঞ্চনা পর্যায়ক্রমে বেড়ে চলেছে। সরকারের সুযোগ নিয়ে, শুধু কোভিডএর মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার নতুন কোটিপতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। তাহলে এ দেশের সাম্য কোথায়?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ১১ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা ছিল। সেদিন আত্মসমর্পণের করা হলে আজকের এই দিনে ঘটনা ঘটত না। আজকের বাংলাদেশের ৫১ বছর পর মনে হয় এ ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সরকার তাদের মত মরিয়া হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষের কেড়ে নিতে কেউ পারে না পারবে না। বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্যংস করে দিয়েছে। আজকের এই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে। এক দলীয় শাসন কেউ মেনে নেয়নি। এটা মেনে নেয় না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, যে অধিকার নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু সেই অধিকার আবার হরণ করা হয়েছে। দেশের বর্তমান বুদ্ধিজীবীরা তা নিয়ে কথা বলেন না। তারা পদ-পদবি নিয়ে বসে গেছে। আর বই লিখে না। বর্তমান সরকার তাদের পদ- পদবি দিয়ে দূরে সরে রেখেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এবং ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ ও সাংবাদিক এম এ আজিজ ।