যারা কর দেয় না টাকা পাচার করে তারা অনেক বেশি শক্তিশালী

এই প্রক্রিয়ায় একজন মানুষ অনেক আয় করে কম কর দিচ্ছে।  কম আয় করে বেশি টাকা কর দিচ্ছেন।

যারা কর দেয় না টাকা পাচার করে তারা অনেক বেশি শক্তিশালী

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, কালো টাকা সাদা করা একটি বিকৃত প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় একজন মানুষ অনেক আয় করে কম কর দিচ্ছে।  কম আয় করে বেশি টাকা কর দিচ্ছেন। কর প্রদানের ক্ষেত্রে এখানে ন্যায্যতা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে যারা কর দেয় না, যারা টাকা পাচার করে তারা অনেক বেশি শক্তিশালী। এনবিআরকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে হবে। সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে। রোববার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘ডিজিটালাইজেশন অব দ্য বাংলাদেশ ট্যাক্স সিস্টেম’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে ডিজিটালাইজেশন, অটোমেশন ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ব্যবহারের বিকল্প নেই। কর আহরণের ক্ষেত্রে হয়রানি বা দুর্নীতি কমাতে ডিজিটালাইজেশন করা হলে কর আদায়ের জায়গাটি আরও স্বচ্ছ হবে।

এর পাশাপাশি এ পদ্ধতিতে কর দাতাদের দেয়া তথ্য-উপাত্তের গোপনীয়তা রক্ষা হবে। যারা কর দেয় না, যারা টাকা পাচার করে তারা অনেক বেশি শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দৃশ্যমান না হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অসহায় হয়ে পড়বে। 

এনবিআরকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে হবে। সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে হবে। তিনি বলেন, যেসব দেশে সরকারি ব্যয় গুণগত ও স্বচ্ছ হয়, সেখানে কর দেয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। মানুষ যখন স্বচ্ছভাবে বুঝতে পারে তার করের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে তখন সে কর দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে কর আহরণের ক্ষেত্রে শুধু ডিজিটালাইজেশন না করে, করের টাকা ব্যয়ের জায়গাটিও পরিষ্কার থাকা উচিত। বাজেটে করের ক্ষেত্রে হয় পুরোনো পদ্ধতির সমন্বয় ঘটে, না হলে নতুন পদ্ধতি নেয়া হয়। তবে আগামী বাজেটে কর প্রদানের ক্ষেত্রে গাণিতিক স্বচ্ছতার পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা আনা দরকার বলে মনে করেন সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।  সিপিডি জানায়, শতভাগ ই-ফাইলিং নিশ্চিত করতে পারলে কর আহরণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পাঁচ শতাংশ বাড়বে। এর ফলে, প্রথম বছরেই কর আহরণ ৫.৮ বিলিয়ন ডলার এবং চতুর্থ বছরে ৭.৮ বিলিয়ন ডলার বাড়বে, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৯০ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার সমান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় আয়োজিত ডায়ালগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে না পারায় অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক একটা পরনির্ভরশীলতা গড়ে উঠছে। এর ফলে বর্তমানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পুরোটাই ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকারের পরিচালনা ও অনুন্নয়ন ব্যয় মেটাতে রাজস্ব আহরণের পুরোটাই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব আহরণের কোনো অর্থ উন্নয়নে ব্যয় করা যাচ্ছে না। 

 কর আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়ানো, দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শতভাগ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে অন্যান্য পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও ২০৩০ সালের মধ্যে কর আহরণ ১৬৭ বিলিয়ন ডলারে ওঠবে। আর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে না পারলে ওই সময়ে কর আহরণ হবে সর্বোচ্চ ৯০ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার কর আহরণ প্রায় ৮৬ শতাংশ বাড়াতে সহায়তা করবে। ডায়ালগের শুরুতেই সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের চলমান উন্নয়ন ধরে রাখতে বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিনিয়োগের চাহিদা বাড়লেও এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন বা কর আহরণ বাড়ছে না। এরই মধ্যে বহিঃস্থ খাত থেকে কিছু চাপ আসছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে আসার পর বিদেশি ঋণে সুদের হার বাড়বে। 

তাছাড়া বিদ্যমান ঋণের পরিশোধ ও সুদ বাবদ বড় একটা অর্থ চলে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের কোনো বিকল্প নেই। কর আহরণে সমস্যাগুলো খুবই পুরাতন এবং এগুলো ইতিমধ্যেই চিহ্নিত আছে দাবি করে তিনি বলেন, কর ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করতে এনবিআরকে শক্তিশালী করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ‘মানুষ কর জালে আসতে একটা ভয়ের মধ্যে থাকে। কর আহরণ ব্যবস্থাকে সহজ করে করদাতাদের এই ভয় দূর করতে হবে, বলেন ড. ফাহমিদা খাতুন।  অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বক্তব্য রাখেন।