মানুষ মারা যাচ্ছে, এখন কেন ৬৯ আবার জাগে না প্রশ্ন মান্নান
তিনি আরো বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়নি, সরকারের পদত্যাগ চায়নি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ চেয়েছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ১৯৬৯ আসাদের মৃত্যুতে লাখো মানুষ জড় হয়েছিলো। এখনও তো মানুষ মারা যাচ্ছে, এখন কেন ৬৯ আবার জাগে না? সেই সময় থেকে এখন রাজনৈতিক কর্মী অনেক বেশি তারপরও কেন অভ্যুত্থান হচ্ছে না।
তোফায়েল আহামেদকে উদ্দেশ্য করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে মানুষটা সকল অভ্যুত্থানের নায়ক ছিলেন তিনি আজ দৃশ্যমান না। তিনি আজ কি করছেন তা আমরা জানি না। তারমানে ইতিহাসগুলো আমরা গিলে খাচ্ছি। সেই ইতিহাস গুলো আমরা তৈরি করার চেষ্টা করছি যে ইতিহাস গুলো ছিলোই না। আমরা যত মিথ্যা মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করার চেষ্টা করছি যাতে জাতি বিভ্রান্ত হচ্ছে।
আজ রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক সিলেটের শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির তুলে ধরে এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আসাদ পরিষদের উদ্যোগে শহীদ আসাদের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।
সিলেটে শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখেও ভাইস চ্যান্সেলরের ভুমিকার কঠোর সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশন ধর্মঘট করছে। তারা যে লড়া্ই করছে কিসের জন্য? তারা এখনি বড় কিছু চায়নি। তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়নি, সরকারের পদত্যাগ চায়নি, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ চায়।ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করবেন না কেনো? উনি বলছেন, আমি পদত্যাগ করতে পারি যদি সরকার বলে। ভাবতে পারেন! কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্ষমতা নাই সরকারের অনুমতি ব্যাতি রেখে এমনকি পদত্যাগ করতে। ওইখানে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তার অসাদাচরণের কারণে, তার দুর্নীতির কারণে তাকে পথের মধ্যে, রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখেন ২৪ ঘন্টা, তারপরেও তিনি বলতে পারেন না আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকতে পারবো না। এতোই দাসের দাস।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শিক্ষাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে? আমাদের এখানে তিনটা থার্ড ডিভিশন, তিনটা থার্ড ক্লাস পাবার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি পাচ্ছেন, ইউনিভার্সিটির শিক্ষক হচ্ছেন। এই সচিবালয়ে ঢুকে দেখেন সচিবালয়ে সচিব আছেন যিনি তিনটা থার্ডক্লাস পেয়েছেন। মেধার কী কোনো বিকল্প আছে? যার যেখানে যোগ্যতা তিনি সেখানে যাবেন তবেই তো দেশ বলেল, সমাজ বলেন রাষ্ট্র বলেন সেটা গড়ে উঠবে।না হলে তো হবে না। আর আমাদের এনি অসাধারণ যোগ্যতা সম্পন্ন এক‘শ মানুষটা খুঁজে নেন কেবল তাকেই ভোট দিতে পারেন- এই দুইটো লোক সব চাইতে অযোগ্য, এই দুইটা লোক সবচাইতে দুর্নীতিবাজ, এই দুইটা সবচাইতে দালালীতে এক্সপার্ট তাকে নিয়ে মন্ত্রী বানিয়ে দিতে পারবেন। মন্ত্রীগুলোর চেহারা দেখছেন না। পুরো দেশকে এইভাবে নৈতিকভাবে ধবংস করে দিয়েছে তারা। প্রশাসনের কোনো যোগ্যতা নাই, তাদের কোনো নৈতিকতা নাই, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট নাই, তাদের কোনো কাজ করবার ক্ষমতা নাই। তারা দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন কি রকম করে?
এই অবস্থা থেকে পরিবর্তন আসবে উল্লেখ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আজ হোক, কাল হোক সে তো যাবেই। যাবার পরে কে আসবে? মানুষ তো জানতে চাইতেই পারে। ওই ছাত্র-ছাত্রীরা অনশন করছে কিংবা অনশন করেছে কোটা সংস্কারের জন্য, যারা এখন পর্যন্ত নিরাপদ সড়কের আন্দোলন করে, যারা ৩২ পুলিশের চাকুরির জন্য আন্দোলন করে…। একেবারে তাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে হবে আমরা যদি ক্ষমতায় যাই তাহলে এসব করব। আপনারা বলেছেন কি আপনারা কি করবেন?”
দুই বছরের করোনায় সাড়ে তিন কোটি লোক দরিদ্র হয়েছে। এই দরিদ্র হ্রাসের জন্য আপনারা কি করবেন? আমি নিজের কথা বলি। আমি যদি ক্ষমতায় যাই ৬ কোটি মানুষকে একদম নিচে থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা করে প্রতি মাসে দেবো। ভয় পেলে গেলেন নাকী? ৬ কোটি মানুষকে এক হাজার টাকা করে দিলে ৬ হাজার কোটি টাকা, বছরে লাগবে ৭২ হাজার কোটি টাকা। নাই আমার। বছরে সরকারি হিসেবে ব্যাংক এবং ফাইনেন্সিয়াল ইন্সটিটিউশনের মাধ্যমে যে টাকাটা বিদেশ চলে যায় সেটা ৭০ হাজার কোটি টাকার কম নয়। আমি দরিদ্র জনগোষ্ঠি শিক্ষা, চিকিৎসা বিনা পয়সায় দেবো। রাষ্ট্র ও সরকারের টপ পাইয়োরিটি হতে হবে জনগণের কল্যাণ। আপনাদের এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় যাবে বলে আশা করে তারা বলুক জনকল্যাণে এগুলো আমরা করবো।
আসাদ পরিষদের আহবায়ক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, সাবেক ছাত্র নেতা মনিরুজ্জামান প্রমূখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: