ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রথম নিউজ, অনলাইন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ঢাকায় ও নোয়াখালীর নিজ গ্রামে কয়েকদফা জানাযার পর পারিবারিক কবরাস্থানে বাবা-মায়ের পাশে মওদুদ আহমদকে দাফন করা হয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিএনপির ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সাবেক এমপি ও অষ্টম জাতীয় সংসদে তিনি আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২৪ মে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলার কম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমেদ চতুর্থ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাশ করে বৃটেনের লন্ডনস্থ লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-এ্যাট-ল› ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশুনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন।
তিনি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলনে। দেশে ফিরে হাইকোর্টে ওকালতির একপর্যায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন আইনি লড়াইয়ে।
এর আগে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশি নির্যাতনের পর মওদুদ আহমদের ঠাঁই হয়েছিল কারাগারে। ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদের আপ্যায়ন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অ্যাডভোকেট ফরমান উল্লাহ খান প্রতিষ্ঠিত খেলাফত রব্বানীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন তিনি।
শেখ মুজিবুরের পক্ষে আইনি লড়াই করতে খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসিকে বাংলাদেশে আনতে রেখেছিলেন ভূমিকা।
১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে শেখ মুজিবুরের সঙ্গে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠকের ভূমিকা ছাড়াও ব্যারিস্টার মওদুদকে পোস্টমাস্টার জেনারেল নিয়োগ করে মুজিবনগর সরকার। স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর দিকেও তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে।
পেশাজীবী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে নানা ভূমিকায় নিজেকে রেখেছিলেন রাজনীতির কক্ষপথেই। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি গঠনে পালন করেন মুখ্য ভূমিকা। কারাভোগ করেছেন পাকিস্তান আমল, মুজিব, এরশাদ, ওয়ান ইলেভেন ও মহাজোট সরকারের আমলে।
১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম এমপি নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয় এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫-এর নির্বাচনে মওদুদ আহমেদ আবারও এমপি নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬-এ তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমেদ আবার এমপি নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালেও তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। পাঁচবার নোয়াখালী জেলার কম্পানিগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন মওদুদ আহমেদ। মওদুদ আহমদ পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের জামাতা।