প্রথম নিউজ, ডেস্ক : শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট কর্নেল গোদাবায়া রাজাপাক্ষে কেন সরছেন না বা এতো কিছুর পর তার এতো লজ্জাহীনতা কেন? এই পরিবারতান্ত্রিকতার প্রতিষ্ঠাতা, দুর্নীতিবাজ একসময় সেনাবাহিনীর কর্নেল ছিল। সে দেশের সেনাবাহিনী তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী দমন করে নিজেদের শেঠ বাহাদুর ভাবতে শুরু করে। শ্রীলংকায় যদিও কখনো সামরিক শাসন আসেনি, কিন্তু ওদের সেনাবাহিনীর মধ্যে হামবড়া ভাব চলে আসে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সামরিকায়ন তাদের মাথায় চড়ে বসে। হলুদিয়া পাখিদের কাছ থেকে উচ্চহারে সুদ সংবলিত ঋন নিয়ে কথিত সব প্রকল্প করে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেয়ার ব্রাইট আইডিয়া তাদের পাগল করে তোলে। আর সমর সজ্জা বাড়াতে হলে(চামে বেহিসাবি কমিশন কামাতে হলে) তো হলুদিয়াদের বিকল্প এখনো পৃথিবীতে গড়ে ওঠেনি। এখন তাহলে কি করা যায়? তোল উগ্র জাতীয়তাবাদের ধামাকা। পাক্ষে পরিবার সেই ধামাকার সামনের কাতারে থাকা স্টুজেস। সম্প্রতি যে গোল পাকিয়েছে তাতে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী তাদের পেয়ারা সামরিকায়নের মধ্যমনি গোটাবায়া এন্ড গংকে নিয়ে কি করবে দিশা পাচ্ছে না। তবে ওই গংকে যেতেই হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সামরিকায়নের ভুতকেও তাড়াতে হবে।
এদিকে পৃথিবীর যেসব স্বৈরশাসক, কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী কথিত প্রেসিডেন্ট রয়েছে তাদের সবাই কিন্তু রুশিয়া ও হলুদিয়া পাখিদের প্রাণের পাত্র। কেন? একটা করে ছলনার নির্বাচন করো। একটা নির্দিষ্ট লৌহমানবকে ক্ষমতায় আনো। একটা সরকারকেই শুধু দেশ চালাতে দেও। তাহলেই স্থিতিশীলতা! তাহলেই ব্যবসা, প্রকল্প, সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি! শুধু বলে দিলেই হলো-সাম্রাজ্যবাদ বিরোধি প্রকল্প চলছে! ডাউন উইথ আম্রিকা!ব্যস। তারপর লাখ লাখ মানুষকে মেরে কেটে বের করে দেও দেশ থেকে। ওরা তো সেই যাবে আম্রিকা বা ইউরোপে। ক্ষতি কি? ওদের বোঝা বাড়লো, তাই না! কথিত সাম্যবাদ,সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার নামে গত কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে এসব লৌহমানব সৃষ্টি ও জোর করে টিকিয়ে রাখার প্রজেক্ট। ভেনিজুয়েলার মাদুরো, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন, বেলারুশের লুকাশেংকো,সিরিয়ার আসাদ, নিকারাগুয়ার ওর্তেগা,মায়ানমারের অং হ্লা-সব তো একই সূত্রের! সবগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে, সমর্থন দিচ্ছে কে বা কারা? রুশিয়া ও হলুদিয়া পাখি! কথিত পশ্চিম বিরোধিতার জিগিড় তুলে যতোসব বজ্জাত স্বৈরশাসকদের মানবাধিকার বিরোধী কর্মকান্ডকে জিইয়ে রেখেছে ওই দুই পরাশক্তি।
মনে আছে, বেলারুশে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এলো নিশিরাত টাইপ নির্বাচনের প্রতিবাদে? রুশিয়ার গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা এলো পরিচয় লুকিয়ে, লুকাশেংকোর বাহিনী কঠোর হাতে সব প্রতিবাদ গুড়িয়ে দিল। ব্যস। প্রক্সি কার্য়কর।পশ্চিমা ঠেকাও সফল। কিন্তু গনতন্ত্র, জনগনের অধিকার মাঝখান থেকে হাওয়া। সব বজ্জাত নিবর্তনবাদীদের কেন দুই পরাশক্তি সমর্থন দিচ্ছে ও দিয়ে আসছে তা কোন লুকাছাপা করার বিষয় নয় মোটেও। মাদুরোর ম্যাজিক নির্বাচনের প্রতিবাদের মানুষ রাস্তায় নেমে এলে ফুতিন একেবারে স্ট্র্যাটেজিক বোমারু বিমান পাঠিয়ে দিল ভেনিজুয়েলায়। খেল খতম।
সব জায়গায় তাদের কৌশল এক। এটা মনে রাখতে হবে সবার। গনতন্ত্র চাইতে হলে এই কুট চক্র ও তাদের ফাজলামিকে শুধু পশ্চিমা বিরোধিতার জিগিড়ে ভাসিয়ে দিলে চলবে না।
মায়ানমারের কথাই ধরুন। যখনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের কোন কথা ওঠে বা বাংলাদেশের প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘে শোরগোল ওটে তখনি রুশিয়া ও হলুদিয়া পাখি এক জোট হয়ে ভেটো দেয়। কেন? কেন তারা চরম মানবাধিকার বিরোধি সামরিক স্বৈরশাসক চায়?
এই প্রশ্ন যদি আপনার মনে না জাগে তাহলে দয়া করে গনতন্ত্র চাইবেন না। মায়া কান্না কাদবেন না। বেলারুশ, ভেনিজুয়েলার মতো গোয়েন্দা,পুলিশ,মিলিটারির বাড়ি খান ও ‘ সুখে’ থাকেন বা শ্রীলংকার মতো উন্নয়নের জোয়ারে ভাসেন...
আবু রূশদ: লেখক, সাংবাদিক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, সম্পাদক: ডিফেন্স জার্নাল (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
news.google.com
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews
https://youtube.com/prothom